জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৩.৩৫ শতাংশ

পুনরুদ্ধারের ইঙ্গিত সেবা খাতে ধীরগতি

বাংলাদেশের অর্থনীতি ধীরে হলেও পুনরুদ্ধারের পথে, শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি সামগ্রিক অর্থনীতিকে টানছে, তবে কৃষি ও সেবা খাতের দুর্বলতা ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধির জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে থাকছে।

বিশেষ সংবাদদাতা
Printed Edition

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত সর্বশেষ প্রাক্কলন অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের চতুর্থ প্রান্তিক (এপ্রিল-জুন ২০২৫) সময়ে দেশের স্থূল দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ। আগের বছরের একই সময়ের (২ দশমিক ১৪ শতাংশ) তুলনায় এটি সামান্য বৃদ্ধি নির্দেশ করছে। বিবিএস জানায়, পুরো অর্থবছর শেষে জিডিপির গড় প্রবৃদ্ধি দাঁড়াবে ৩ দশমিক ৬৯ শতাংশ, যা বিগত বছরের ৪ দশমিক ২৭ শতাংশের চেয়ে কিছুটা কম হলেও শিল্পখাতের পুনরুদ্ধার অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

সার্বিকভাবে বিবিএসের সাম্প্রতিক প্রাক্কলন দেখাচ্ছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি ধীরে হলেও পুনরুদ্ধারের পথে, শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি সামগ্রিক অর্থনীতিকে টানছে, তবে কৃষি ও সেবা খাতের দুর্বলতা ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধির জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে থাকছে।

শিল্প খাত টানছে অর্থনীতিকে : প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের চতুর্থ ত্রৈমাসিকে শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ১০ শতাংশ, যা আগের বছরের ১ দশমিক ০৮ শতাংশের তুলনায় প্রায় চার গুণ বেশি। এর মধ্যে উৎপাদন খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ দশমিক ৬৪ শতাংশ, নির্মাণ খাতে ৩ দশমিক ২২ শতাংশ এবং খনিজ ও খননে ৩ দশমিক ১৩ শতাংশ। বিবিএসের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, তৈরী পোশাক, নির্মাণ ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে উৎপাদন পুনরুদ্ধার এই প্রবৃদ্ধির মূল চালিকা শক্তি।

অন্য দিকে, কৃষি, বন ও মৎস্য খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ০১ শতাংশ, যা আগের বছরের একই সময়ের (৪ দশমিক ১১ শতাংশ) তুলনায় কিছুটা কম। ফসল উৎপাদন ও পশুপালনে স্থবিরতা এবং জলবায়ুজনিত চ্যালেঞ্জ এ খাতে প্রভাব ফেলেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, মৌসুমি বন্যা, ফসল ক্ষতি ও কৃষিঋণ ঘাটতির কারণে এ খাতে প্রবৃদ্ধি সীমিত থেকেছে, তবে মৎস্য ও ফলচাষ উপখাত কিছুটা ভারসাম্য এনেছে।

সেবা খাতে মন্থর গতি : এ সময়ে সেবা খাতে প্রবৃদ্ধি এসেছে মাত্র ২ দশমিক ৯৬ শতাংশ, যা আগের বছরের ৩ দশমিক ৬১ শতাংশের নিচে। খাতভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়- খুচরা ও পাইকারি বাণিজ্যে প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৮৬ শতাংশ, পরিবহন, আবাসন ও খাদ্য পরিষেবায় ৪ দশমিক ৪৪ শতাংশ, আর্থিক ও বীমা খাতে প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক, -১ দশমিক ২০ শতাংশ এবং সরকারি প্রশাসন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় প্রবৃদ্ধি মাত্র- ০ দশমিক ৩৮ শতাংশ। এ চিত্র সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে টেনে ধরেছে। বিবিএস জানায়, ব্যাংকিং, পরিবহন ও সরকারি প্রশাসন খাতে ব্যয় সঙ্কোচন, নিয়োগ স্থগিত ও ভোক্তা ব্যয় হ্রাসের কারণে এ খাত প্রত্যাশিত গতি পায়নি।

জিডিপির আকার বেড়েছে : চলতি মূল্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শেষ কোয়ার্টারে জিডিপির আকার দাঁড়িয়েছে এক কোটি ৪৪ লাখ ৫০৩ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৯ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি। তবে স্থির মূল্যে প্রবৃদ্ধি তুলনামূলক ধীর, এটি উৎপাদন ও বিনিয়োগ সক্ষমতার বাস্তব চিত্রকে প্রতিফলিত করে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

বিবিএসের সর্বশেষ প্রাক্কলন অনুযায়ী, বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনো সীমিত গতি নিয়ে চললেও শিল্প খাতের ধারাবাহিক উন্নতি ভবিষ্যতের প্রবৃদ্ধির জন্য আশার বার্তা দিচ্ছে। অন্য দিকে, সেবা ও কৃষি খাতে কার্যকর নীতি সহায়তা ছাড়া টেকসই পুনরুদ্ধার নিশ্চিত করা কঠিন হবে।

অর্থনীতিবিদদের মতে, শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক হলেও কৃষি ও সেবা খাতের দুর্বলতা অর্থনীতিতে নতুন চাপ সৃষ্টি করছে। তারা বলেন- ‘কৃষি ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা খাতে স্বল্পসুদে অর্থায়ন, শিল্পে কর প্রণোদনা এবং সেবা খাতে আর্থিক পুনর্জাগরণ না ঘটলে এই প্রবৃদ্ধি স্থায়ী হবে না।’