নয়া দিগন্ত ডেস্ক
মিয়ানমার থেকে গণহত্যার মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের স্বাধীন রাষ্ট্রের দাবিতে ঢাকায় ‘মার্চ ফর রোহিঙ্গা’ শীর্ষক পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করেছে জেন-জি অ্যাক্টিভিস্টরা। গতকাল সোমবার বিকেলে ‘আন্তর্জাতিক রোহিঙ্গা গণহত্যা স্মরণ দিবস’ উপলক্ষে ‘বাংলাদেশ পিপলস কোয়ালিশন ফর রোহিঙ্গা রাইটস’র ব্যানারে রাজধানীর শাহবাগ থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পর্যন্ত এ পদযাত্রার আয়োজন করা হয়।
এ কর্মসূচিতে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, জুলাই বিপ্লবে অংশগ্রহণকারী অ্যাক্টিভিস্ট, সামাজিক-রাজনৈতিক সংগঠনের সদস্য ও নাগরিকরা অংশ নেন। বেলা ৩টায় শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে থেকে শহীদ মিনার অভিমুখে পদযাত্রা শুরু হয়। এ সময় অংশগ্রহণকারীরা ‘রোহিঙ্গা জাতির ওয়াতান, নাফ থেকে কালাদান’, ‘ভোরের আলো মুক্তির গান, স্বাধীন হবে আরাকান’, ‘ফ্রম দ্য রিভার টু দ্য সি, আরাকান উইল বি ফ্রি’, ‘রক্তে লেখা এই আহ্বান, মুক্ত হোক আরাকান’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
পরে পদযাত্রাটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশে মিলিত হয়। এ সময় রোহিঙ্গা জাতির প্রতিনিধি আহনাফ আলম, অ্যাক্টিভিস্ট ইফতেখার জামিল রাফিদ এম ভূঁইয়া, মোহাম্মদ ইশরাক হোসাইন, আজিজ ফাহিম, বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক আব্দুল ওহায়েদ, সদস্যসচিব ফজলুর রহমান, বাংলাদেশ পিপলস কোয়ালিশন ফর রোহিঙ্গা রাইটসের সংগঠক জিহাদী ইহসান ও মুখপাত্র শাহরিয়ার ফাহাদ প্রমুখ বক্তৃতা করেন।
রোহিঙ্গা তরুণ আহনাফ আলম তার জাতির বিরুদ্ধে সংঘটিত নিপীড়নের দীর্ঘ ইতিহাস তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘আরাকানে আমাদের পূর্বপুরুষদের শতাব্দীব্যাপী উপস্থিতি থাকার পরও আমাদের অস্তিত্ব মুছে ফেলার চেষ্টা চলছে। বাংলাদেশে আমাদের ভাইদের মধ্যে অনেকের কাছে ভুল ধারণা ও বিদ্বেষ আছে, যা দূর করা জরুরি। আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশী জনগণ আমাদের প্রতি সহমর্মিতা দেখাবে।’ জিহাদী ইহসান তার বক্তব্যে বলেন, ‘আমাদের বাংলা সালতানাত ও রক্তের সিলসিলার ভাই রোহিঙ্গারা সতের শতক থেকে গণহত্যার শিকার হয়ে আসছে। তাদের রক্তের কোনো দাম নেই, কারণ তারা দেখতে কালো, চিবুক ভাঙা, চোখের কোঠরে মণি শুকিয়ে গেছে। বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য হলেও রোহিঙ্গাদের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে’।
বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের সদস্যসচিব ফজলুর রহমান বলেন, ‘রোহিঙ্গারা আমাদের ভাই। তারা গত কয়েক দশক ধরে ধারাবাহিকভাবে গণহত্যার শিকার হয়ে আসছে। বছরের পর বছর নিজেদের ভূমির অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে নির্মম জীবন যাপন করছে। অথচ সভ্যতার বুলি আওড়ানো বিশ্বশক্তি ও মানবাধিকারের বুলি আওড়ানো সংগঠনগুলো এ বিষয়ে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে।’
সমাবেশে মার্চ ফর আরাকান’ কর্মসূচির মুখপাত্র শাহরিয়ার ফাহাদ রোহিঙ্গাদের মুক্তি ও আরাকান স্বাধীনতার জন্য আট দফা দাবি ঘোষণা করেন। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- রোহিঙ্গা গণহত্যার স্বীকৃতি ও আন্তর্জাতিক বিচার করতে হবে। রোহিঙ্গাদের ‘রাইট টু রিটার্ন’-এর স্বীকৃতি দিতে হবে। আরাকান প্রদেশে যেসব সম্পদ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রোহিঙ্গাদের মালিকানায় ছিল তা তাদের ফিরিয়ে দিতে হবে। রোহিঙ্গাদের পূর্ণ মানবাধিকার ফিরিয়ে দিয়ে রোহিঙ্গাদের স্বায়ত্তশাসনের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে রোহিঙ্গাদের পূর্ণ আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার দিতে হবে। আরাকানে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ বসবাস নিশ্চিত করতে জাতিসঙ্ঘ বা আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা কাঠামোকে অ্যাক্টিভ করতে হবে। প্রয়োজনে ট্রাস্টিশিপ কাউন্সিলকে দায়বদ্ধ করতে হবে। রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আত্মনিয়ন্ত্রণ পরাশক্তিগুলো হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। রোহিঙ্গাদের রাজনৈতিক নেতৃত্ব, শিক্ষা, ধর্ম, ভাষা ও সংস্কৃতির পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। আরাকানে কোনো জাতিগোষ্ঠীকে প্রান্তিক করা যাবে না।