রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী, পতিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের তারিখ নির্ধারণকে ঘিরে লকডাউন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে দলটি। বৃহস্পতিবারের এ কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংস ঘটনার মাধ্যমে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছে দলটি। তবে আওয়ামী লীগের এ সহিংসতার চেষ্টা রুখে দিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি গণতান্ত্রিক সব রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী, শিক্ষার্থীসহ সাধারণ জনগণ সজাগ রয়েছে। যেখানেই তারা সহিংসতার চেষ্টা করবে সেখানেই ঐক্যবদ্ধভাবে তাদের অপতৎপরতা রুখে দেয়া হবে। রাজনৈতিক নেতারাসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের সাথে কথা হলে নয়া দিগন্ত প্রতিবেদকের কাছে তারা এমন অভিমত প্রকাশ করেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব সাধারণ নেতাকর্মীদের বিপদের মুখে ফেলে পালিয়েছে। এতে দলটির নেতাকর্মীরা হীনম্মন্যতায় ভুগছে। তারা কোনো একটা ইস্যুকে কেন্দ্র করে মাঠে নামার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। তবে দেশের মানুষ যে ঐক্যবদ্ধ ফ্যাসিবাদবিরোধী অবস্থানে রয়েছে সেখানে দলটি পাত্তা পাবে না। তারা বলেন, বিদেশ থেকে অর্থ পাঠিয়ে বিচ্ছিন্নভাবে সহিংসতা করিয়ে আওয়ামী লীগ নিজেদের অবস্থ’ান জানান দিতে চাচ্ছে; কিন্তু গণবিরোধী এসব কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সরকার ও জনগণের কঠোর অবস্থানের কারণে আওয়ামী লীগের কর্মীরা আরো হতাশ হবেন।
সাধারণ মানুষের অবস্থান : বিভিন্ন শ্রেণিপেশার সাধারণ মানুষ মনে করেন, আওয়ামী লীগ দীর্ঘ সময় এ দেশের মানুষের ওপর নিপীড়ন চালিয়েছে। সর্বশেষ জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে কয়েক হাজার ছাত্র-জনতাকে হত্যার মাধ্যমে গণহত্যা চালিয়েছে। এখন আবার যদি তারা সহিংসতার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের প্রাণনাশের চেষ্টা করে তাহলে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে সেটা রুখে দেবো। পরাজিত শক্তিকে কোনোভাবে দেশকে অস্থিতিশীল করতে দেবো না।
রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান : পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের নেতা-কর্মীদের আবারো রাজনীতির মাঠে নামার পাঁয়তারা রুখে দিতে একসাথে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় নেতারা।
বিএনপি : বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল নয়া দিগন্তকে বলেন, আওয়ামী লীগ নিজেরাই লকডাউন হয়ে গেছে। নিজেদের নেতা-কর্মীদের বিপদের মুখে ফেলে তারা বিদেশে আরাম আয়েশ করছে। এটা কোনো রাজনৈতিক দলের ঐতিহ্য হতে পারে না। যে হাত এ দেশের মানুষের রক্তে রক্তাক্ত সে হাত আর এ দেশে ঢুকতে দেয়া হবে না। তিনি বলেন, সরকারকে আহ্বান জানাবো নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের সকল অপতৎপরতা কঠোর হস্তে দমন করতে। একটা বিষয় সরকারকে মনে রাখতে হবে, দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতের ভিন্নতা আছে তবে ফ্যাসিবাদ ইস্যুতে আমরা ঐক্যবদ্ধ।
জামায়াতে ইসলামী : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম নয়া দিগন্তকে বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী ইস্যুতে পুরো দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ। আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ। সরকারকে আওয়ামী লীগের সব অপতৎপরতা বন্ধে কঠোর ভূমিকা পালন করতে হবে। এ ছাড়াও রাজনৈতিক দল হিসেবে আমরা সব অপতৎপরতার বিরুদ্ধে সজাগ দৃষ্টি রাখছি।
নাগরিক ঐক্য : আওয়ামী লীগের কর্মসূচির ইস্যুতে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না নয়া দিগন্তকে বলেন, নিজেদের মধ্যে নানা মতপার্থক্য থাকলেও সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রের ইস্যুতে দেশের সব রাজনৈতিক দল একমত। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের প্রতি দেশের মানুষের এখনো যে ঘৃণা কাজ করছে তাতে তারা বাড়াবাড়ি করলে অবশ্যই জনরোষে পড়বে এবং সেখানে রাজনৈতিক দলগুলো খুব সক্রিয়ভাবেই কাজ করবে।
গণ অধিকার পরিষদ : গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর নয়া দিগন্তকে বলেন, শুধুমাত্র রাজনৈতিক দলগুলো নয়, পুরো দেশ এখনো ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ। শেখ হাসিনার রায়কে কেন্দ্র করে বিদেশ থেকে পাঠানো টাকায় ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে তারা কিছুই করতে পারবে না। কোথাও সহিংসতার চেষ্টা করলে জনতা গণপিটুনি দিয়ে দু®ৃ‹তকারীদের পুলিশে দিবে। আওয়ামী লীগ রাস্তায় দাঁড়াতেই পারবে না।
ছাত্রদল : বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব নয়া দিগন্তকে বলেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে অন্তর্বর্তী সরকারের অনেক দায়িত্ব রয়েছে। তারা দীর্ঘ সময় পেয়েও সে দায়িত্ব যথাযথ পালনে ব্যর্থ হয়েছে। দেশের বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নাজুক। সরকারের উচিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
ছাত্রশিবির : ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম নয়া দিগন্তকে বলেন, দলমত যাই হোক ফ্যাসিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে আমরা ঐক্যবদ্ধ। তাদের যেকোনো অপচেষ্টা রুখে দিতে প্রস্তুত সবাইকে।
ডাকসু ভিপি : ডাকসু ভিপি আবু সাদিক কায়েম বলেছেন, আওয়ামী লীগ ইস্যুতে সারা দেশের ছাত্রসমাজ ঐক্যবদ্ধ। এ সন্ত্রাসী সংগঠনটি দেশকে নতুন করে অস্থিতিশীল করে তোলার চেষ্টা করলে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মতোই ছাত্রসমাজ ঐক্যবদ্ধভাবে তাদের প্রতিহত করবে।
পেশাজীবীদের অবস্থান : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. আব্দুল লতিফ মাসুম নয়া দিগন্তকে বলেন, বাংলাদেশের সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে পেশাজীবীরা সামনের সারিতে ছিল। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানেও তারা সরকারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে রাজপথে নেমে এসেছে। ভবিষ্যতেও দেশবিরোধী যেকোনো ষড়যন্ত্রে পেশাজীবীরা ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে নামবে।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, পেশাজীবীরা সর্বদা স্বাধীনচেতা হয়। আমরা অতীতেও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় রাজপথে ছিলাম এবং ভবিষ্যতেও গণতন্ত্র রক্ষায় যেকোনো সময় প্রয়োজন হলে রাজপথে থাকব।
সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী নয়া দিগন্তকে বলেন, আওয়ামী লীগ যে অশুভ তৎপরতা শুরু করেছে তাতে জুলাইয়ের ঐক্যবদ্ধ রাজনৈতিক দলগুলো আরো ঐক্যবদ্ধ হবে। এর ফলে দেশে থাকা আওয়ামী লীগের সাধারণ কর্মীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।



