লালমনিরহাট-১ আসনে ভোটের হাওয়া

বিএনপির চার, জামায়াতের এক অন্যান্য ৩ প্রার্থী মাঠে

Printed Edition
বিএনপির চার, জামায়াতের এক অন্যান্য ৩  প্রার্থী মাঠে
বিএনপির চার, জামায়াতের এক অন্যান্য ৩ প্রার্থী মাঠে

সাব্বির আহমেদ লাভলু লালমনিরহাট

গণঅভ্যুত্থানের পরবর্তী রাজনৈতিক উত্তাপে এখন সরব দেশের উত্তরাঞ্চল। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সীমান্তবর্তী লালমনিরহাটের রাজনীতিতে জোর প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। বিশেষ করে জেলার লালমনিরহাট-১ (পাটগ্রাম-হাতিবান্ধা) আসনে চলছে তুমুল প্রচার-প্রচারণা ও সম্ভাব্য প্রার্থীদের গণসংযোগ। এই গুরুত্বপূর্ণ আসনে বিএনপির একাধিক প্রার্থী মাঠে থাকায় দলটির অভ্যন্তরীণ কোন্দল এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।

দুইটি উপজেলা, একটি পৌরসভা ও ২০টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ আসনের মোট ভোটার সংখ্যা ৫ লাখ ৭৬ হাজার ৬৮৩ জন। প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর, তিনবিঘা করিডোর ও ত্রিদেশীয় সংযোগস্থল বুড়িমারী স্থলবন্দর হওয়ায় রাজনৈতিক দলগুলো এ আসনকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে আসনটি জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের দখলে থাকলেও বিএনপি এবার মাঠে ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছে।

২০০১ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি এই আসনটি মিত্র দল জামায়াতে ইসলামীর জন্য ছেড়ে দিয়েছিল। ২০০৮ সালে জামায়াতের প্রার্থী মাওলানা হাবিবুর রহমান ৭৪ হাজার ভোট পেয়ে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। এবারও জামায়াতের শক্তিশালী উপস্থিতি রয়েছে। দলটির কেন্দ্রমনোনীত প্রার্থী, ঢাকা মহানগর উত্তরের মজলিসে সুরা সদস্য মো. আনোয়ারুল ইসলাম রাজু ইতোমধ্যে নির্বাচনী প্রচারে মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। তাঁর নেতৃত্বে জামায়াতের সংগঠন এখন তৃণমূল পর্যন্ত প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে।

অন্যদিকে বিএনপি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থী ঘোষণা না করলেও চারজন সম্ভাব্য প্রার্থী ইতোমধ্যে প্রচারণায় ব্যস্ত। এদের মধ্যে রয়েছেন- গত নির্বাচনে বিএনপির টিকিটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা ব্যারিস্টার হাসান রাজীব প্রধান, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতা ব্যারিস্টার মাজেদুল ইসলাম পাটোয়ারী উজ্জ্বল, সাবেক সংসদ সদস্য জয়নাল আবেদীন সরকারের ছেলে ব্যারিস্টার শাহেদুজ্জামান কোয়েল এবং জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা শাহীন আকন্দ। চারজনই কেন্দ্রীয় মনোনয়ন পাওয়ার আশায় বিভিন্ন সভা-সমাবেশ ও গণসংযোগে অংশ নিচ্ছেন।

তবে বিএনপির অভ্যন্তরে মনোনয়ন ঘিরে তৈরি হয়েছে জটিলতা। স্থানীয় পর্যায়ে ‘গ্রুপিং’ ও ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব এতটাই তীব্র যে সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে অনেকের যোগাযোগ পর্যন্ত নেই। দলীয় সিদ্ধান্তে বিলম্ব ও কোন্দল নিরসনে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হওয়ায় অন্য দলগুলো সুযোগ নিতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

স্থানীয় বিএনপির এক প্রবীণ নেতা বলেন, ‘দলীয় প্রার্থী নির্ধারণে দেরি হলে সংগঠন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ মাঠে এখনই অবস্থান শক্ত করতে হবে।’ তিনি মনে করেন, ২০০১ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে জামায়াতের শক্ত ভোট ব্যাংক থাকলেও বিএনপি এককভাবে প্রার্থী দিলে আসনটি পুনরুদ্ধার সম্ভব।

এদিকে এবি পার্টির হয়ে মাঠে নেমেছেন জেলা সমন্বয়ক আবু রাইয়ান আশারী রচি, যিনি সাবেক জামায়াত প্রার্থী আবু হেনা এরশাদ হোসেন সাজুর ছেলে। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দিয়েছেন সদ্য তুরস্কের নাগরিকত্ব ত্যাগ করা ব্যবসায়ী মো. শিহাব আহমেদ। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পক্ষে মাঠে রয়েছেন মুফতি ফজলুল করিম শাহরিয়ার।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপির অভ্যন্তরীণ সমন্বয় ব্যর্থ হলে জামায়াত, জাতীয় পার্টি বা অন্যান্য দল সেই শূন্যতা কাজে লাগাতে পারে।

স্থানীয়দের মতে, সীমান্তবর্তী এই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবার হবে মূলত বিএনপি ও জামায়াত প্রার্থীদের মধ্যে। মাঠ পর্যায়ে বিএনপির প্রার্থীরা জনসংযোগে এগিয়ে থাকলেও দলীয় ঐক্যই হবে চূড়ান্ত ফল নির্ধারণের মূল উপাদান।