শিক্ষার্থীদের বিদ্যমান সমস্যা সমাধানই প্রধান প্রতিশ্রুতি
দীর্ঘ ছয় বছরের প্রতীক্ষার পর আগামী ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। এবারের নির্বাচন মূলত পাঁচটি বড় গোষ্ঠীর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার রূপ নিয়েছে। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ, ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট, স্বতন্ত্র শিক্ষার্থীজোট, বাম সমর্থিত প্রতিরোধ পর্ষদের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে উৎসবমুখর হয়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। প্রতিদ্বন্দ্বী এই প্রধান পাঁচটি জোটের ভিপি প্রার্থীরা কথা বলেছেন দৈনিক নয়া দিগন্তের সাথে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নয়া দিগন্তের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি হারুন ইসলাম
ঢাবির সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী আব্দুল কাদের কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম পরিচিত মুখ। জুলাই আন্দোলনের একপর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ ছয় সমন্বয়ক গ্রেফতার হওয়ার পর তিনি আন্দোলনে সম্মুখসারিতে ভূমিকা রাখেন। ডাকসু নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ সমর্থিত ‘বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ’ প্যানেল থেকে তিনি ভিপি পদে লড়ছেন।
নয়া দিগন্ত : নির্বাচনে শিক্ষার্থীদের সাড়া কেমন পাচ্ছেন?
আব্দুল কাদের : জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটা শঙ্কা দেখতে পাচ্ছি। তারা একটা আস্থার জায়গা চায়। নব্বইয়ে একটা গণ-অভ্যুত্থান হয়েছিল, এরপর কোনো পরিবর্তন জাতি দেখতে পায়নি। চব্বিশের পর আবারো যদি সেই আগের কালচার ফিরে আসে তাহলে তাকে নিরাপত্তা দেবে কে? ফের গেস্টরুম-গণরুম প্রথা চালু হবে না তো? এই শঙ্কা শিক্ষার্থীদের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে। তারা আমাদের বিগত সময়ের কার্যক্রম দেখেছে। সর্বশেষ জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে লড়াইয়ে আমরা সামনে ছিলাম। পাশাপাশি স্বৈরাচার পতনের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের পাশে থেকে সাধ্যমতো কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। আমরা নিশ্চয়তা দিতে পারি, আমরা নির্বাচিত হলে ক্যাম্পাসে আর দখলদারির রাজনীতি ফিরতে দেবো না। নির্বাচিত না হলেও এই সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে।
নয়া দিগন্ত : হলে ছাত্ররাজনীতি ও হল কমিটির বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?
আব্দুল কাদের : আমরা চাইব না আমাদের হাত ধরে ক্যাম্পাসে গণরুম-গেস্টরুম কালচার ফিরুক। যেমনটা শিবির করছে। তারা যদি বলত- আমাদের হল কমিটি আছে, দাওয়াতি কাজ করছি, নামাজ পড়ছি, তাহলেও মেনে নেয়া যেত; কিন্তু তারা হল কমিটি গোপন রেখে কার্যক্রম চালাচ্ছে। এর দেখাদেখি অন্যরাও শিক্ষার্থীদের জোরপূর্বক প্রোগ্রামে নিয়ে যাবে। যেমনটা আমরা দেখেছি, এস এম ফরহাদের বক্তব্যের পরপরই ছাত্রদল কমিটি দিয়েছে। আমরা হলে কোনোভাবেই গণরুম-গেস্টরুম কালচার ফিরতে দেবো না।
নয়া দিগন্ত : প্রচারণা শুরুর পর আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ আসছে, এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?
আব্দুল কাদের : আচরণবিধি লঙ্ঘনের সূচনা করেছেন ছাত্রদলের জিএস প্রার্থী তানভীর বারী হামীম। মনোনয়ন সংগ্রহের সময় তিনি নেতাকর্মীদের নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে প্রবেশ করেন, যা আতঙ্ক সৃষ্টি করে। এটা সম্পূর্ণ বিধিমালার লঙ্ঘন। শুধু তাই নয়, তিনি সেই ভিডিও ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন। আচরণবিধির প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখালেও তার বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আমরা দেখেছি, ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ছাত্রদলের প্রার্থীরা নির্ধারিত সময়ের পরে ফরম তুলতে গেলে শিক্ষার্থীরা প্রতিরোধ করে। ছাত্রদল এটাকে ‘মব’ বলে সংবাদ সম্মেলন করে এবং নির্বাচন কমিশন প্রার্থিতা গ্রহণের সময়সীমা এক দিন বাড়িয়ে দেয়। আমরা মনে করি, কোনো দলের স্বার্থকে প্রাধান্য না দিয়ে, জুজুর ভয় না পেয়ে প্রশাসন যদি শিক্ষার্থীদের ম্যান্ডেট রক্ষা করতে পারে, তাহলে কোনো শঙ্কা থাকবে না।
নয়া দিগন্ত : আপনার প্যানেলের সম্ভাবনা কেমন দেখছেন?
আব্দুল কাদের : যেহেতু শিক্ষার্থীরা পুরনো ব্যবস্থা ফিরে আসা নিয়ে শঙ্কিত, তাই যারা পরিবর্তনের আশায় চব্বিশের অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাদের ওপরই শিক্ষার্থীরা আস্থা রাখতে চায়। সে ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই আমি ও আমার প্যানেলের সম্ভাবনা বেশি দেখছি। কেননা, আমার প্যানেলের সবাই চব্বিশের অভ্যুত্থানের অগ্রসৈনিক এবং ইতিবাচক পরিবর্তন চায়।
নয়া দিগন্ত : নির্বাচনে জয়লাভ করলে আপনার অঙ্গীকার কী?
আব্দুল কাদের : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই কোটা আন্দোলনের মাধ্যমে জুলাই অভ্যুত্থানের সূচনা। ১৫ জুলাই ছাত্রলীগের হামলার পর থেকে আন্দোলনের মোড় ঘুরে যায়। অভ্যুত্থানের পর আমাদের চিন্তা ছিল ক্যাম্পাসের আমূল পরিবর্তন আনা, রাজনৈতিক কাঠামো সুস্পষ্ট করা। আমরা চাই ভিসি, প্রোভিসি, প্রক্টর, প্রভোস্ট ও শিক্ষকদের নিয়োগ বিধিমালার আওতায় আনা হোক। শিক্ষার্থীদের প্রতি দায়বদ্ধতা (আবাসন, খাদ্য, পাঠদান) নিশ্চিত করতে হবে। আমরা যদি শিক্ষকদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে পারি এবং একটি রাজনৈতিক সমঝোতা তৈরি করতে পারি, তাহলে জুলাইয়ের আকাক্সক্ষা বাস্তবায়ন সম্ভব।