সঙ্কুচিত হয়ে আসছে কুয়াকাটা। প্রতি বছর এক মিটার করে সমুদ্রে বিলীন হয়ে সৈকতের গতিধারা বদলে গেছে। সাগরের জোয়ার-ভাটায় বালুক্ষয়ে বিচের গভীরতা বাড়ছে। প্রতিদিন তীর ধসে সাগরে বিলীন হচ্ছে গাছ ও সবুজ বেষ্টনী। বালুর বস্তা ফেলে দুর্যোগ মোকাবেলার চেষ্টা করেও রক্ষা হয়নি। উল্টো তাতে গর্ত হয়ে পর্যটকদের জন্য দুর্ভোগ বাড়ছে। প্রায় ৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও এক কিলোমিটার প্রস্থে সৈকত ইতোমধ্যে সঙ্কোচিত হয়ে আধা কিলোমিটার প্রস্থে এসে ঠেকেছে।
চলমান সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান পানি উন্নয়ন বোর্ড তা রক্ষায় স্থায়ী উদ্যোগ নিচ্ছে না। বরং অস্থায়ী কার্যক্রমের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে কুয়াকাটা সৈকত বিলীন হয়ে যাবে।
স্থানীয় পাউবোর তথ্য মতে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে এক মিটার করে সৈকত ঢেউয়ের ঝাপটায় বিলীন হয়ে সমুদ্রে চলে যাচ্ছে। এতে পর্যটকদের চিত্তবিনোদনের জন্য দর্শনীয় স্পট হিসেয়ে গড়ে তোলা জাতীয় উদ্যান ইকো পার্কও ভূমি ক্ষয়ের কবলে পড়ে বিলীন হতে চলছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, কুয়াকাটা সৈকত রক্ষায় একটি প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়েছে। তার অনুমোদন না হওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে চূড়ান্ত কিছু করণীয় সম্ভব নয়।
এ বিষয়ে কুয়াকাটা হোটেল মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, দেখতে দেখতে সৈকত শেষ হয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে তা অনেক সঙ্কুচিত হয়ে গেছে। তা রক্ষায় সরকারের জিও ব্যাগ ফেলতে ফেলতে এখন ছেঁড়া, শ্যাওলাযুক্ত, পচা, নোংরা এসব ব্যাগে পুরো সৈকত বিবর্ণ হয়ে গেছে। কিন্তু তারপরও সরকারের সহযোগিতা একাধিকবার চেয়েও পাওয়া যায়নি। তার ভাষ্য এভাবে কখনোই সৈকত রক্ষা হবে না। আর জিওব্যাগ যদি দিতেই হয়, তাহলে মোটাবালু দিয়ে জিও ব্যাগ প্রস্তুত করে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে টেকসইভাবে দিতে হবে।
অন্য দিকে ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের কুয়াকাটা সভাপতি ও স্থানীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি রুমান ইমতিয়াজ তুষার গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, দীর্ঘ ৫০ কিলোমিটারের এ সৈকতের প্রস্থ এক কিলোমিটার ছিল। কিন্তু এত দিনে বালুক্ষয়ে তা আধা কিলোমিটার সাগরে বিলীন হয়ে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে এ সৈকত আর রক্ষা করা যাবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর সমাধান আর হবে বলে মনে হয় না। কারণ এর মধ্যে তারা একাধিকবার পাউবোর সহযোগিতা চেয়েছেন কিন্তু স্থায়ী কোনো সমাধান হয়নি।
এ নিয়ে পাউবো কর্মকর্তারা লুটপাট করছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, প্রতি মওসুমে তা রক্ষায় অস্থায়ী উদ্যোগ নেয়া হয়। সরকার কোটি কোটি টাকা দিলেও ৫০-৬০ লাখ টাকা দিয়ে তাৎক্ষণিক কিছু কার্যক্রম করে বাকি টাকা লুটপাট করা হয়। কিন্তু এর সমাধানে স্থায়ী প্রকল্প প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেক চেষ্টার পরও তা আর হয়নি। এখন আমরা আর আশা ছেড়ে দিয়েছি। হয়তো এ বিচ আর রক্ষা সম্ভব হবে না।
অভিযোগের বিষয়ে কলাপাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: শাহ আলম গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, কুয়াকাটা রক্ষা প্রকল্প কার্যক্রম নিয়ে ১৬ সাল থেকেই চেষ্টা চলছে। সর্বশেষ গত বছরের এপ্রিলে জমা দেয়া প্রকল্পে ১১ দশমিক ৭ কিলোমিটার সৈকত রক্ষায় ৬৮টি গ্রোইন বাঁধ করার কথা বলা হয়েছে। আর প্রাথমিক পর্যায়ে কিছু সংশোধনী চাওয়া হলে সে অনুযায়ী সংশোধিত প্রকল্প দাখিল হয় চলতি বছরের মার্চে। শোর লাইন বা সৈকত প্রতিরক্ষা নামে ওই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৫৯ কোটি টাকা। পরিকল্পনা কমিশনের শর্তানুসারে এবার আইডব্লিউএম (ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং) থেকে সম্ভাব্যতা যাচাই ও সুপারিশ নিয়ে প্রকল্পটি দেয়া হয়েছে। এর অনুমোদন পেলে তার পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম শুরু হবে।
বিরাজমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত সচিব) নুজহাত ইয়াসমিন এর ভাষ্য, শুধু ট্যুরিজম বোর্ড চাইলেই সব কিছু করতে পারে না। সেখানে অন্যান্য অংশীজনদেরও ভূমিকা আছে। তবে ট্যুরিজম রক্ষায় একটা মহাপরিকল্পনা আছে। সেই পরিকল্পনায় যতগুলো এরই মধ্যে স্বীকৃত পর্যটনকেন্দ্র আছে, এর বাইরেও অনেক স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। এখন তা চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।



