জনঘনত্ব ও রাস্তার প্রশস্ততার ভিত্তিতে নতুন ফার আসছে

আগামী এক মাসের মধ্যে এ বিষয়ে আরো একটি বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

হামিম উল কবির
Printed Edition

ঢাকা মহানগরে ভবন নির্মাণের নিয়মে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে।

রাজউক সূত্রে জানা গেছে, শিগগিরই ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ)-এ ফ্লোর এরিয়া রেশিও (এফএআর) নতুনভাবে নির্ধারণ করা হবে, যা নির্ভর করবে এলাকার জনঘনত্ব ও রাস্তার প্রশস্ততার ওপর। এ নিয়ে উপদেষ্টাদের একটি সাব-কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী এক মাসের মধ্যে এ বিষয়ে আরো একটি বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

উচ্চ ভবনের সুযোগ

ড্যাপে ঢাকা শহরকে ৬৫টি জনঘনত্ব ব্লকে ভাগ করা হবে এবং ব্লকভিত্তিক এফএআর নির্ধারণ হবে। প্রস্তাব অনুযায়ী- কিছু এলাকায় এফএআর ১.৩ থেকে বেড়ে ৩.৩ হতে পারে, ধানমন্ডিতে ১.৭ থেকে ২.১, খিলক্ষেতে ১.২ থেকে ২.০ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

এর ফলে আবাসন ব্যবসায়ীরা ছোট প্লটে উচ্চ ভবন নির্মাণে আগ্রহী হবেন। এতে ফ্ল্যাটের সংখ্যা বাড়বে। আবাসন খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এভাবে বাজারে ফ্ল্যাটের জোগান বাড়লেও দামের বড় কোনো পতন ঘটবে না।

নগর পরিকল্পনাবিদদের শঙ্কা

নগর পরিকল্পনাবিদরা এ সিদ্ধান্তকে নগরের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছেন। তাদের মতে, ভবনের উচ্চতা বাড়লে আলো-বাতাস ও খোলা জায়গা কমে যাবে।

নগরের সৌন্দর্য নষ্ট হবে, অতিরিক্ত জনঘনত্বের কারণে পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস, ড্রেনেজ ও পরিবহনব্যবস্থার ওপর তীব্র চাপ সৃষ্টি হবে।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি আদিল মুহম্মদ খান বলেন, ‘ফার বাড়ালে আবাসন ইউনিট বাড়বে, জনসংখ্যার ঘনত্বও বাড়বে। এতে পরিষেবার চাপ বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে এবং শহরের বাসযোগ্যতা হুমকির মুখে পড়বে।’

কে লাভবান, কে ক্ষতিগ্রস্ত?

এফএআর পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবেন আবাসন ব্যবসায়ী ও প্লট মালিকরা। ছোট জমিতে উচ্চ ভবন নির্মাণ সম্ভব হওয়ায় তাদের অর্থনৈতিক সুবিধা বাড়বে। তবে সাধারণ নাগরিকদের ক্ষেত্রে বাড়তি আলো-বাতাসের ঘাটতি ও অবকাঠামোগত চাপে জীবনযাত্রা আরো কঠিন হয়ে উঠতে পারে।

রাজউক কর্মকর্তাদের মতে, নতুন ফার হলে যেসব পরিবার কয়েকজন মিলে ছোট প্লট কিনে ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা করেছিলেন, তারা সুবিধা পাবেন। তবে নগরের সুষম উন্নয়নে সর্বজনীন পরিষেবা বৃদ্ধি না হলে ফার বাড়ানো উল্টো সমস্যা তৈরি করতে পারে।

গ্রামীণ ও প্রান্তিক এলাকাতেও পরিবর্তন

রাজউকের তথ্য অনুযায়ী, দাসেরকান্দি, কাঁচপুর, ময়নারটেক, আলীপুর, রুহিতপুর, বিরুলিয়া ও বনগ্রামের মতো গ্রামীণ এলাকাতেও জনঘনত্ব অনুযায়ী ফার সমন্বয়ের পরিকল্পনা রয়েছে।

সামগ্রিক চিত্র

ড্যাপ ২০২২-২০৩৫ অনুযায়ী চলমান প্রক্রিয়ায় আগামী এক বছরের মধ্যে বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের সমন্বয়ে একটি কারিগরি কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি ঢাকা শহরের বাসযোগ্যতা উন্নয়নের লক্ষ্যে রাজউককে নীতি-পরামর্শ দেবে।

তবে নগর পরিকল্পনাবিদরা মনে করেন, শুধুমাত্র ভবনের উচ্চতা বা ফার বৃদ্ধির মাধ্যমে আবাসন সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়।

শহরের মৌলিক অবকাঠামো উন্নয়ন, খোলা জায়গা রক্ষা, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা এবং পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষার দিকেও সমান গুরুত্ব দিতে হবে।