সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) শ্রমবাজার দীর্ঘ কয়েক বছর ধরেই বন্ধ হয়ে রয়েছে। তবে কোন কারণে বন্ধ হয়ে আছে তা নিয়ে কানাঘুষা রয়েছে নানা মহলে। কূটনৈতিক তৎপরতা চালানোর পরও এখনো বাংলাদেশের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ শ্রমবাজারে ঢোকা সম্ভব হয়নি। কবে নাগাদ খুলবে তা-ও কেউ সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারছে না।
তবে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুসের হস্তক্ষেপে ইউএই সরকার বাংলাদেশীদের স্বল্প পরিসরে ভিজিট ভিসা দিতে রাজি হয়েছে বলে সম্প্রতি জানা গেছে।
যদিও এর আগে দেশটিতে অবস্থান করা হাজার হাজার প্রবাসী বাংলাদেশী শ্রমিক ভিসা ট্রান্সফার জটিলতার মধ্যে পড়ে অবৈধ হয়েছেন। এই তালিকায় আরো অসংখ্য প্রবাসী বাংলাদেশী শ্রমিক রয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব অবৈধ হওয়া এবং অবৈধ হতে যাওয়া প্রবাসী শ্রমিকরা সম্প্রতি আমিরাতে বাংলাদেশ দূতাবাসে নতুন রাষ্ট্রদূত হিসাবে নিয়োগ পাওয়া তারেক আহমেদের কাছে কর্মিভিসা ট্রান্সফার জটিলতা থেকে উত্তরণে পথ খুঁজে বের করতে পদক্ষেপ নেয়ার অনুরোধ জানান।
গত ১০ এপ্রিল আবুধাবিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ পাওয়া তারেক আহমেদ দেশটির রাষ্ট্রপতি শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের কাছে পরিচয়পত্র পেশ করেন। এ উপলক্ষে একটি জমকালো অনুষ্ঠানের আয়োজনও করা হয়। ইউএইর রাষ্ট্রপতির সাথে সংক্ষিপ্ত মতবিনিময়ের সুযোগে দেশটিতে বসবাসকারী প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রতি তার সদয় অনুভূতির জন্য রাষ্ট্রদূত কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
ওই অনুষ্ঠানের পর নতুন রাষ্ট্রদূতের কাছে প্রবাসী বাংলাদেশী শ্রমিকরা তাদের কস্টের কথাগুলো নানাভাবে বলার চেষ্টা করছেন। কিন্তু কিভাবে তারা বলবেন সেটি খুঁজে পাচ্ছেন না। তবে প্রাথমিকভাবে তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেই তাদের কষ্টের কথাগুলো শেয়ার করে দ্রুত সমস্যা থেকে উত্তরণে বিষয়ে রাষ্ট্রদূতকে অবহিত করার চেষ্টা করছেন।
শেখ মাহবুব আহসান নামে একজন বাংলাদেশী রাষ্ট্রদূতের উদ্দেশ্য বলেন, ‘আরব আমিরাতের ভিসা কি আর খুলবে না?’
অপর এক প্রবাসী বাংলাদেশী বলেন, সম্মানিত রাষ্ট্রদূত আমরা আমিরাত প্রবাসীরা অনেক বেশি সমস্যার মধ্যে আছি। ভিসা ট্রান্সফার নিয়ে এই পর্যন্ত কয়েক হাজার প্রবাসী অবৈধ হয়ে গেছে এবং অসংখ্য প্রবাসী অবৈধ হওয়ার অবস্থায় আছে। শুধু ভিসা ট্রান্সফার না করতে পেরে। দয়া করে আমাদের ভিসা ট্রান্সফার খোলার ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
গতকাল শনিবার রাতে ঢাকায় অবস্থানরত সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিজনেস ভিসাধারী বাংলাদেশী এক ব্যবসায়ী নয়া দিগন্তকে পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বলেন, আবুধাবিতে বাংলাদেশী যেসব শ্রমিক ভিজিট ভিসায় গিয়ে কর্মসংস্থান ভিসায় ট্রান্সফার করাতে পারেনি তারাই মূলত দেশটিতে অবৈধ হয়ে পড়েছেন। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ভিজিট ভিসায় যাওয়ার পর যেসব বাংলাদেশীর ডেট ফেল হয়েছে তাদের ইউএই সরকার ভিসা রিনিউ করার সুযোগ দিলেও এক কোম্পানি থেকে আরেক কোম্পানিতে ট্রান্সফার হতে দিচ্ছে না। যারা অবৈধ হয়ে গেছে তাদের বিষয়ে ওই ব্যবসায়ী বলেন, তাদের এখন প্রতি মুহূর্তে সমস্যার মধ্যে দেশটিতে সময় পার করতে হচ্ছে। সরকারি কোনো সুযোগ সুবিধা তারা পাচ্ছে না। উপায় না পেয়ে অনেকে দেশে ফিরে আসছেন। অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ইউএই সরকার ট্রান্সফার দিচ্ছে না কেন এটা একান্তই তাদের বিষয়। তবে আমাদের বাংলাদেশীদের মধ্যে কিছু সংখ্যক দেশটিতে গিয়ে অনেক অপরাধে জড়িয়ে পড়েছেন। এমনও ঘটনা ঘটেছে ডাক্তার না হয়েও জাল সার্টিফিকেট ফার্মেসিতে কাজ করছে ডাক্তার পরিচয়ে। আমরা এখন শুনতে পাচ্ছি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আন্তরিক চেষ্টা চালিয়ে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা ভিজিট ভিসা চালু করাতে সক্ষম হয়েছেন। ইউএই সরকার স্বল্প পরিসরে বাংলাদেশীদের ভিজিট ভিসা দেয়া শুরু করেছে। এখন এক কোম্পানি থেকে আরেক কোম্পানিতে ভিসা ট্রান্সফার করার সুযোগ দেয়া অনেক বাংলাদেশী দেশটিতে বৈধতা পাবে এবং কাজ করে দেশে বৈধভাবে রেমিট্যান্স পাঠাত পারবে। তবে যেসব বাংলাদেশী শ্রমিক বা অন্য পেশার লোকজন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হলে দেশটিতে বাংলাদেশীদের সুনাম আরো বাড়বে।
প্রবাসী কল্যাণ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গণ-আন্দোলনে দেশ ছেড়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক্সপো ২০২০ ঘিরে আয়োজিত ভোটাভুটিতে ইউএইর পরিবর্তে তখন রাশিয়াকে ভোট দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এরপরই ইউএই সরকার ক্ষুব্ধ হয়ে বাংলাদেশের শ্রমবাজার বন্ধ করে দেয়, যা এখনো অব্যাহত আছে। উল্লেখ্য, দেশটিতে বৈধ অবৈধ মিলিয়ে বর্তমানে ১৫ লাখের মতো বাংলাদেশী অবস্থান করছেন।