নিউ ইয়র্কে মামদানির জয় ডেমোক্র্যাটদের ভবিষ্যতের জন্য কতটা অর্থবহ?

মামদানির জয়কে সমর্থকরা ডেমোক্র্যাটিক পার্টির জন্য ট্রাম্পযুগে একটি সাহসী রূপরেখা হিসেবে দেখছেন

Printed Edition
নিউ ইয়র্কে মামদানির জয় ডেমোক্র্যাটদের ভবিষ্যতের জন্য কতটা অর্থবহ?
নিউ ইয়র্কে মামদানির জয় ডেমোক্র্যাটদের ভবিষ্যতের জন্য কতটা অর্থবহ?

আলজাজিরা

নিউ ইয়র্ক সিটি মেয়র নির্বাচনে জোহরান মামদানির বিজয় মার্কিন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির অভ্যন্তরীণ গতিপথে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় নির্দেশ করছে। একজন খাঁটি প্রগতিশীল এবং ডেমোক্র্যাটিক সোশালিস্ট হিসেবে মামদানির এই জয় শুধু একটি শহরের নেতৃত্ব পরিবর্তন নয়, বরং এটি একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক বার্তা-ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ভবিষ্যৎ কোন পথে এগোবে তা নিয়ে নতুন বিতর্কের সূচনা।

মামদানি তার প্রচারণায় সাশ্রয়ী আবাসন, শ্রমিক অধিকার, পুলিশ সংস্কার, এবং অভিবাসী সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্তির বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। এসব প্রতিশ্রুতি মূলধারার ডেমোক্র্যাটিক নেতৃত্বের তুলনায় অনেক বেশি বামপন্থী। ফলে তার বিজয় প্রমাণ করে- নিউ ইয়র্কের মতো শহরে তরুণ, শ্রমজীবী এবং প্রগতিশীল ভোটারদের মধ্যে এই বার্তা গভীরভাবে প্রতিধ্বনিত হয়েছে।

এই নির্বাচনে মামদানি সাবেক গভর্নর এবং ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মধ্যপন্থী ধারার প্রবক্তা অপ্রন্ড্রু কুয়োমোকে পরাজিত করেছেন। কুয়োমো এই নির্বাচনকে ‘পার্টির অভ্যন্তরীণ গৃহযুদ্ধ’ বলে অভিহিত করেছেন, যা স্পষ্টতই ডেমোক্র্যাটিক পার্টির দুই মেরুর মধ্যে দ্বন্দ্বকে তুলে ধরে : একদিকে প্রগতিশীল, সমাজতন্ত্রী চিন্তাধারা; অন্যদিকে মধ্যপন্থী, করপোরেট-ঘনিষ্ঠ নীতি।

মামদানির বিজয়কে অনেক বিশ্লেষক একটি ‘বেলওয়েদার’ অর্থাৎ ভবিষ্যতের রাজনৈতিক প্রবণতার পূর্বাভাস হিসেবে দেখছেন। বিশেষ করে ২০২৬ সালের গভর্নর নির্বাচন এবং কংগ্রেসের মধ্যবর্তী নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক পার্টি কী বার্তা নিয়ে এগোবে, তা নির্ধারণে এই জয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

তবে এই বিজয় পার্টির জন্য কিছু চ্যালেঞ্জও নিয়ে এসেছে। মধ্যপন্থী ডেমোক্র্যাটরা আশঙ্কা করছেন, মামদানির মত সমাজতন্ত্রী নেতাদের উত্থান রিপাবলিকানদের জন্য একটি সুযোগ তৈরি করতে পারে তারা ‘চরমপন্থী’ তকমা দিয়ে পুরো পার্টিকে আক্রমণ করতে পারে। বিশেষ করে মধ্য-আমেরিকার রক্ষণশীল রাজ্যগুলোতে এই বার্তা নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।

অন্যদিকে, মামদানির বিজয় ডেমোক্র্যাটিক সোশালিস্টস অব আমেরিকার (ডিএসএ) মতো সংগঠনগুলোকে আরো আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে। তারা এখন আরো বেশি প্রার্থী মনোনয়নের কথা ভাবতে পারে, বিশেষ করে শহরভিত্তিক ও শ্রমজীবী জনগোষ্ঠীর মধ্যে।

এই প্রেক্ষাপটে, ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সামনে দু’টি পথ খোলা; তারা হয় মামদানির মত প্রগতিশীল নেতাদের বার্তা গ্রহণ করে একটি নতুন রাজনৈতিক জোট গঠন করবে, অথবা মধ্যপন্থী অবস্থান ধরে রেখে বিভক্ত পার্টিকে একত্রিত করার চেষ্টা করবে। যেকোনো পথই হোক, মামদানির বিজয় একটি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে তা হল, নতুন প্রজন্ম পরিবর্তন চায় এবং তারা সেই পরিবর্তনের নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত।