‘মধু সিন্ডিকেটে’ জিম্মি রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকরা

লেবাননে নতুন কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া জানালো দূতাবাস

মনির হোসেন
Printed Edition

লেবাননে বাংলাদেশ থেকে নতুন কর্মী নিয়োগের আগে নিয়োগকারী এবং বাংলাদেশী কর্মীর মধ্যকার চুক্তিপত্র সত্যায়ন করার বিষয়ে পাঁচটি ধাপ মানার কথা জানিয়েছে বৈরুতের বাংলাদেশ দূতাবাস।

বাংলাদেশ দূতাবাসের দূতালয় প্রধান মোহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এমন তথ্য জানানো হয়েছে।

এ দিকে বাংলাদেশ থেকে লেবাননে কর্মী পাঠাতে দুই সহস্রাধিক বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সি থাকলেও শুধু চিহ্নিত একটি এজেন্সি দেশটিতে কর্মী পাঠানোর প্রসেসিংয়ের কাজ পাওয়ায় অন্যান্য এজেন্সির মালিকদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা অভিযোগ করে বলছেন, লেবাননের বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে ‘মধু ওভারসীস’ নামের একটি এজেন্সির মাধ্যমে যাতে ভিসা প্রসেসিং করানো হয় সেজন্য তারা ভিসা পেপারের কোনো এক জায়গায় মধু ওভারসিস লেখা নামের একটি সিল মেরে দেয়া হচ্ছে বলেও একাধিক ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে।

তবে এ প্রসঙ্গে বৈরুতের বাংলাদেশ দূতাবাসের দূতালয় প্রধান মোহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন নয়া দিগন্তের প্রতিবেদককে স্পষ্ট করে বলেন, দূতাবাস থেকে কোনো রিক্রুটিং এজেন্সির পক্ষে কখনোই কোনো সুপারিশ করার সুযোগ নাই। যারা বলছে, তারা বাড়িয়ে বলছে। এ ক্ষেত্রে অতিরিক্ত টাকা আদায়সহ অন্য কোনো ধরনের অনিয়ম হয়ে থাকে, তাহলে সেটি ঢাকার জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো থেকেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা। কারণ সেখান থেকেই লেবাননগামী কর্মীদের যাওয়ার চূড়ান্ত ক্লিয়ারেন্স দেয়া হয় (বহির্গমন)।

বিজ্ঞপ্তি মোতাবেক দূতাবাস থেকে জানানো হয়, চুক্তিপত্র সত্যায়নের ধাপগুলোর মধ্যে নিয়োগকারী অথবা বৈধ প্রতিনিধি কর্তৃক সংশ্লিষ্ট কাগজপত্রসহ কর্মী নিয়োগের চাহিদাপত্র দূতাবাস বরাবর দাখিল করতে হবে। দ্বিতীয় ধাপে দূতাবাস থেকে চাহিদাপত্র অনুমোদনপত্র গ্রহণ করা। তৃতীয় ধাপে লেবাননের জেনারেল সিকিউরিটি থেকে ভিসা সংগ্রহ করা। চতুর্থ ধাপে দূতাবাস থেকে নিয়োগকারী এবং বাংলাদেশী কর্মীর মধ্যকার চুক্তির সত্যায়ন করা। পঞ্চমধাপে দূতাবাস থেকে সত্যায়ন করা চুক্তিপত্রের একটি তালিকা প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোতে পাঠানো।

দূতাবাস থেকে জানানো হয়েছে, লেবাননে বাংলাদেশ থেকে নতুন কর্মী নিয়োগের জন্য চুক্তিপত্র সত্যায়ন প্রক্রিয়ায় নিয়োগকারী চাইলে লেবানন শ্রমমন্ত্রণালয় কর্তৃক অনুমোদিত যে কোনো রিক্রুটিং এজেন্সির সহায়তা গ্রহণ করতে পারে অথবা সরাসরি নিয়োগকারী নিজেই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে পারে। দূতাবাস থেকে আরো বলা হয়, সত্যায়িত চুক্তিপত্রের বিপরীতে ঢাকা থেকে স্মার্টকার্ড সংগ্রহ করাসহ বাংলাদেশে আনুষাঙ্গিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য নিয়োগকারী বিএমইটি কর্তৃক অনুমোদিত যেকোনো রিক্রুটিং এজেন্সির সহায়তা গ্রহণ করতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়।

লেবাননে নতুন কর্মী নিয়োগের ভিসা প্রসেসিংয়ের বিষয়ে গত সোমবার ঢাকার একাধিক রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা নয়া দিগন্তকে নিজেদের পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বলেন, লেবাননে যে পরিমাণ লোক যাচ্ছে সেই লোকগুলোর বেশির ভাগই শুধু ‘মধু ওভারসিস’ নামের একটি রিক্রুটিং এজেন্সিই প্রসেসিং করতে পারছে। বিএমইটিতে থাকা তালিকা ঘাটলেই এর প্রমাণ পাওয়া যাবে। ফাইল ঘাটলে দেখবেন- শুধু মধু ওভারসিস, মধু ওভারসিস আর মধু ওভারসিস। এটা কিভাবে সম্ভব? এক প্রশ্নের উত্তরে তারা বলেন, আমরা যতটুকু জানি লেবাননে থাকা রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো নিয়োগকারীদের কাছ থেকে কাজ নিয়ে ওই একটি এজেন্সির নাম উল্লেখ করে ভিসা প্রসেসিংয়ের জন্য অনলাইনে ঢাকায় পাঠায়। যার কারণে মধু ওভারসিস ছাড়া আর কারো কাছে যাওয়ার তাদের খুব একটা সুযোগ নাই! এ ক্ষেত্রে বেশির ভাগ এজেন্সি অতিরিক্ত টাকা খরচ করেই ওই এজেন্সি থেকেই কর্মীর ভিসা প্রসেসিং করাতে বাধ্য হচ্ছেন। এই বিষয়টি যাদের দেখার কথা তারা নীরব থাকায় লেবাননের শ্রমবাজারটি এখনো মধু সিন্ডিকেটের দখলে রয়েছে বলে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এমন অভিযোগ করে কাকরাইলের একাধিক রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক আরো বলছেন, লেবাননে ভিসা ইস্যুর পর সত্যায়নের ক্ষেত্রে ঢাকার কোনো রিক্রুটিং এজেন্সির নাম যদি উল্লেখ না করা থাকে তাহলে প্রসেসিংয়ের কাজটি যে কোনো রিক্রুটিং এজেন্সি করতে পারে। এতে বাড়বে প্রতিযোগিতা। তখন প্রসেসিং খরচ ৩০ হাজার থেকে কমে ছয় হাজারে চলে আসবে। এই বিষয়টি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল স্যার যেন গুরুত্ব দিয়ে দেখেন সে ব্যাপারে তারা অনুরোধ জানিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে জানতে গত সোমবার বিকেলে লেবাননের বৈরুতে থাকা বাংলাদেশ দূতাবাসের দূতালয় প্রধান মোহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন নয়া দিগন্তকে বলেন, শুধু মধু ওভারসিস নয় আরো কয়েকটি এজেন্সি আমার জানা মতে কাজ করছে। তবে দূতাবাসের পক্ষ থেকে কোনো এজেন্সিকে কখনো কোনো বাড়তি সুবিধা দেয়া হচ্ছে না। এটা যারা বলছে, তারা বাড়িয়ে বলছে। দূতাবাস চলছে সম্পূর্ণ নিয়মের মধ্যে। এরপরও কোনো অনিয়ম যদি হয়ে থাকে তাহলে সেটি দেখবেন বাংলাদেশ চ্যাপ্টার থেকে। দূতাবাসের দেখার বিষয় না।