রেড সি ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে আন্তর্জাতিক ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনার মঞ্চে নেটফ্লিক্সের ওয়ার্নার ব্রোস ডিসকভারি (ডব্লিউবিডি) অধিগ্রহণের ডিলটি হয়ে উঠেছে কেন্দ্রীয় বিষয়। গত সপ্তাহেই সৌদি আরব রিপোর্ট অনুসারে প্যারামাউন্ট-স্কাইড্যান্সের বিডে হলিউড স্টুডিওর অংশীদারিত্বের স্বপ্ন দেখেছিল; কিন্তু শুক্রবার নেটফ্লিক্সের ৭২ বিলিয়ন ডলারের বিডে সেই স্বপ্ন ধুলোয় মিশে যায়। রোববার ‘ফিউচার প্রুফিং আওয়ার ইন্ডাস্ট্রি’ প্যানেলে লাইব্রেরি পিকচার্স ইন্টারন্যাশনালের সিইও ডেভিড টাগিওফের নেতৃত্বে ফিল্ম নেতারা এই ডিল নিয়ে খোলামেলা মতামত ব্যক্ত করেন।
ফ্রান্সের ন্যাশনাল সিনেমা সেন্টারের (সিএনসি) প্রেসিডেন্ট গ্যাটান ব্রুয়েল সবচেয়ে কড়া ভাষায় নেটফ্লিক্সের এই অধিগ্রহণের সমালোচনা করেন। ফ্রান্স ও নেটফ্লিক্সের সম্পর্ক তো সবসময়ই টানাপড়েন স্ট্রিমারকে স্থানীয় ফিচার ফিল্মে অতিরিক্ত বিনিয়োগের বিনিময়ে ১৫ মাসের মিডিয়া উইন্ডো মেনে চলতে হয়। কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের কম্পিটিশন থেকেও নেটফ্লিক্স প্রায় বাদ।
ব্রুয়েল বলেন, ‘আমি থিয়েটারের দৃষ্টিকোণ থেকে বলছি। আমেরিকা, ফ্রান্স, বিশ্বজুড়ে হাজার হাজার প্রদর্শকরা এই অধিগ্রহণের পদ্ধতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। ভয় হচ্ছে, থিয়েটারে রিলিজ হওয়া ফিল্মের সংখ্যা কমে যাবে ঠিক যেমনটি ডিজনি ফক্স অধিগ্রহণের পর হয়েছিল।’
তিনি দু’টি আরো গুরুতর কারণ তুলে ধরেন- ‘প্রথমত, নেটফ্লিক্সের সিনেমার প্রতি দ্বিধাগ্রস্ত মনোভাব। দ্বিতীয়ত, থিয়েটারের দর্শক সংখ্যার নাটকীয় পতন। ২০১৯ সালে বিশ্বব্যাপী আট বিলিয়ন টিকিট বিক্রি হয়েছিল, গত বছর মাত্র পাঁচ বিলিয়নেরও কম ৪০ শতাংশ হ্রাস!’ নেটফ্লিক্স সাম্প্রতিককালে থিয়েটার রিলিজকে গ্রহণ করেছে বটে; কিন্তু শুধু মার্কেটিং টুল হিসেবে। ‘প্রেস্টিজ, কমিউনিটি এনগেজমেন্ট, মিডিয়া ইকোর জন্য তারা থিয়েটার ব্যবহার করে। কিন্তু সঙ্কটের এই মুহূর্তে থিয়েটারকে যা দরকার সীমিত উইন্ডো এবং এক্সক্লুসিভিটি; তা তারা দেয়নি। আমেরিকায় ‘ফ্রাঙ্কেনস্টাইন’ মাত্র এক সপ্তাহ রিলিজ করে কিভাবে থিয়েটারগুলো টিকবে?’
নেটফ্লিক্সের সিইও টেড সারান্ডোসের প্রথম মন্তব্য উদ্ধৃৃত করে ব্রুয়েল বলেন, ‘তিনি বলেছেন, সময়ের সাথে উইন্ডো আরো কনজিউমার-ফ্রেন্ডলি হবে।’ তাহলে প্রশ্ন হলো- থিয়েটার-ফ্রেন্ডলি উইন্ডো কবে হবে যাতে তারা টিকে থাকতে পারে? ইংরেজিতে বলে, কেক খেয়ে আবার রাখা যায় না! তিনি জোর দেন, ‘যদি আমরা থিয়েটারে বিশ্বাস করি, তাহলে তাদের দরকার কনটেন্টের বৈচিত্র্য নয়; শুধু সীমিত উইন্ডো এবং এক্সক্লুসিভিটি। এই ডিল থিয়েটারের জন্য খারাপ খবর, ফিল্মের স্লেট কমবে। তবে নেটফ্লিক্সকে থিয়েটার ইকোসিস্টেমের কাছে টেনে আনতে পারে, যা ভালো হতে পারে।’
ডিএডির চিফ স্ট্র্যাটেজি অফিসার জুলি লা বাসিয়ার ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নেন। ‘এই বিশৃঙ্খলায় ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফিল্মমেকাররা আরো সৃজনশীল হবে, ক্রিয়েটিভ হবে এই বিশাল কনসোলিডেটেড কনটেন্টের বিকল্প কণ্ঠস্বর হয়ে উঠবে। আমি একটু বিষণœ; কিন্তু ইন্ডিপেন্ডেন্ট সেক্টরের জন্য ইতিবাচক দেখছি।’ তিনি যোগ করেন, ডিলের অধীনে থাকা ফিল্মমেকাররা ব্র্যান্ডের সুবিধা পাবেন, দর্শক আকর্ষণে সাহায্য করবে।
এমবিসি স্টুডিওর ফিল্ম ডিভিশনের হেড আলী জাফর সতর্কতা অবলম্বন করেন, ‘ডিল হবে কি-না, কবে হবে, এখনো অনিশ্চিত। কিন্তু এতে সুযোগ আছে। এই অঞ্চলে টিভি-ফিল্ম প্রোডাকশনে ওএসএস প্ল্যাটফর্ম এইচবিও কনটেন্ট হারালে স্থানীয় কনটেন্টের সুযোগ বাড়বে। আরব প্রডিউসাররা নিজেদের গল্প বলার স্থান পাবেন।’
এই আলোচনা থেকে স্পষ্ট, হলিউডের এই বিশাল ডিল শুধু স্ট্রিমিং-থিয়েটারের লড়াই নয়- স্থানীয় স্টোরিটেলিং ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট ক্রিয়েটিভিটির নতুন দরজা খুলতে পারে।



