র্দীঘ পতন শষেে পুঁজবিাজার সূচকরে নামমাত্র উন্নতি

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক
Printed Edition

টানা পতনের পর সূচকের নামমাত্র উন্নতি ঘটেছে পুঁজিবাজারে। গতকাল বুধবার দেশের দুই পুঁজিবাজারই লেনদেন শেষে সূচকের সামান্য উন্নতি ধরে রাখে। দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স গতকাল ২ দশমিক ৫৫ পয়েন্ট বৃদ্ধি পায়। ডিএসই-৩০ ও শরিয়াহ সূচকের উন্নতি রেকর্ড করা হয় যথাক্রমে দশমিক ০৬ ও দশমিক ৯১ পয়েন্ট। দেশের দ্বিতীয় পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই ৪ দশমিক ৩৭ পয়েন্ট উন্নতি ধরে রাখতে সক্ষম হয়। সিএসই-৩০ ও সিএসসিএক্স সূচকের উন্নতি ঘটে যথাক্রমে ৩ দশমিক ২৬ ও ১ দশমিক ১০ পয়েন্ট। এর আগে টানা পাঁচ কর্মদিবসেই সূচক হারায় দুই পুঁজিবাজার।

ঢাকা স্টকে প্রধান সূচকটি ৫ হাজার ১৯৪ দশমিক ১০ পয়েন্ট থেকে শুরু করে বেলা ১১টায় পৌঁছে যায় ৫ হাজার ২১৩ পয়েন্টে। লেনদেনের এ পর্যায়ে সূচকের উন্নতি রেকর্ড করা হয় প্রায় ১৭ পয়েন্ট। এখান থেকেই শুরু হয় বিক্রয়চাপ। বেলা ১টায় সূচকটি নেমে আসে ৫ হাজার ১৯৩ পয়েন্টে। তবে শেষ দিকে বিক্রয়চাপ কিছুটা হ্রাস পেলে সূচকের নামমাত্র উন্নতি ধরে রাখে বাজারটি।

সূচকের উন্নতি ঘটলেও তার কোনো প্রভাব ছিল না লেনদেনে। ডিএসইতে গতকাল ৩১৮ কোটি টাকার লেনদেন নিষ্পত্তি হয়, যা আগের দিন অপেক্ষা ২০ কোটি টাকা কম। মঙ্গলবার বাজারটির লেনদেন ছিল ৩৩৮ কোটি টাকা। মাত্র ছয় কর্মদিবসে দেশের প্রধান এ বাজারটির লেনদেন নেমে আসে অর্ধেকে। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ডিএসইতে লেনদেন হয় ৬০৭ কোটি টাকা।

বাজারে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ ক্রমেই হ্রাস পাওয়ায় প্রায় প্রতিদিনই লেনদেন কমছে। পুুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা এর কারণ হিসেবে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও তারল্য সঙ্কটকেই দায়ী করছেন। তাদের মতে, বিনিয়োগকারীরা ২০২০ সালের মহামারীতে বড় ধরনের লোকসানের শিকার হয়। পরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে লোকসানের পাল্লা আরো ভারী হতে থাকে। সর্বশেষ গত বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে দেশের আর্থিক অবস্থার সঠিক চিত্র জানার পর বাজারের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা শূন্যে নেমে আসে। এর ফলে দেখা যায় সূচকের টানা উন্নতি যেমন বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়ায়, তেমনি সূচকের টানা অবনতিতে আবার তারা হাত গুটিয়ে নেন। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও আর্থিক শৃঙ্খলা ফিরে না আসা পর্যন্ত পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি আশা করা যায় না বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

গতকাল টানা দ্বিতীয় দিনের মতো ডিএসইর লেনদেনের শীর্ষে উঠে আসে ওষুধ খাতের কোম্পানি ওরিয়ন ইনফিউশন। ১২ কোটি ৫৬ লাখ টাকায় কোম্পানিটির তিন লাখ ২৮ হাজার শেয়ার হাতবদল হয় এ দিন। আট কোটি ৬৯ লাখ টাকায় ১৯ লাখ ৪৬ হাজার শেয়ার বেচাকেনা করে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল সোনারগাঁও টেক্সটাইলস। ডিএসইর লেনদেনের শীর্ষ ১০ কোম্পানির অন্যগুলো ছিল যথাক্রমে ব্র্যাক ব্যাংক, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, লাবেলো আইসক্রিম, শাইনপুকুর সিরামিকস, হাক্কানি পেপার অ্যান্ড পাল্প, আইএফআইসি ব্যাংক, লিনডে বাংলাদেশ ও লিগেসি ফুটওয়্যার।

দিনের মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষে ছিল হাক্কানি পেপার অ্যান্ড পাল্প। গতকাল ৯ দশমিক ৯১ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি ঘটে কোম্পানিটির। ৯ দশমিক ৫৯ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি পেয়ে দিনের দ্বিতীয় স্থানে ছিল ইন্দু বাংলা ফার্মা। উল্লেখযোগ্য মূল্যবৃদ্ধি পাওয়া অন্যান্য কোম্পানির মধ্যে ছিল লিগেসি ফুটওয়্যার, এনার্জি প্যাক, আনওয়ার গ্যালভেনাইজিং, জাহিন টেক্সটাইলস, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও জেমিনি সি ফুড।

দিনের দরপতনের তালিকার শীর্ষে ছিল সোনারগাঁও টেক্সটাইলস। গতকাল ৯ দশমিক ২৮ শতাংশ দর হারায় বস্ত্র খাতের এ কোম্পানি। এ ছাড়া প্রকৌশল খাতের আরএসআরএম স্টিলস ৮ দশমিক ৮২, নিউলাইন ক্লদিং ৭ দশমিক ৭৬ ও আরামিট সিমেন্ট ৭ দশমিক ৪৫ শতাংশ দর হারায়। এ সময় দর হারানো অন্যান্য কোম্পানির মধ্যে আরো ছিল জুট স্পিনার্স, গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স, এইচআর টেক্সটাইল, প্রাইম টেক্সটাইলস, শাইনপুকুর সিরামিকস ও রিজেন্ট টেক্সটাইলস।

ডিএসইতে গতকাল লেনদেন হওয়া কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের সংখ্যা ছিল ৩৯৭টি। এর মধ্যে ১২৩টির দাম বাড়ে, ১৮৪টির কমে এবং ৯০টির দাম অপরিবর্তিত থাকে। অপরদিকে চট্টগ্রাম শেয়ার বাজারে লেনদেন হওয়া ২০৮টি সিকিউরিটিজের মধ্যে ৮৬টির দাম বাড়ে, ৮৬টির কমে এবং ৩৬টি সিকিউরিটিজের দাম অপরিবর্তিত থাকে।