১২ বছর পর ফিরল পাকিস্তান আইডল

Printed Edition

সাকিবুল হাসান

১২ বছর পর পাকিস্তানে ফিরে এসেছে বহুল প্রতীতি সঙ্গীতভিত্তিক প্রতিযোগিতা ‘পাকিস্তান আইডল’, যার নতুন পর্ব শুরু হয়েছে দেশের ছয়টি বড় শহর থেকে অডিশনের মাধ্যমে। এবারের আয়োজনে নতুন রূপ, আন্তর্জাতিক মানের নির্মাণ এবং পাকিস্তানের অনাবিষ্কৃত সঙ্গীত প্রতিভাকে তুলে ধরার প্রতিশ্রুতি নিয়ে শুরু হয়েছে এই প্রতিযোগিতা।

বিশ্ববিখ্যাত সঙ্গীত প্রতিযোগিতা সিরিজ ‘আইডল’-এর পাকিস্তানি সংস্করণটি প্রথমবার প্রচারিত হয় ২০১৩ সালে। দীর্ঘ বিরতির পর ২০২৫ সালের জন্য এই আসর নতুন করে শুরু করেছে ‘এমএইচএল গ্লোবাল’ নামের একটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান, যারা ‘ফ্রেমান্টল লিমিটেড’ নামক ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অনুষ্ঠানটির স্বত্ব অর্জন করেছে।

এবারের প্রতিযোগিতা প্রযোজনা করছেন ‘বাদর ইকরাম’, আর বিচারকের আসনে বসেছেন সঙ্গীতাঙ্গনের চার পরিচিত মুখ, জনপ্রিয় অভিনেতা ও গায়ক ‘ফাওয়াদ খান’, কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী ‘রহত ফতেহ আলি খান’, সাবেক স্ট্রিংস ব্যান্ড সদস্য ‘বিলাল মাকসুদ’ এবং একমাত্র নারী বিচারক, সুপরিচিত সঙ্গীতশিল্পী ‘জেব বানগাশ’।

নতুন মৌসুমের প্রথম ও দ্বিতীয়পর্ব সম্প্রচারিত হয়েছে যথাক্রমে ৪ ও ৫ অক্টোবর, একযোগে সাতটি টেলিভিশন চ্যানেলে। করাচি, লাহোর, ইসলামাবাদ, রাওয়ালপিন্ডি, মুলতান ও সুক্কুর শহরের অডিশন দিয়ে শুরু হয়েছে দেশের কণ্ঠশিল্পী বাছাইপর্ব, যেখান থেকে নির্বাচিত হচ্ছেন শীর্ষ ৩০ জন প্রতিযোগী। পরবর্তীতে তাদের মধ্য থেকে চূড়ান্ত ১৬ জনকে নিয়ে হবে মূল প্রতিযোগিতা।

রহত ফতেহ আলি খান বলেন, ‘পাকিস্তানের প্রতিভাবান তরুণরাই আমাদের মূল শক্তি। তাদের জন্য যদি আমরা একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি না করি, তাহলে সেটা হবে অন্যায়। এবার আমরা অনেক বেশি প্রস্তুতি নিয়ে এসেছি। এত বছর পর শো ফিরেছে, এটা যেমন দুঃখজনক, তেমনি আশার আলো।’

প্রযোজক বাদর ইকরাম বলেন, এই অনুষ্ঠান নির্মাণ আমার জন্য গর্বের এবং একই সঙ্গে দায়িত্বের। আমরা এমন একটি প্রতিযোগিতা তৈরি করছি, যা পাকিস্তানের বৈচিত্র্যপূর্ণ সংস্কৃতি, আবেগ এবং কাঁচা প্রতিভাকে তুলে ধরবে। অডিশন থেকে চূড়ান্তপর্ব পর্যন্ত আমাদের টিম দিনরাত পরিশ্রম করছে যেন দর্শকরা একটি বিশ্বমানের অনুষ্ঠান দেখতে পান।’

অন্যদিকে, প্রতিযোগীদের অভিজ্ঞতাও ছিল ইতিবাচক। ‘মাহম তাহির’, যিনি ‘রহিম ইয়ার খান’ জেলা থেকে এসেছেন এবং শীর্ষ ৩০-এ জায়গা করে নিয়েছেন, বলেন, ‘অডিশন অভিজ্ঞতা চমৎকার ছিল। বিচারকরা খুবই সদয়। আমাদের মতো শিল্পীরা, যাদের বিশ্বমঞ্চে তেমন মূল্যায়ন হয় না, এই ধরনের প্রতিযোগিতার মাধ্যমে পরিচিতি পায়। আমার জন্য এটা এক রকম অলৌকিক ঘটনা।’

এবারের প্রতিযোগিতায় নারী প্রতিযোগীদের অংশগ্রহণ তুলনামূলক কম হলেও বিচারক ‘জেব বানগাশ’ আশাবাদী, ভবিষ্যতে নারী প্রতিযোগীদের সংখ্যা বাড়বে।

তিনি বলেন, ‘আমরা সমানভাবে ছেলে ও মেয়ে প্রতিযোগী খুঁজছি। যদিও এখন ছেলেদের সংখ্যা বেশি, তবে সেটি প্ল্যাটফর্মের কারণে নয়। আমার বিশ্বাস, প্রতিটি নতুন মৌসুমে নারীদের আগ্রহ আরো বাড়বে।’

সঙ্গীত প্রতিযোগিতার বিচার কেমন হওয়া উচিত এ প্রসঙ্গে জেব বলেন, ‘সঙ্গীত একটি সৃজনশীল প্রকাশ, তাই বিচার প্রক্রিয়াও অনেক সময় ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে। কখনো গান নির্বাচন, কখনো পরিবেশনা কিংবা পরিবেশই বিচারকদের প্রভাবিত করে। আমরা যথাসম্ভব স্বচ্ছ থাকার চেষ্টা করছি।’

পাকিস্তানে সম্প্রচারের পাশাপাশি এবার ‘পাকিস্তান আইডল’ পৌঁছে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক দর্শকদের কাছেও। ‘সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক ‘বিগিন’ প্ল্যাটফর্ম’-এর মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি দেখা যাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। সৌদি আরব, ইউএই, কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের দর্শকরা এটি দেখতে পারবেন ‘বিগিন অ্যাপ’এর মাধ্যমে। যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, দণি আফ্রিকা ও নাইজেরিয়ার দর্শকদের জন্য এটি সম্প্রচারিত হবে ‘বিগিন ডট ওয়াচ’ ওয়েবসাইটে। এমএইচএল গ্লোবাল এর পরিচালক জোয়া মার্চেন্ট বলেন, ‘এই প্রতিযোগিতার আন্তর্জাতিক সম্প্রচার প্রমাণ করে, দণি এশিয়ার বিনোদন আজ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে। পাকিস্তানের নিজস্ব সংস্কৃতি ও প্রতিভার বৈচিত্র্যকে বিশ্বদর্শকদের সামনে উপস্থাপন করতে পারা আমাদের জন্য গর্বের।’ ১২ বছর পর নতুন আঙ্গিকে ফিরেছে ‘পাকিস্তান আইডল’ শুধু প্রতিযোগিতা নয়, এটি হয়ে উঠছে একটি জাতীয় সাংস্কৃতিক উৎসব, যেখানে উঠে আসছে নতুন প্রজন্মের স্বর, স্বপ্ন ও সম্ভাবনার গল্প।