ঢাকায় সাপ নিয়ে বিস্ময়কর বার্তা

Printed Edition

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকায় সাপ নিয়ে বিস্ময়কর বার্তা দিয়েছে বাংলাদেশ অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন। সংস্থাটি বলছে, ঢাকায় বাসার ভেতরে, গ্যারেজে এমনকি বহুতল ভবনের ৯ তলায় পর্যন্ত উঠছে সাপ। গত চার মাসে নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ৩৫১টি সাপ উদ্ধারের কথা জানিয়েছেন তারা। গতকাল বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়।

সংস্থাটির আহ্বায়ক আদনান আজাদ বিবিসি বাংলাকে জানান, যেসব এলাকা থেকে তারা সাপ উদ্ধার করেছেন তার মধ্যে রয়েছে বনশ্রী, আফতাবনগর, মোহাম্মদপুর, বসিলা, উত্তরা ১৮ নম্বর সেক্টর, খিলগাঁও, কচুক্ষেত, মিরপুর-২, নিকেতন, উত্তরার উত্তরখান ও দক্ষিণখান। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সাপ পাওয়া গেছে উত্তরার ১৮ নম্বর সেক্টরের রাজউকের ফ্ল্যাট প্রকল্প এলাকায়। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বনশ্রী এলাকা। এর মধ্যে নতুন করে খিলগাঁওয়ে গত এক সপ্তাহ ধরে সাপ বেশি দেখা যাচ্ছে।

খিলগাঁওয়ের কয়েকটি বাসা থেকে ৩৮টি পদ্মগোখরা সাপ উদ্ধার করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এগুলোর মধ্যে পুরুষ ও স্ত্রী (মা) পদ্মগোখরা যেমন রয়েছে তেমনি বাচ্চা সাপও রয়েছে।

আজাদ বলেন, খিলগাঁওয়ের এক বাসায় তিনটা রুমের পুরো ফ্লোর ভেঙে মা সাপটা পেয়েছি। একই বাসা থেকে দুইটা বড় সাপ ও সাতটা বাচ্চা এবং ১৮টা পদ্মগোখরার ডিম উদ্ধার করেছি। এক বাসা থেকে ১৮টা পদ্মগোখরার বাচ্চা পেয়েছি। যাদের বাসা থেকে সাপ উদ্ধার করা হয়েছে তারা আবার বড় ও বাচ্চা সাপ দেখা গেছে বলে জানিয়েছে।

উদ্ধার হওয়া সাপের মধ্যে রয়েছে পদ্মগোখরা, রাসেলস ভাইপার, খৈয়া গোখরা, রাজ কেউটে। তবে সাপ নিয়ে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক থাকলেও সাপের কামড়ের ঘটনা তেমন দেখা যায়নি। সংস্থার আহ্বায়ক আদনান আজাদ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, গত চার মাসে ৩৫১টি সাপ উদ্ধার করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে মাত্র তিনটি নির্বিষ সাপ এবং বাকিগুলো বিষধর। তবে সাপ নিয়ে স্থানীয় অনেকের মধ্যে আতঙ্ক থাকলেও সাপের কামড়ের ঘটনা তেমন দেখা যায়নি।

রাজধানীর জনবহুল এলাকায় বিষধর সাপ পাওয়ায় গবেষকদের কেউ কেউ বিস্ময় প্রকাশ করলেও অনেকে বিষয়টি স্বাভাবিক বলেই মনে করছেন। তারা বলছেন, বাংলাদেশে সাধারণত বর্ষাকালে সাপের উপদ্রব বাড়ে। সাপ আবাসস্থল হিসেবে যেসব গর্ত তৈরি করে তাতে বৃষ্টির পানি ঢুকে পড়লে সে আশ্রয়ের জন্য শুকনা স্থানের সন্ধানে উঁচু স্থান ও মানুষের বসতি বা ঘরে ঢুকে পড়ে।

আহ্বায়ক আজাদ সাংবাদিকদের বলেন, রাজধানীর বাসাবাড়ি থেকে ৩৫১টি সাপ তারা উদ্ধার করেছেন। এর মধ্যে উত্তরার ১১টা বিল্ডিং থেকে সাপ পাওয়া গেছে। তবে ১৮ নম্বর সেক্টরে রাজউকের যে ফ্ল্যাটে সবচেয়ে বেশি সাপ পেয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, সাততলা এমনকি ৯তলা থেকে সাপ উদ্ধার করা হয়েছে। যেসব বিষধর সাপ পাওয়া গেছে সেগুলোর মধ্যে পদ্মগোখরা সাপই সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে বলে জানান আজাদ। সাপের মধ্যে প্রায় ২০০ সাপই পদ্মগোখরা বলে জানান তিনি। এত উঁচু ভবনে কিভাবে সাপ গেল এমন প্রশ্নে আজাদ বলেন, তাদের ধারণা যেসব ভবনের ওপরের ফ্ল্যাটে সাপ পাওয়া গেছে সেগুলোর প্রতিটি ভবনের গেটের সাথে বাগান বিলাসের মতো লতানো গাছ রয়েছে। সেই গাছগুলো বেয়ে ওপরে ওঠার জন্য ব্যবস্থা রয়েছে। সেখান থেকেই হয়তো সাপ বেয়ে উঁচু ভবনে উঠেছে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ আহসান একটি গণমাধ্যমকে বলেন, এটা আনইউজুয়ালতো বটেই। সাপ থাকতে পারে ঢাকা শহরে যদি ঝোপঝাড় থাকে। কিন্তু এত সাপ কী করে হলো এটা চিন্তার বিষয়। এর আগেও ঢাকায় কিছুসংখ্যক বিষধর সাপ পাওয়া গেলেও এবারই প্রথম এত বেশিসংখ্যক সাপের খবর পাওয়া যাচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের ভেনোম রিসার্চ সেন্টারের রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট মো: মিজানুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, জলাশয় ও খাল-বিল ভরাট করে মানুষ বাসস্থান তৈরি করায় সাপের বাসস্থান সঙ্কট তৈরি হয়েছে। তাই সাপ মানুষের বাসায় ঢুকে পড়ছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ আহসান জানান, পদ্মগোখরা সাপ মূলত পানিপ্রেমী। নদী, জলাশয়, খাল-বিলে থাকতে পছন্দ করে। তবে পানির নিকটস্থ ঝোপঝাড় ও গর্তেও এই সাপের দেখা মেলে।

তবে কেন হঠাৎ করে এত বিপুল সংখ্যক বিষধর সাপের দেখা মিলছে এমন প্রশ্নে চট্টগ্রামের মেডিক্যাল কলেজের ভেনোম রিসার্চ সেন্টারের রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট মো: মিজানুর রহমান জানান, মানুষ সাপের আবাসস্থল ধ্বংস করায় এ অবস্থা তৈরি হয়েছে।

কোন কোন এলাকায় সাপগুলো পাওয়া যাচ্ছে সেটা দেখার বিষয়। যেসব এলাকায় পাওয়া গেছে তার প্রতিটি জায়গায় জলাশয়, খাল-বিল ভরাট করে মানুষ বাসস্থান গড়ে তুলেছে। সাপ তার নিজের জায়গায়ই আছে কিন্তু আমরা তার জায়গায় চলে গেছি।

তার মতে, এত সাপের দেখা মিলছে বিষয়টি স্বাভাবিক। কারণ আগে বাংলাদেশে সাপ উদ্ধারকারী এ রকম সংগঠন কম ছিল। মানুষ সাপ দেখলেই মেরে ফেলত। কিন্তু এখন সাপ উদ্ধারের অনেক সংগঠন গড়ে উঠেছে। ফলে সাপের ঘটনা লাইমলাইটে আসার এটাই বড় কারণ বলে মনে করেন এই গবেষক।