কোরবানির পশুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ। আসছে ঈদুল আজহায় চাহিদার চেয়ে কোরবানির পশু কয়েক গুণ বেশি। সরকারের দেয়া তথ্যমতে এ বছরে কোরবানির জন্য এক কোটি ২৪ লাখ ৪৭ হাজার ৩৩৭টি গবাদিপশু রয়েছে; যার মধ্যে মধ্যে ৫৬ লাখ দুই হাজার ৯০৫টি গরু-মহিষ, ৬৮ লাখ ৩৮ হাজার ৯২০টি ছাগল-ভেড়া এবং ৫ হাজার ৫১২টি অন্যান্য পশু রয়েছে; যা চাহিদার চেয়ে ২০ লাখ ৬৮ হাজার ১৩৫টি বেশি।
খামারিরা জানিয়েছেন, এবার কোরবানির বাজারে ভালো দামের প্রত্যাশা করছেন তারা। দেশের বিভিন্ন হাটে এসব উদ্বৃত্ত পশু সরবরাহের প্রস্তুতি চলছে। এ ছাড়া কোরবানির পশু সরবরাহের জন্য বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হবে। উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকা হয়ে চট্টগ্রাম পর্যন্ত এ বিশেষ ট্রেন চলবে।
খামারিরা জানিয়েছেন, তারা দেশের বিভিন্ন জেলায়ও কোরবানির পশুর পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করেছেন। খাগড়াছড়ি, রাজশাহী, যশোরসহ প্রায় সব জেলায় চাহিদার চেয়েও বেশি পশু প্রস্তুত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়।
জানা গেছে, খাগড়াছড়িতে তিন হাজার খামারে মোট ১৯ হাজার ১৬০টি কোরবানিযোগ্য পশু প্রস্তুত রয়েছে। এর মধ্যে গরু ১২ হাজার ৮১০টি, ছাগল ছয় হাজার ১১০টি, মহিষ ১৫টি ও ভেড়া ৮০টি। জেলার চাহিদা মিটিয়ে অন্তত এক হাজার ১৬০টি পশু দেশের অন্যান্য জেলায় সরবরাহ করা যাবে।
রাজশাহীতে পশুর চাহিদা তিন লাখ ৮৪ হাজার ৪৩৭টি হলেও প্রস্তুত রয়েছে চার লাখ ৯৬ হাজার ৮৯৩টি। ফলে জেলায় প্রায় এক হাজার ১২ হাজার ৪৫৬টি পশু উদ্বৃত্ত রয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: আতোয়ার রহমান।
অন্য দিকে যশোর জেলায় এবার এক হাজার ১৪ হাজার ৫৭৪টি কোরবানির পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। এর মধ্যে গরু ৩৫ হাজার ৩৩৮টি, ছাগল ৭৮ হাজার ৫২৮টি ও ভেড়া ৫৮৩টি। জেলার চাহিদা ৯৬ হাজার, ফলে ১৯ হাজারের বেশি পশু উদ্বৃত্ত রয়েছে।
এ বিষয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার সম্প্রতি এক বৈঠকে জানান, গরুর দেশী জাত হারিয়ে আমাদের আধুনিক জাত দরকার নেই। দেশী জাত রক্ষা করে আমরা যেন দুধ ও গোশত উৎপাদন করতে পারি, সে লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। কোরবানির জন্য এবার প্রয়োজনের তুলনায় বেশি পরিমাণ পশু দেশে রয়েছে।
চাহিদার তুলনায় সাড়ে ২০ লাখের বেশি পশু জোগান দেয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। আমাদের দেশীয় উৎপাদিত যে গবাদিপশু খামারিরা করেন তা যথেষ্ট। এ বছরে কোরবানিযোগ্য গবাদিপশুর মধ্যে ৫৬ লাখ দুই হাজার ৯০৫টি গরু-মহিষ, ৬৮ লাখ ৩৮ হাজার ৯২০টি ছাগল-ভেড়া এবং ৫ হাজার ৫১২টি অন্যান্য প্রজাতিসহ সর্বমোট এক কোটি ২৪ লাখ ৪৭ হাজার ৩৩৭টি গবাদিপশুর প্রাপ্যতা আশা করা যাচ্ছে। এ বছর প্রায় ২০ লাখ ৬৮ হাজার ১৩৫টি গবাদিপশুর উদ্বৃত্ত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
কোরবানির পশুবাহী ট্রাক যাতে ছিনতাইয়ের শিকার না হয়, সে জন্য পুলিশ, বিজিবি, জেলা প্রশাসন, জেলা প্রাণিসম্পদ দফতরের যৌথ উদ্যোগ নিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু থাকবে।
জানা যায়, এ বছর ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির আওতায় ১৯টি হাটে পশুর প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য ২০টি ভেটেরিনারি মেডিক্যাল টিম থাকবে। ভেটেরিনারি মেডিক্যাল টিমের কার্যক্রম দেখভালের জন্য পাঁচটি কেন্দ্রীয় মনিটরিং টিম এবং ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটিতে দু’টি বিশেষজ্ঞ মেডিক্যাল টিম থাকবে।
এ দিকে আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাজধানীর আফতাবনগর ও বনশ্রীর মেরাদিয়ায় পশুর হাট না বসানোর হাইকোর্টের আদেশ বহাল রেখেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চেম্বার কোর্ট। আপিল বিভাগের চেম্বার কোর্ট বিচারপতি মো: রেজাউল হক এ বিষয়ে ‘নো অর্ডার’ দেন।
আদালতে রিটকারীদের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন। সিটি করপোরেশনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মো: রুহুল কুদ্দুস কাজল। গত ২৯ এপ্রিল ঈদ উপলক্ষে রাজধানীর বনশ্রীর মেরাদিয়ায় এবার গরুর হাট বসানো যাবে না বলে আদেশ দেন হাইকোর্ট।
গত ৪ মে হাইকোর্টের একই বেঞ্চ রাজধানীর আফতাবনগর আবাসিক এলাকায় কোরবানির পশুর হাট বসানোর ইজারা বিজ্ঞপ্তির কার্যক্রম স্থগিত করে আদেশ দেয়। এর বিরুদ্ধে আপিল আবেদন দায়ের করে সিটি করপোরেশন।