বিনোদন প্রতিবেদক
পাকিস্তানের জনপ্রিয় অভিনেত্রী হানিয়া আমিরের ঢাকায় আগমন শুধু একটি ব্যক্তিগত সফর ছিল না- এটি ছিল তার ভক্তদের জন্য এক আবেগঘন মুহূর্ত, যার রেশ এখনো ছড়িয়ে রয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে ঢাকায় এসে পৌঁছান তিনি। ১৯ সেপ্টেম্বর শুক্রবার, ফেসবুকে নিজের একটি ছবি পোস্ট করে ঢাকায় থাকার খবরটি জানান দেন, সাথে যুক্ত করেন বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের পতাকার ইমোজি। হানিয়ার এই সফরের আগে সানসিল্ক বাংলাদেশের ফেসবুক পেজেও একটি ভিডিও প্রকাশিত হয়, যা মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে পড়ে। ২০ সেপ্টেম্বর তিনি রাজধানীর একটি হোটেলে বিশেষ এক অনুষ্ঠানে অতিথি হয়ে অংশ নেন এবং ২১ সেপ্টেম্বর অংশ নেন একটি পেশাদার ফটোশুটে। ঢাকায় অবস্থানকালে তিনি বেশ কিছু মুহূর্ত শেয়ার করেছেন ভক্তদের সাথে, যা তাকে ঘিরে আগ্রহকে আরো বাড়িয়ে দেয়। তার এই অস্থায়ী সফরের বাইরে, প্রশ্ন উঠছে- কীভাবে ও কেন একজন পাকিস্তানি অভিনেত্রী এ দেশের দর্শকদের এতটা আপন হয়ে উঠলেন? হানিয়া আমিরের জনপ্রিয়তা শুধু তার সৌন্দর্য বা পর্দার উপস্থিতিতে সীমাবদ্ধ নয়; বরং এটি এক গভীর সাংস্কৃতিক সংযোগ ও সমসাময়িক তরুণদের অনুভূতির প্রতিফলন।
অভিনয়ে হানিয়ার বিচরণ নানা ধারায়। কখনো হাস্যরসাত্মক, কখনো আবেগঘন, আবার কখনো প্রতিবাদী নারী চরিত্রে দেখা গেছে তাকে। বিশেষ করে ‘মেরে হামসাফার’ নাটকে তার অভিনীত ‘হালা’ চরিত্রটি তাকে এনে দিয়েছে আলাদা এক পরিচিতি। এই চরিত্রে তিনি এক নির্যাতিত, অবহেলিত নারীর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন, যিনি শেষ পর্যন্ত নিজের আত্মবিশ্বাস ও মানবিক শক্তির মাধ্যমে সমাজে নিজের জায়গা করে নেন। হানিয়ার সংবেদনশীল, মাপা ও বাস্তবধর্মী অভিনয় এই চরিত্রকে জীবন্ত করে তোলে। বাংলাদেশে এই নাটকটির বিপুল জনপ্রিয়তা প্রমাণ করে, তিনি শুধু পর্দার চরিত্র নন- একজন অনুভূতির নামও বটে। বাংলাদেশে পাকিস্তানি নাটকের জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে। ফেসবুকে পাকিস্তানি নাটকভিত্তিক একাধিক গ্রুপ গড়ে উঠেছে, যেখানে নিয়মিত আলোচনা হয় উর্দু সিরিজ নিয়ে। অনেকেই সিরিজের ভাষাগত বাধা অতিক্রম করে সাবটাইটেল বা অনুবাদ নির্ভর করে এই নাটকগুলো উপভোগ করেন। ইউটিউব ও ওটিটি প্ল্যাটফর্মে সহজলভ্যতা নাটকগুলোর জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে দিতে বড় ভূমিকা রেখেছে। গল্পের শালীনতা, চরিত্রের বাস্তবতা, নাটকের সংলাপ ও পারিবারিক টানাপড়েনের নিখুঁত চিত্রণ এসব নাটককে অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য করে তুলেছে বাংলাদেশের সাধারণ দর্শকদের কাছে।
এই নাটকগুলোতে প্রেম, সম্পর্কের জটিলতা, পারিবারিক মান-অভিমান, মায়া-মমতা- সব কিছুই এক আন্তরিক আবহে উঠে আসে। বাংলাদেশের সমাজেও প্রায় একই ধরনের বাস্তবতা বিরাজ করে। সে কারণেই দর্শকরা নিজেদের জীবনের প্রতিচ্ছবি খুঁজে পান এই সিরিজগুলোতে। হানিয়া আমির যে নাটকগুলোতে অভিনয় করেছেন, সেগুলোতেও এই বাস্তবতার ছাপ রয়েছে প্রবলভাবে, যা তাকে বাংলাদেশের দর্শকদের কাছে সহজে গ্রহণযোগ্য করে তুলেছে। তবে শুধু নাটক বা অভিনয় নয়, হানিয়ার জনপ্রিয়তার আরেকটি বড় ক্ষেত্র হলো তার সোশ্যাল মিডিয়া উপস্থিতি। ইনস্টাগ্রামে তার ফলোয়ার সংখ্যা কয়েক লাখ ছাড়িয়েছে। নিয়মিত ফ্যাশন, বিউটি, ভ্রমণ ও ব্যক্তিগত মুহূর্তগুলো শেয়ার করেন তিনি। তার ‘স্টাইল স্টেটমেন্ট’ ও ফ্যাশন সেন্স তরুণীদের মধ্যে অনুসরণযোগ্য হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি, টিকটকে তার নাচের ভিডিও ও মজার ক্লিপগুলো প্রায়ই ভাইরাল হয়। এই প্ল্যাটফর্মগুলোয় তার সরলতা, হাসিখুশি স্বভাব, আত্মবিশ্বাস ও উচ্ছ্বলতা তাকে অনেক তরুণ-তরুণীর চোখে আদর্শ করে তুলেছে। অনেক বাংলাদেশী তরুণ তাকে সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘ক্রাশ’ বলেও উল্লেখ করে থাকেন। হানিয়া শুধুই একজন অভিনেত্রী নন, তিনি একজন সফল ইনফ্লুয়েন্সারও।