নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সহকারী প্রক্টর শেহরীন আমিন ভূঁইয়া (মোনামি) নিজের ছবি বিকৃত করে ফেসবুকে প্রচার ও অশালীন মন্তব্যের অভিযোগে সাইবার সুরক্ষা আইনে শাহবাগ থানায় মামলা করেছেন।
গতকাল সোমবার দুপুরে তিনি এই মামলা দায়ের করেন। মামলায় সাংবাদিক, লেখক ও শিক্ষার্থীসহ চারজনকে আসামি করা হয়েছে, পাশাপাশি অজ্ঞাত আরো কয়েকজনকেও আসামি করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে মোনামি উল্লেখ করেছেন, “বিভিন্ন ফেসবুক আইডি থেকে আমার ছবি এডিট করে অশালীনভাবে পোস্ট করা হচ্ছে এবং আমাকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ, অশালীন ও মানহানিকর মন্তব্য করা হচ্ছে।” তিনি দাবি করেন, ঘটনাটি তাকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তুলেছে এবং তিনি দ্রুত বিচার চান।
অভিযোগ ও তদন্ত : মামলায় যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তারা হলেন- সাংবাদিক ও অ্যাকটিভিস্ট মুজতবা খন্দকার, লেখক মহিউদ্দিন মোহাম্মদ, ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী নিরব হোসাইন ও আশফাক হোসাইন (ইভান)।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসুর আইন ও মানবাধিকার সম্পাদক মো: জাকারিয়া বলেন, “অধিকতর তদন্তের জন্য মামলাটি গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার ইউনিটে পাঠানো হয়েছে। তারা আশ্বাস দিয়েছে, ভবিষ্যতে শিক্ষক বা শিক্ষার্থী যেকোনো সাইবার বুলিংয়ের শিকার হলে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।”
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকসমাজের প্রতিক্রিয়া : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির কয়েকজন সদস্য জানান, এই মামলা শুধু একজন শিক্ষকের ব্যক্তিগত সুরক্ষার বিষয় নয় বরং পুরো শিক্ষাঙ্গনে নারীদের নিরাপত্তা ও সম্মান রক্ষার সাথে জড়িত।
একজন সিনিয়র অধ্যাপক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “অনলাইনে নারী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে যে ধরনের অপপ্রচার, বিকৃতি আর কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করা হয় তা আমাদের সমাজে গভীর অসুস্থতার ইঙ্গিত দেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী এমন অপরাধের জন্য শিক্ষার্থীদেরও কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত।”
আইনি বিশ্লেষণ ও সমাজবিজ্ঞানীদের মত : সাইবার আইন বিশেষজ্ঞ অ্যাডভোকেট তানিয়া ফেরদৌস বলেন, “বাংলাদেশে ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৩” আইনে এই ধরনের ছবি বিকৃতি, অপমানজনক মন্তব্য ও হয়রানি অপরাধ হিসেবে বিবেচিত। তবে বাস্তব প্রয়োগে বিলম্ব ও প্রমাণ সংগ্রহে সীমাবদ্ধতার কারণে অনেক অপরাধী শাস্তি এড়াতে সক্ষম হয়।”
অন্য দিকে সমাজবিজ্ঞানী ড. রুবিনা আফরোজ বলেন, “এ ধরনের ঘটনা দেখায়, আমাদের ডিজিটাল সংস্কৃতিতে নৈতিকতা ও দায়িত্ববোধের মারাত্মক ঘাটতি রয়েছে। সোস্যাল মিডিয়ায় নারী বিদ্বেষ ও চরিত্রহননের প্রবণতা এক ধরনের ডিজিটাল লিঙ্গ সহিংসতা, যা আইনি ব্যবস্থার পাশাপাশি শিক্ষামূলক ও সামাজিক প্রচারণার মাধ্যমেও মোকাবেলা করা জরুরি।”
সোস্যাল মিডিয়ায় নারী নির্যাতন বাড়ছে : সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ফেসবুক, এক্স (টুইটার) ও টিকটকের মতো প্ল্যাটফর্মে নারী সাংবাদিক, শিক্ষক ও সামাজিক কর্মীদের বিরুদ্ধে ছবি বিকৃতি ও হুমকিমূলক পোস্টের সংখ্যা বেড়েছে।
২০২৫ সালের প্রথম ৯ মাসে বাংলাদেশে সাইবার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে ২,৩০০টির বেশি অভিযোগ এসেছে, যার প্রায় ৬২% ভুক্তভোগী নারী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর হিসেবে মোনামির এই মামলা শুধু ব্যক্তিগত প্রতিকার নয় বরং শিক্ষাঙ্গন ও ডিজিটাল স্পেসে নারীর মর্যাদা রক্ষার প্রতীকী লড়াই হিসেবেও দেখা হচ্ছে। আইনি প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন হলে এটি ভবিষ্যতে সাইবার অপরাধীদের জন্য একটি সতর্কবার্তা হতে পারে।
 


