বিদায়ী সপ্তাহে পুঁজিবাজারে সূচক কমলেও বেড়েছে লেনদেন

আগের সপ্তাহে বাজার মূলধন ছিল ৬ লাখ ৭৩ হাজার ৮৬৬ কোটি ১৭ লাখ টাকা

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক
Printed Edition

মিশ্র সূচকে আরো একটি সপ্তাহ পার করেছে দেশের পুঁজিবাজার। বিদায়ী সপ্তাহে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রধান সূচকটি সামান্য কমলেও অন্য দু’টি সূচকের কমবেশি উন্নতি ঘটে। তবে এ সময় বেড়েছে লেনদেন।

ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স গত সপ্তাহে ১৩ দশমিক ২৩ পয়েন্ট হ্রাস পায়। রোববার যখন সপ্তাহ শুরু করে তখন সূচকটির অবস্থান ছিল ৫ হাজার ২১৯ দশমিক ১৬ পয়েন্টে। কিন্তু বৃহস্পতিবার সপ্তাহশেষে সূচকটি স্থির হয় ৫ হাজার ২০৫ দশমিক ২৩ পয়েন্টে। একই সময় বাজারটির অন্য দুই সূচক ডিএসই-৩০ ও ডিএসই শরিয়াহ যথাক্রমে ১৩ দশমিক ২১ ও ৪ দশমিক ৮৫ পয়েন্ট উন্নতি ধরে রাখতে সক্ষম হয়।

প্রধান সূচকটির হ্রাস পাওয়ার পেছনে ওই সপ্তাহ শুরুতে মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিতর্কিত পাল্টাপাল্টি শুল্ক ঘোষণাই দায়ী মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কারণ দেশের পুঁজিবাজারের একটি বড় অংশজুড়েই রয়েছে টেক্সটাইল খাত যার রফতানির একটি অংশ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের ওপর নির্ভরশীল। ফলে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের ঘোষণায় সপ্তাহের শুরুতে এ খাতে বেশ কিছুটা দরপতন ঘটে। তবে পরে পাল্টা শুল্ক স্থগিতের ঘোষণার পর বৃহস্পতিবার এ খাতে কিছু কিছু কোম্পানি আবার হারানো দর ফিরে পেতে শুরু করে।

প্রধান সূচকটির অবনতির ফলে বিগত সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। সপ্তাহান্তে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ কোটি ৮১ লাখ টাকা যা আগের সপ্তাহ অপেক্ষা দশমিক ৩৩ শতাংশ কম। আগের সপ্তাহে বাজার মূলধন ছিল ৬ লাখ ৭৩ হাজার ৮৬৬ কোটি ১৭ লাখ টাকা।

সূচকের মিশ্র আচরণ সত্ত্বেও বিদায়ী সপ্তাহে ঢাকা শেয়ারবাজারে লেনদেনের উন্নতি ঘটেছে। গত সপ্তাহে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৪৩৬ কোটি ৩৭ লাখ টাকা যা এর আগের সপ্তাহ অপেক্ষা ১৯ দশমিক ৭৯ শতাংশ বেশি। ওই সময় ডিএসইর লেনদেন ছিল ১ হাজার ৬২৭ কোটি ১১ লাখ টাকা। এ সময় বাজারটির সাপ্তাহিক গড় লেনদেন আগের সপ্তাহের ৪০৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকা থেকে ১৯ দশমিক ৭৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৪৮৭ কোটি ২৭ লাখ টাকায়।

লেনদেনের পাশাপাশি বেড়েছে হাতবদল হওয়া সিকিউরিটিজ তথা শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড সংখ্যা। গত সপ্তাহে ডিএসইতে মোট ৯৮ কোটি ৬৩ লাখ শেয়ারের হাতবদল হয়েছে যা আগের সপ্তাহ অপেক্ষা ৩৪ দশমিক ৭৭ শতাংশ বেশি। আগের সপ্তাহে বাজারটিতে হাতবদল হয়েছিল ৫৮ কোটি ৫৫ লাখ শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড।

বিদেয়ী সপ্তাহে (৬ এপ্রিল থেকে ১০ এপ্রিল) ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেয়া ৩৯৫ কোম্পানির মধ্যে তালিকার শীর্ষে উঠে এসেছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন।

সপ্তাহজুড়ে কোম্পানটির প্রতিদিন গড় ২৪ কোটি ৮৫ লাখ শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যা ছিল ডিএসইর মোট লেনদেনের ৫ দশমিক ১০ শতাংশ।

লেনদেনের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানটির প্রতিদিন গড়ে ২৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যা ছিল ডিএসইর মোট লেনদেনের ৪ দশমিক ৭৯ শতাংশ। এ সময় লেনদেনের তৃতীয় স্থানে থাকা বিচ হ্যাচারিজ লিমিটেড প্রতিদিন গড়ে ১৭ কোটি ২০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন করেছে, যা ছিল একই সময় ডিএসইর মোট লেনদেনের ৩ দশমিক ০৮ শতাংশ।

এ ছাড়াও লেনদেনে সাপ্তাহিক শীর্ষ তালিকায় থাকা অন্যান্য কোম্পানি হলো শাইনপুকুর সিরামিকস, সান লাইফ ইন্স্যুরেন্স, এসিআই লিমিটেড, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, ওরিয়ন ইনফিউশন, এবিবি ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড এবং নাভানা ফার্মা।

গেল সপ্তাহে পুঁজিবাজারটির লেনদেনে অংশ নেয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দর বৃদ্ধির শীর্ষে উঠে এসেছে হাইডেলবার্গ ম্যাটেরিয়ালস লিমিটেড। জার্মানভিত্তিক সিমেন্ট খাতের এ বহুজাতিক কোম্পানিটির শেয়ারদর আগের সপ্তাহের তুলনায় ৫৯ টাকা ২০ পয়সা বা ২৭ দশমিক ৩৬ শতাংশ বেড়েছে যা টাকার অঙ্কে প্রায় ৬০ টাকা। এক সময় হাইডেলবার্গ সিমেন্ট নামে কোম্পানিটি তালিকাভুক্ত থাকলেও গত বছরের শুরুর দিকে কোম্পানিটির নাম পরিবর্তন করে হাইডেলবার্গ ম্যাটেরিয়ালস করে নেয়।

দরবৃদ্ধির তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসা আইএফআইসি ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ডের শেয়ারদর বেড়েছে ৮০ পয়সা বা ২৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ। আর ২০ শতাংশ শেয়ারদর বাড়ায় তালিকার তৃতীয়স্থানে অবস্থান করেছে এবিবি ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড।

সাপ্তাহিক দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় উঠে আসা কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টস ব্লেন্ডার্স পিএলসি, এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশ মিউচুয়াল ফান্ড ওয়ান, ইস্টার্ন ক্যাবলস, এমবি ফার্মাসিটিক্যালস, বিডি ল্যাম্পস, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন এবং জেএমআই সিরিঞ্জ অ্যান্ড মেডিক্যাল ডিভাইস লিমিটেড।

দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে (৬ এপ্রিল থেকে ১০ এপ্রিল) লেনদেনে অংশ নেয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দরপতনের শীর্ষে ছিল নিউ লাইন ক্লোদিংস লিমিটেড।

সূত্র মতে, সমাপ্ত সপ্তাহে নিউ লাইন ক্লোদিংস লিমিটেডের শেয়ারদর আগের সপ্তাহের তুলনায় ১ টাকা ৫০ পয়সা বা ১৫ দশমিক ৪৬ শতাংশ হ্রাস পায়। দরপতনের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসা এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলস লিমিটেডের কমেছে ৪ টাকা ১০ পয়সা বা ১৩ দশমিক ৯০ শতাংশ। আর ১৩ দশমিক ২৪ শতাংশ দরপতনের ফলে তালিকার তৃতীয়স্থানে অবস্থান করেছে সোনারগাঁও টেক্সটাইলস লিমিটেড ।

দরপতনের তালিকায় উঠে আসা কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে বিচ হ্যাচারি, ফুওয়াং ফুডস, সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস, হামিদ ফেব্রিকস, হাক্কানি পাল্প অ্যান্ড পেপার মিলস, অ্যাসোসিয়েটেড অক্সিজেন লিমিটেড এবং সার্ফ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড।