সাক্ষাৎকার

ছাত্রী বোনদের কাছ থেকে ভালো সাড়া পাচ্ছি : সাদিক কায়েম

আসন্ন ডাকসু নির্বাচনে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সমর্থিত প্যানেল ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’ এর ভিপিপ্রার্থী আবু সাদিক কায়েম। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী।

হারুন ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
Printed Edition
সাদিক কায়েম
সাদিক কায়েম |সংগৃহীত

শিক্ষার্থীদের বিদ্যমান সমস্যা সমাধানই প্রধান প্রতিশ্রুতি

দীর্ঘ ছয় বছরের প্রতীক্ষার পর আগামী ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। এবারের নির্বাচন মূলত পাঁচটি বড় গোষ্ঠীর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার রূপ নিয়েছে। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ, ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট, স্বতন্ত্র শিক্ষার্থীজোট, বাম সমর্থিত প্রতিরোধ পর্ষদের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে উৎসবমুখর হয়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। প্রতিদ্বন্দ্বী এই প্রধান পাঁচটি জোটের ভিপি প্রার্থীরা কথা বলেছেন দৈনিক নয়া দিগন্তের সাথে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নয়া দিগন্তের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি হারুন ইসলাম

আসন্ন ডাকসু নির্বাচনে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সমর্থিত প্যানেল ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’ এর ভিপিপ্রার্থী আবু সাদিক কায়েম। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী। তিনি ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি এবং বর্তমানে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সাহিত্য সম্পাদক। ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানে তিনি অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করেন। এরপর থেকে ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সংস্কারমূলক কার্যক্রমে যুক্ত রয়েছেন।

নয়া দিগন্ত : ডাকসুর নির্বাচনকেন্দ্রিক পরিবেশকে কিভাবে দেখছেন? কোনো ধরনের শঙ্কা বা আশঙ্কা লক্ষ করেছেন?

সাদিক কায়েম : নির্বাচন কমিশনের কর্মকাণ্ডে আমরা কিছুটা উদ্বিগ্ন। কমিশনের যেভাবে দৃঢ় অবস্থান নেয়া উচিত ছিল তা এখনো দেখা যাচ্ছে না। আচরণবিধি ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। একইসাথে, কিছু শিক্ষক তাদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার কারণে একটি নির্দিষ্ট ছাত্রসংগঠনকে বাড়তি সুবিধা দিচ্ছেন। কোনো আলোচনা ছাড়াই হঠাৎ করেই ‘গায়েবি’ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করছেন। শিক্ষকদের আমরা শ্রদ্ধা করি, তবে তাদের দায়িত্ব হলো শিক্ষার্থীদের একটি সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দেয়া। যদি তারা পক্ষপাতমূলক আচরণ করেন, তাহলে এটি শিক্ষার্থী বনাম শিক্ষকের পর্যায়ে চলে যাবে, যা দেশের জন্য ক্ষতিকর। তাই আমরা চাই, শিক্ষকরা নিরপেক্ষ ও দায়িত্বশীল আচরণ করুক।

নয়া দিগন্ত : প্রার্থীদের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ এসেছে। এসব অভিযোগ কতটা যৌক্তিক?

সাদিক কায়েম : অভিযোগগুলো আংশিক সত্য। কিছু প্রার্থী আচরণবিধি মানছেন না, পোস্টার, মাইক ব্যবহার, সামাজিক মাধ্যমে আক্রমণাত্মক প্রচারণা এর মধ্যে পড়ে। কিন্তু সমস্যাটা হলো, এসবের বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। আমরা মনে করি সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করাই নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব।

নয়া দিগন্ত : কেন আপনাদের প্যানেলকে ইনক্লুসিভ প্যানেল বলছেন?

সাদিক কায়েম : জুলাই বিপ্লব আমাদের শিখিয়েছে কিভাবে ঐক্যবদ্ধ লড়াই সফলতা আনে। তাই শুধু দলীয়ভাবে নয়, বরং সবার জন্য প্যানেল করেছি। এখানে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী, উপজাতি শিক্ষার্থী, নারীশিক্ষার্থী, জুলাই বিপ্লবের তরুণ যোদ্ধা, ক্রীড়াবিদ ও গবেষকদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সম্পাদকদেরও দক্ষতার ভিত্তিতে নির্বাচন করা হয়েছে। আমরা চাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হোক সবার, যেখান থেকে সবার বাংলাদেশ গড়ে উঠবে।

নয়া দিগন্ত : নারীশিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে আপনারা কোন বিশেষ উদ্যোগগুলো নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন?

সাদিক কায়েম : নারীশিক্ষার্থীদের জন্য আমাদের স্পষ্ট ও বাস্তবসম্মত প্রতিশ্রুতি রয়েছে। আমরা একটি নারীবান্ধব ও নিরাপদ ক্যাম্পাস গড়ে তুলব। ছাত্রীদের আবাসন সঙ্কট দূর করব, তাদের স্বাস্থ্যসুরক্ষা নিশ্চিত করব এবং বিনামূল্যে হাইজিন কিট সরবরাহ করব। ক্যাম্পাসে ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপন করব, যাতে মা শিক্ষার্থীরা স্বাচ্ছন্দ্যে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেন। অন্য হলে প্রবেশের অধিকার নিশ্চিত করা হবে। একইসাথে হ্যারাসমেন্টের শিকার হলে সহজে অভিযোগ জানাতে একটি কার্যকর ডিজিটাল অভিযোগ বক্স চালু করা হবে। আমরা চাই, প্রতিটি ছাত্রী নিরাপদে, সম্মানের সাথে এবং সমান সুযোগ নিয়ে ক্যাম্পাসে অবস্থান করুক।

নয়া দিগন্ত : শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কেমন সাড়া পাচ্ছেন?

সাদিক কায়েম : আমরা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি, বিশেষ করে ছাত্রীদের আস্থা আমাদের ওপর বেড়েছে। গত এক বছরে আমরা শহীদ পরিবার, আহত শিক্ষার্থী, প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন সংস্কারমূলক কাজে সক্রিয় ছিলাম। মেডিক্যাল ক্যাম্প, ছাত্রী হলগুলোতে সংলাপ, নারীশিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা প্রোগ্রাম, এসব শিক্ষার্থীদের আস্থা জুগিয়েছে। জুলাই বিপ্লবের সময় আমাদের ছাত্রী বোনদের সাহসী অবদান সবার চোখে পড়েছে। সেই আস্থার প্রতিফলন এখন সমর্থনে দেখা যাচ্ছে।

নয়া দিগন্ত : বিশেষ করে নারীশিক্ষার্থীদের থেকে কেমন সাড়া পাচ্ছেন?

সাদিক কায়েম : অতীতে ডাকসু-চাকসু নির্বাচনে ছাত্রীরা আমাদের সর্বাধিক সমর্থন দিয়েছে। গত এক বছরে তাদের অংশগ্রহণও বেশি ছিল। আমাদের ম্যানিফেস্টোতে নারীদের নিরাপত্তা, গার্ডিয়ান লাউঞ্জ, ক্যান্টিন-হাইজিন সুবিধা, ডে কেয়ার সেন্টার, রাতের জরুরি চিকিৎসা, নারী বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, সংখ্যালঘুদের অধিকার- সবই অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আমরা নারীবান্ধব ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ক্যাম্পাস গড়তে চাই। তা ছাড়া, এখন নারীশিক্ষার্থীদের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। নারীদের কাছে শিবির সম্পর্কে ফ্যাসিবাদী বিষবাষ্প এখন নেই বললেই চলে। তবে দুঃখজনকভাবে রাজনীতি কিংবা রাজনীতির বাইরে ছাত্রীদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ এখনো গড়ে ওঠেনি। অব্যাহত কটূক্তি, প্রোপাগান্ডা, বিদ্বেষমূলক প্রচার, সাইবার বুলিং ও ট্যাগিংয়ের শিকার হচ্ছেন নারীরা। ডান-বাম ঘরানার কেউই রেহাই পাচ্ছেন না এই ব্যাধি থেকে। চব্বিশের জুলাই বিপ্লবের সফলতার অন্যতম কারিগর আমাদের ছাত্রী বোনেরা। তাদের সাহসী অবদান ও দুর্নিবার নেতৃত্ব আমাদের বিজয়কে ত্বরান্বিত করেছে। আমরা নারীদের জন্য মসৃণ পথ তৈরি করে দিতে চাই।

নয়া দিগন্ত : ভিপি পদে আপনার জয়ের সম্ভাবনা কতটা দেখছেন? ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের পুরো প্যানেল কি জয়ী হতে পারবে?

সাদিক কায়েম : জুলাই বিপ্লবে আমি শুরু থেকে মাঠপর্যায়ে সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করেছি। বিপ্লব-পরবর্তী এক বছর আমরা শহীদ পরিবার, আহত শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাস সংস্কারের কাজে সক্রিয় থেকেছি। পাশাপাশি মেডিক্যাল ক্যাম্প, প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা, বিভিন্ন দাবিদাওয়া প্রশাসনের কাছে উপস্থাপন করেছি। শিক্ষার্থীরা বিশেষ করে নারীশিক্ষার্থী বোনদের ওপরে আমাদের আস্থা আমাদের ওপর বেড়েছে। তাদের থেকে আমরা ভালো সাড়া পাচ্ছি। তারা আমাদের নিয়মিত নানা পরামর্শ দিচ্ছে, সহযোগিতা করছে। এ কারণেই আমরা আশাবাদী ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট সফল হবে।

নয়া দিগন্ত : প্রার্থীদের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ এসেছে। এসব অভিযোগ কতটা সত্য?

সাদিক কায়েম : অভিযোগগুলো আংশিক সত্য। কিছু প্রার্থী আচরণবিধি মানছেন না, পোস্টার, মাইক ব্যবহার, সামাজিক মাধ্যমে আক্রমণাত্মক প্রচারণা এর মধ্যে পড়ে। কিন্তু সমস্যাটা হলো এসবের বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। আমরা মনে করি, সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করাই নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব।

নয়া দিগন্ত : কেন আপনাদের প্যানেলকে অন্তর্ভুক্তিমূলক বলছেন?

সাদিক কায়েম : জুলাই বিপ্লব আমাদের শিখিয়েছে, কিভাবে ঐক্যবদ্ধ লড়াই সফলতা আনে। তাই শুধু দলীয়ভাবে নয়, বরং সবার জন্য প্যানেল করেছি। এখানে শারীরিক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী, ‘উপজাতি’ শিক্ষার্থী, নারীশিক্ষার্থী, জুলাই বিপ্লবের তরুণ যোদ্ধা, ক্রীড়াবিদ ও গবেষকদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সম্পাদকদেরও দক্ষতার ভিত্তিতে নির্বাচন করা হয়েছে। আমরা চাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হোক সবার, যেখান থেকে সবার বাংলাদেশ গড়ে উঠবে।