ঘটনাস্থলের ১০০ মিটার দূর দিয়ে চলাচলের অনুরোধ

টঙ্গীর আগুনে দগ্ধ এক ফায়ার ফাইটারের মৃত্যু

চিকিৎসাধীন আরো ৩ জন

Printed Edition
টঙ্গীর আগুনে দগ্ধ এক ফায়ার ফাইটারের মৃত্যু
টঙ্গীর আগুনে দগ্ধ এক ফায়ার ফাইটারের মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক

গাজীপুরের টঙ্গীর একটি রাসায়নিকের গুদামে লাগা আগুনে আহত ফায়ার ফাইটার শামীম আহমেদ চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। গতকাল মঙ্গলবার বেলা ৩ টায় জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে তার মৃত্যু হয়। অন্য সহকর্মীদের সাথে গুদামের আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে গুরুতর দগ্ধ হয়েছিলেন তিনি। এ দিকে ঘটনাস্থলের ১০০ মিটারের আশপাশ দিয়ে মানুষ চলাচল না করতে অনুরোধ জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। কারণ কেমিক্যালের আগুন থেকে বের হওয়া ধোঁয়া মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর।

ফায়ার সার্ভিস মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম জানান, সোমবার বিকেলে টঙ্গীতে রাসায়নিকের একটি গুদামের আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের চার কর্মী দগ্ধ হন। তাদের মধ্যে দুইজন ফায়ার ফাইটার শামীম আহমেদ ও নুরুল হুদার শরীরের ১০০ শতাংশ দগ্ধ হয়। তাদের উদ্ধার করে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। মঙ্গলবার বেলা ৩টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ফায়ার ফাইটার শামীম আহমেদের মৃত্যু হয়। নিহত শামীম আহমেদ টঙ্গী ফায়ার স্টেশনে কর্মরত ছিলেন। ২০০৪ সালের ১৬ আগস্ট তিনি ফায়ার সার্ভিসে ফায়ার ফাইটার পদে যোগ দেন। তার বাড়ি নেত্রকোনা জেলায়। তিনি বিবাহিত এবং তার তিন সন্তান রয়েছে। জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা যায়, দগ্ধ চার ফায়ার ফাইটারদের মধ্যে এখন তিনজন চিকিৎসাধীন। তারা হলেন- ১০০ শতাংশ দগ্ধ ফায়ার ফাইটার নুরুল হুদা, ৪২ শতাংশ দগ্ধ অফিসার খন্দকার জান্নাতুল নাঈম ও ৫ শতাংশ দগ্ধ ফায়ার ফাইটার জয় হাসান।

জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা: মো: নাসির উদ্দিন বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো হচ্ছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হচ্ছে দুইজন ফায়ার ফাইটার শতভাগ দগ্ধ হয়েছেন। যার মধ্যে একজন মারা গেছেন। আবেগের চেয়ে আমরা সায়েন্সকে বেশি প্রাধান্য দেবো। চিকিৎসক হিসেবে আমাদের পক্ষ থেকে যা যা করণীয় সব করা হবে।

তিনি বলেন, চল্লিশ ভাগের বেশি পুড়ে যাওয়া আশঙ্কাজনক। তার পরও চিকিৎসায় এসব রোগী আমাদের দেশে যেমন বাঁচে, বিদেশেও বাঁচে। মাইলস্টোন ট্র্যাজেডির সময় এই বিষয়টি আসছিল যে রোগীদের দেশে চিকিৎসা হবে নাকি দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়া হবে। দেশে থেকেই চিকিৎসা করলে রোগী ভালো হতে পারে। একই সময় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব:) মো: জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, হাসপাতালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে। দগ্ধদের সর্বোচ্চ সেবা ও চিকিৎসাসেবা চলছে। আপনারা আল্লাহর কাছে দোয়া করবেন যেন তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যায়।

গত সোমবার রাতে বার্ন ইনস্টিটিউটে আহত ফায়ার ফাইটারদের চিকিৎসার খোঁজ-খবর নিতে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল বলেন, ফায়ার ফাইটারদের মূল উদ্দেশ্য ছিল আগুন নেভানো। কিন্তু দুঃখজনকভাবে বিস্ফোরণ হওয়ায় তারা দগ্ধ হন। তারা সবাই পিপি পরেছিলেন। একটি পিপির তাপমাত্রা থাকে ৩০০ থেকে ৩২০ ডিগ্রি। অথচ আগুনের তাপমাত্রা এতটাই ছিল যে সেই পিপি পুড়ে গেছে।

গতকাল মঙ্গলবার ঘটনাস্থলে বুয়েট-এর দুইজন কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার নিয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তারা দেখতে পান আগুন নেভানোর পরও সেখান থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। ওই ধোঁয়া মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক মো: ছালেহ উদ্দিন। তিনি বলেন, যেহেতু ক্ষতিকারক ধোঁয়া নির্গত হচ্ছে তাই ঘটনাস্থলের ১০০ মিটারের আশপাশ দিয়ে কাউকে চলাচল না করতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে সালেহ উদ্দিন বলেন, আগুন লাগা ওই ভবনে শুধু কেমিক্যাল বা রাসায়নিকই ছিল না। সেখানে ছিল প্লাস্টিকের গুদাম।

হার্ডওয়ারের দোকানসহ দাহ্য পদার্থ থাকা বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। পুরো ঘটনাটি তদন্ত করতে একটি কমিটি গঠন করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

এক তথ্য মতে, গত ১০ বছরে (২০২৪ সাল পর্যন্ত)আগুন নেভাতে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের ৪৯ জন সদস্য নিহত হয়েছেন। যার মধ্যে ২০২২ সালেই মারা যান ১৩ জন।