গণহত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত, ভারতে পলাতক পতিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অন্যতম প্রধান অর্থের যোগানদাতা ব্যাংক খেকো এস আলমের লুটপাটের জেরে দেশের ইতিহাসে রেকর্ড লোকসান করেছে ইউনিয়ন ব্যাংক। পতিত আওয়ামী লীগের আমলে ব্যাংকটি দখলে নিয়েছিল মাফিয়া এস আলম। এরপর ব্যাংকটি থেকে পানির মতো আমানতকারীদের অর্থ বের করে নেয়। যার ফলে ব্যাংকটি গত বছর দেশের ইতিহাসে রেকর্ড ২৫ হাজার ৭৯৪ কোটি টাকা লোকসান করেছে।
গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য অনুসারে, ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি লোকসান দাঁড়িয়েছে ২৪৮.৯১ টাকা, যা এক বছর আগে ছিল ২.৮২ টাকা। এই বিপুল লোকসানের কারণে ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য ঋণাত্মক ২৩৭.৪৪ টাকায় নেমে এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদন থেকে দেখা গেছে, ইউনিয়ন ব্যাংক থেকে ২৮ হাজার কোটি টাকা নামে-বেনামে ঋণের নামে হাতিয়ে নিয়েছে মাফিয়া এস আলম। আর তার এ কাজে সরাসরি সহযোগিতা করেছেন ব্যাংকটির সাবেক এমডি মোকাম্মেল, এস আলমের পিএস আকিজ উদ্দিন ও ইউনিয়ন ব্যাংকের কয়েকজন ডিএমডি ও বিশ্বস্ত কর্মকর্তা। যদিও আকিজ উদ্দিন ও মোকাম্মেল গত ৫ আগস্টের পর দেশ থেকে পালিয়ে গেছেন। কিন্তু এ তালিকায় এখনো ব্যাংকে ও ব্যাংকের বাইরে অনেকে বহাল তবিয়তে আছেন।
ব্যাংক থেকে পুরো অর্থ বের করে নেয়ায় ইউনিয়ন ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার প্রায় ৯৮ শতাংশ। এস আলম টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়ায় ব্যাংকটি এখন শূন্যের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। কোনো গ্রাহকের অর্থ ফেরত দিতে পারছে না ব্যাংকটি।
ইউনিয়ন ব্যাংক থেকে এস আলম শুধু আমানতকারীদের আমানতই হাতিয়ে নেননি, সাথে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নেয়া স্বল্পমেয়াদি আমানতও হাতিয়ে নিয়েছে। এর ফলে আমানতকারীদের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও বেকায়দায় পড়ে গেছে।
পতিত আওয়ামী লীগ সরকার বিদায় নেয়ার পর দেশ থেকে পালিয়ে যান এস আলম ও তার দোসররা। বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর দায়িত্ব নিয়েই এস আলমের নিয়ন্ত্রণে থাকা ব্যাংকগুলোর পর্ষদ ভেঙে নতুন পর্ষদ গঠন করেন। এরপর থেকেই ব্যাংকগুলো পুনর্গঠনের কাজ শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বিভিন্ন সময় নগদ টাকার জোগান দিয়েছে ব্যাংকটিকে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য। কিন্তু ব্যাংকগুলো আজও ঘুড়ে দাঁড়াতে পারেনি। বাধ্য হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পাঁচটি ব্যাংক একীভূত করার সিদ্ধান্ত নেয়। এরই অংশ হিসেবে পুনর্গঠিত বোর্ডও ভেঙে দিয়ে প্রশাসক বসানো হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সাধারণ আমানতকারীদের আমানত ফেরত দেয়ার প্রক্রিয়া হাতে নেয়া হয়েছে। প্রথমেই দুই লাখ টাকা পর্যন্ত ফেরত দেয়া হবে। পরে কিভাবে টাকা ফেরত দেয়া হবে তার জন্য গেজেট প্রকাশ করা হবে।
এ দিকে ৩১ ডিসেম্বরে শেষ হওয়া ২০২৪ সালে ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসির রেকর্ড ২৫ হাজার ৭৯৪ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে বলে জানিয়েছে ব্যাংকটি। ব্যাংকিং খাতের অভ্যন্তরীণ সূত্র মতে, বাংলাদেশের ইতিহাসে কোনো একটি নির্দিষ্ট ব্যাংকের জন্য এটিই এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ লোকসানের ঘটনা। চলতি মাসের শুরুতে ইউনিয়ন ব্যাংককে অকার্যকর ঘোষণা করে আরো চারটি ব্যাংকের সাথে একীভূত করার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে একজন প্রশাসক নিয়োগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এই ঘোষণার পর স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ ব্যাংকটির শেয়ার লেনদেন স্থগিত করে।



