বিশেষ সংবাদাতা, চট্টগ্রাম
স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা: শেখ ছাইদুল হক বলছেন, দেশে উচ্চ রক্তচাপ ও অন্যান্য অসংক্রামক রোগ দ্রুতগতিতে বাড়ছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে দেশে মোট মৃত্যুর ৭১ শতাংশের জন্য দায়ী অসংক্রামক রোগ, যার মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ অন্যতম। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দকৃত বাজেটের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ব্যয় করছে। সারা দেশে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করতে সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে। হাইপারটেনশন ও ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণে সারা দেশে ৪৯৫টি নন কমিউনিক্যাবল ডিজিজ (এনসিডি) কর্নারের মধ্যে ৩১০টিতে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট প্রতিটি কর্নারে একজন ডাক্তার ও দু’জন নার্স নিয়ে কাজ করছে। উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়ারেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণে আগামীতে এনসিডি কর্নারে ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস’ নিশ্চিত করা হবে।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত ‘বাংলাদেশ উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম উদ্যোগ’ বিষয়ক বিভাগীয় সমন্বয় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশের সহযোগিতায় সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার এনসিডির প্রতি যথেষ্ট আন্তরিক। এটি সরকারের অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত খাত। উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসসহ অসংক্রামক রোগ দ্রুত নিরাময়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণে মন্ত্রণালয়ের সম্মতি রয়েছে। বাজেট বরাদ্দ সাপেক্ষে লজিস্টিক সাপোর্টের পাশাপাশি জনবল নিয়োগ দিতে পারলে অসংক্রামক রোগগুলো নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে পারবো। এসব রোগের শতভাগ ওষুধ সরবরাহ করা সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে এলে আমরা উচ্চ রক্তচাপ ও অন্যান্য অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবো। ‘হৃদরোগ, স্ট্রোক, ডায়াবেটিস ও কিডনিসহ বিভিন্ন জটিল রোগের জন্য উচ্চ রক্তচাপ একটি অন্যতম এবং মারাত্মক ঝুঁকি। এজন্য উচ্চ রক্তচাপ ও উচ্চ রক্তচাপজনিত নানা রোগ প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও চিকিৎসার জন্য জনগণ এবং চিকিৎসকসহ সবার মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা একান্ত প্রয়োজন।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা: সেখ ফজলে রাব্বির সভাপতিত্বে ও ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের বিভাগীয় প্রোগ্রাম অফিসার ডা: মোহাম্মদ শাহিনুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সমন্বয় সভায় রিসোর্স পার্সন হিসেবে বক্তব্য রাখেন এনসিডিসির উপপরিচালক ডা: নুরুল ইসলাম, বাংলাদেশ হাইপারটেনশন কন্ট্রোল ইনিশিয়েটিভের (বিএইচসিআই) প্রোগ্রাম ডিরেক্টর ও এপিডেমিওলজি অ্যান্ড রিসার্চ (ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অফ বাংলাদেশ) বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক সোহেল রেজা চৌধুরী, সাপ্লাই চেইন কনসালট্যান্ট (বিএইচসিআই) ও সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সাবেক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া, চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক কার্যালয়ের উপপরিচালক (ইনসিটু) ডা: কমরুল আজাদ, ডেন্টালের সহকারী পরিচালক ডা: আবু ছৈয়দ মোহাম্মদ ইমতিয়াজ হোসেন, বিএইচসিআইর এডিশনাল প্রোগ্রাম ডিরেক্টর ডা: মাহফুজুর রহমার ভূঁইয়া, বিএইচসিআইর ডেপুটি প্রোগ্রাম ডিরেক্টর ডা: শামীম যুবায়ের, বান্দরবান ১০০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ডা: শাহীন হোসাইন চৌধুরী, চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা: জাহাঙ্গীর আলম ও ফেনী জেলা সিভিল সার্জন ডা: রুবায়েত বিন করিম। ‘বাংলাদেশ উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম উদ্যোগ’ বিষয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের চট্টগ্রাম জোনের সার্ভিল্যান্স মেডিক্যাল অফিসার ডা: উদিত প্রয়াস সিকদার। বিভাগের বিভিন্ন জেলার সিভিল সার্জন, ডেপুটি সিভিল সার্জন, স্বাস্থ্য বিভাগের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তারা সমন্বয় সভায় উপস্থিত ছিলেন।
সমন্বয় সভায় অন্য বক্তারা বলেন, নীরব ঘাতক উচ্চ রক্তচাপে এখনো আক্রান্ত দেশের এক-চতুর্থাংশ মানুষ। সরকার ইতোমধ্যে কমিউনিটি ক্লিনিক ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিনামূল্যে ওষুধ প্রদান শুরু করলেও টেকসই অর্থায়নের অভাবে নিরবছিন্নভাবে ওষুধ সরবরাহ সম্ভব হচ্ছে না। বাংলাদেশে মৃত্যু ও পঙ্গুত্বের প্রধান তিনটি কারণের একটি উচ্চ রক্তচাপ। তৃণমূল পর্যায়ে বিনামূল্যে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ নিশ্চিত করার পাশাপাশি এখাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হলে তা অসংক্রামক রোগ ও অকালমৃত্যু কমিয়ে আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। ডিজিটাল হেলথ অ্যাপ ব্যবহারের ফলে রোগী ট্র্যাকিং, ফলোআপ ও চিকিৎসা আরো কার্যকর হয়েছে। এর ফলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। অসংক্রামক রোগজনিত মৃত্যুর হার দ্রুত বাড়ছে। তাই সরকার সব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অসংক্রামক রোগ (এনসিডি) কর্নারে বিনা মূল্যে ওষুধ বিতরণ করছে।
বক্তারা আরো বলেন, বাংলাদেশ হাইপারটেনশন কন্ট্রোল ইনিশিয়েটিভ (বিএইচসিআই) কর্মসূচির আওতায় এখন পর্যন্ত পাঁচ লাখের বেশি উচ্চ রক্তচাপের রোগী বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবার আওতায় এসেছেন। তারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে নিয়মিত ওষুধ পাচ্ছেন। এর মধ্যে ৫৭ শতাংশ রোগীর রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। দেশে প্রাপ্তবয়স্কদের শতকরা ২৫ ভাগ মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। যদিও এর অর্ধেকই জানেন না তিনি এই রোগে আক্রান্ত। তবে স্বাস্থ্যসম্মত ও নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ করা সম্ভব।



