পুলিশের পাশাপাশি থাকবে বিশেষ বাহিনী
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন নির্বিঘ্নে করতে প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, তার আগমনের দিন পুলিশসহ অন্যান্য সংস্থার দুই হাজারের বেশি সদস্য মোতায়েন করা হতে পারে। নিরাপত্তা পরিকল্পনায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, সেখান থেকে ৩০০ ফিট সমাবেশ মঞ্চ, এরপর এভারকেয়ার হাসপাতাল হয়ে গুলশান পর্যন্ত যাওয়ার রাস্তা ও তার বাসভবনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্র জানায়, তারেক রহমান বিমানবন্দরে আসার পর তাকে বহনকারী গাড়ির আগে-পিছে পুলিশ প্রটেকশন দেবে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। ইউনিফর্মধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও গোয়েন্দারা তারেক রহমানের নিরাপত্তার দিকটি দেখভাল করবে। এ ছাড়া ওই দিন তার নিরাপত্তা নিশ্চিতে মাঠে থাকবে ঢাকা মহানগর পুলিশের সোয়াট টিম, বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা। তার বাসা ও অফিস ডগ স্কোয়াড দিয়ে সুইপিংয়ের মাধ্যমে নিরাপত্তার দায়িত্ব নেবে পুলিশ।
দলের পক্ষ থেকে তারেক রহমানের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা হিসেবে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) ড. এ কে এম শামছুল ইসলামকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তার নেতৃত্বে চেয়ারপারসন সিকিউরিটি ফোর্সসহ একাধিক টিম কাজ করবে। এ ছাড়া দলের বিশ্বস্ত নেতাকর্মীদের সমন্বয়েও একটি টিম গঠন করা হয়েছে।
পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা যায়, গুলশানে খালেদা জিয়ার বাসভবন ও তারেক রহমানের বাসভবন দেয়ালঘেঁষা হওয়ায় দু’টি বাসা ও তারেক রহমানের অফিসকে একই নিরাপত্তা পরিকল্পনার আওতায় আনা হচ্ছে। বিশেষ করে বাসা ও অফিসের মধ্যকার দূরত্ব ও চলাচলের পথকে নিরাপত্তা পরিকল্পনার গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
এদিকে নিরাপত্তাজনিত হুমকির কথা উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) নিরাপত্তার আবেদন জানিয়েছে দলটি। তবে এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি বলে জানা গেছে। সাধারণত বাংলাদেশে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, নির্দিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ (ভিভিআইপি) ও সফররত বিদেশী রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারপ্রধানদের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকে এসএসএফ। তবে এই তালিকার বাইরে কাউকে এসএসএফ নিরাপত্তা দিতে হলে সাধারণত সরকারের বিশেষ সিদ্ধান্তের প্রয়োজন হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, তারেক রহমান দেশে এলে তার নিরাপত্তা নিয়ে বিশেষ কোনো ঝুঁকির তথ্য নেই। তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। দেশে ফেরার পর তারেক রহমান যাতায়াতের সময় পাবেন পুলিশি পাহারাসহ বিশেষ নিরাপত্তা। এ ছাড়া তার বাসভবন ও অফিসেও থাকবে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা। নিরাপত্তা ছাড়পত্র ছাড়া কাউকে তার ধারে কাছে ভিড়তে দেবে না পুলিশ। ইউনিফর্মধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও গোয়েন্দারা তারেক রহমানের নিরাপত্তার দিকটি দেখভাল করবেন।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্রমতে, আগামীকাল প্রতিটি এলাকায় নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হবে এবং বিশেষ এসকর্টসহ একাধিক চেকপোস্ট থাকবে। বর্তমানে গুলশান, বনানী ও বারিধারা এলাকায় অন্তত ৯টি চেকপোস্ট চালু রয়েছে, যেখানে সার্বক্ষণিকভাবে ১৫০ জনেরও বেশি পুলিশ সদস্য নিয়োজিত আছেন। চেকপোস্টের সংখ্যা আরো বাড়ানো হতে পারে। প্রয়োজন অনুযায়ী তার বাসভবনের আশপাশেও নিরাপত্তা বাড়ানো হবে।
এয়ারলাইন্স সূত্রে জানা যায়, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকির আশঙ্কা বিবেচনায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটের দু’জন কেবিন ক্রুকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। এই ফ্লাইটেই তারেক রহমানের লন্ডন থেকে দেশে ফেরার কথা রয়েছে। আজ সন্ধ্যায় লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেবে বিমানের বিজি-২০২ ফ্লাইট। তারেক রহমান এই ফ্লাইটে চড়ে আগামীকাল বাংলাদেশে পৌঁছাবেন।
বিএনপি নেতারা বলছেন, তারেক রহমানকে স্বাগত জানাতে রাজধানীতে অন্তত ২০ লাখ লোকের সমাগম হবে। সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার প্রতি। বিমানবন্দর থেকে পূর্বাচলের ৩০০ ফুটের গণসংবর্ধনা স্থান এবং গুলশান পর্যন্ত কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে, সেদিকে খেয়াল রাখতে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নিরাপত্তার জন্য সরকারি বাহিনীর পাশাপাশি দল থেকেও নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। বিমানবন্দর থেকে সরাসরি তিনি যাবেন এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তার মা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে দেখতে। এরপর হাসপাতাল থেকে যাবেন সংবর্ধনাস্থলে। সেখান থেকে তার গুলশানের বাসভবনে যাওয়ার কথা রয়েছে।



