১১১ বিলিয়ন ডলারের বাজেটে কী রেখেছে মালয়েশিয়া

দেশটির প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম সংসদে উপস্থাপিত এই বাজেটে শিক্ষা, কর্মসংস্থান, উদ্যোক্তা উন্নয়ন এবং প্রযুক্তিগত খাতে ব্যাপক সংস্কার পরিকল্পনা তুলে ধরেছেন।

নয়া দিগন্ত ডেস্ক
Printed Edition

মালয়েশিয়া সরকার ২০২৬ অর্থবছরের জন্য ঘোষণা করেছে রেকর্ড ৪১৯.২০ বিলিয়ন রিঙ্গিতের (প্রায় ১১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) জাতীয় বাজেট, যার মূল লক্ষ্য দেশের অভ্যন্তরীণ উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং বিদেশী কর্মী নির্ভরতা ধীরে ধীরে কমানো। দেশটির প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম সংসদে উপস্থাপিত এই বাজেটে শিক্ষা, কর্মসংস্থান, উদ্যোক্তা উন্নয়ন এবং প্রযুক্তিগত খাতে ব্যাপক সংস্কার পরিকল্পনা তুলে ধরেছেন।

দেশটির জাতীয় সংবাদ সংস্থা বারনামাসহ প্রায় সব ক’টি মিডিয়া থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, এবারের বাজেট অনুযায়ী, ৩৩৮.২ বিলিয়ন রিঙ্গিত পরিচালন ব্যয় এবং ৮১ বিলিয়ন রিঙ্গিত উন্নয়ন ব্যয় হিসেবে বরাদ্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় আবার সর্বোচ্চ ৬৪.১ বিলিয়ন রিঙ্গিতের বরাদ্দ পেয়েছে, যা দেশের মানবসম্পদ উন্নয়নের প্রতি সরকারের অঙ্গীকারকে প্রতিফলিত করেছে।

সরকারি বিনিয়োগ সংস্থা (জিএলআইসিএস) এবং ফেডারেল স্ট্যাচুটরি বডিগুলো আগামী বছরে সম্মিলিতভাবে ৫০ বিলিয়ন রিঙ্গিত বিনিয়োগ করবে, যার মধ্যে ৩০ বিলিয়ন রিঙ্গিত জিএলআইসিএস, ১০ বিলিয়ন পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) এবং ১০.৮ বিলিয়ন অর্থ মন্ত্রণালয় অধীন কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ রয়েছে।

জনগণের কল্যাণে বাজেটে বেশ কয়েকটি তাৎপর্যপূর্ণ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সুমবানগান আসাস রাহমাহ (সারা) প্রকল্পের অধীনে প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকদের জন্য ১০০ রিঙ্গিত সহায়তা, গ্রেড ৫৬ ও তার নিচের সরকারি কর্মচারীদের জন্য এককালীন ৫০০ রিঙ্গিত অনুদান এবং সব অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের জন্য ২৫০ রিঙ্গিত পেনশনের আওতায় বিশেষ সহায়তা।

শিক্ষা খাতে বরাদ্দের পাশাপাশি, সরকার ৭.৯ বিলিয়ন রিঙ্গিত প্রযুক্তিগত ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের (টিভেট) জন্য বরাদ্দ করেছে, যা স্থানীয় দক্ষ জনবল গঠনে সহায়তা করবে। পাশাপাশি, ৬ বিলিয়ন রিঙ্গিত ভূমিপুত্র শিক্ষার্থীদের জন্য নির্ধারিত হয়েছে এবং পিটিপিটিএন নি¤œ আয়ের পরিবারের শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে উচ্চশিক্ষা ও ঋণ মওকুফ সুবিধা দিয়েছে এ বাজেটে।

অর্থনীতি ও উদ্যোক্তা উন্নয়নের ক্ষেত্রে, সরকার আগামী বছরে ৫০ বিলিয়ন রিঙ্গিত ঋণ ও গ্যারান্টি সুবিধা প্রদান করবে স্থানীয় ব্যবসা উন্নয়নে, যার মধ্যে ২.৫ বিলিয়ন রিঙ্গিত মাইক্রোফাইন্যান্স হিসেবে ব্যাংক সিম্পানান ন্যাশনাল (বিএসএন) ও তেকুন ন্যাশনালের মাধ্যমে বিতরণ করা হবে। এ ছাড়া বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য মাল্টিপল-এন্ট্রি ট্রাভেল পাসের মেয়াদ ছয় মাস থেকে ১২ মাসে বৃদ্ধি এবং আসিয়ান বিজনেস এন্টিটি (এবিই) স্ট্যাটাস চালুর ঘোষণা দেশের আঞ্চলিক অর্থনৈতিক একীকরণকে আরো শক্তিশালী করবে।

পরিবহন ও অবকাঠামো উন্নয়নে বাজেটে রয়েছে প্রাসারানা মালয়েশিয়া বেরহাদের এক বিলিয়ন রিঙ্গিত ব্যয়ে কেলানা জয়া এলআরটি লাইনের ২৬টি ট্রেন প্রতিস্থাপন প্রকল্প এবং জোহর বাহরুসিঙ্গাপুর আরটিএস লিঙ্ক চালুর আগে নতুন রুটসহ ২০০ মিলিয়ন রিঙ্গিত স্টেজ বাস সেবা উন্নয়ন পরিকল্পনা।

কৃষি খাতে ২.৬২ বিলিয়ন রিঙ্গিত ভর্তুকি বরাদ্দের মাধ্যমে সরকার স্থানীয় খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে চায়, যাতে কৃষকরা সার, বীজ ও উৎপাদন প্রণোদনা পেতে পারেন। এ ছাড়া ৭০০ মিলিয়ন রিঙ্গিতের পর্যটন বাজেট, যার মধ্যে ‘ভিজিট মালয়েশিয়া ২০২৬’ প্রচারণার জন্য ৫০০ মিলিয়ন রিঙ্গিত, দেশের পর্যটন খাতে নতুন প্রাণ সঞ্চার করবে। তা ছাড়া এ বছরের বাজেটে সাবাহ ও সারাওয়াকের জন্য রেকর্ড বরাদ্দ ঘোষণা করা হয়েছে যথাক্রমে ৬.৯ বিলিয়ন ও ৬ বিলিয়ন রিঙ্গিত, যা পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে।

এ দিকে সরকার প্রস্তাব করেছে যে, বিদেশী নাগরিক ও বিদেশী কোম্পানির নামে আবাসিক সম্পত্তি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে স্ট্যাম্প শুল্কের হার ৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৮ শতাংশ করা হবে এবং সবশেষে, আনোয়ার ইব্রাহিমের সরকার ‘লেমন ল’ নামে নতুন ভোক্তা সুরক্ষা আইন চালুর পরিকল্পনা করেছে এ বাজেটে, যা ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন ক্রয়ে ক্রেতাদের আইনি সুরক্ষা দিলেও অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এবারের বাজেট মালয়েশিয়াকে বিদেশী শ্রমনির্ভরতা থেকে ধীরে ধীরে মুক্ত করে স্থানীয় মানবসম্পদ ও উদ্যোক্তাদের নেতৃত্বে নতুন এক এআই টেকনোলজি সমৃদ্ধ আত্মনির্ভর অর্থনীতির পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে।