জাতিসঙ্ঘের সহায়তা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা

গুমের ঘটনা তদন্তে সরকারের পদক্ষেপ প্রশংসনীয়

জাতিসঙ্ঘের ওয়ার্কিং গ্রুপ

ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব রুহুল আলম সিদ্দিকীর সাথে জাতিসঙ্ঘের গুমবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপের ভাইস চেয়ারপারসন গ্রাজিনা বারানোভস্কা ও সদস্য আনা লোরেনা দেলগাদিলো পেরেজের বৈঠকে এ অভিমত ব্যক্ত করা হয়।

কূটনৈতিক প্রতিবেদক
Printed Edition

গুমের ঘটনা তদন্তে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেয়া পদক্ষেপের প্রশংসা করেছে জাতিসঙ্ঘ। বিশেষ করে গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদ ‘ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন ফর দ্য প্রটেকশন অব অল পারসনস ফ্রম এনফোর্সড ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স (আইসিপিপিইডি)’ -এ বাংলাদেশের সম্পৃক্ততাকে স্বাগত জানিয়েছে সংস্থাটি।

গতকাল ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব রুহুল আলম সিদ্দিকীর সাথে জাতিসঙ্ঘের গুমবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপের (ডব্লিউজিইআইডি) ভাইস চেয়ারপারসন গ্রাজিনা বারানোভস্কা ও সদস্য আনা লোরেনা দেলগাদিলো পেরেজের বৈঠকে এ অভিমত ব্যক্ত করা হয়।

বৈঠকে ডব্লিউজিইআইডির প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, ১৫ থেকে ১৯ জুন পর্যন্ত বাংলাদেশ সফরে গুমবিষয়ক বাস্তব চিত্র ও সরকারি উদ্যোগ পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তারা সরকার গঠিত গুমবিষয়ক তদন্ত কমিশনের (সিওআই) কার্যক্রম ও প্রতিশ্রুতিকে সাধুবাদ জানান। প্রতিনিধিরা গুম প্রতিরোধ এবং এ সংক্রান্ত অভিযোগ নিষ্পত্তিতে জাতিসঙ্ঘ ওয়ার্কিং গ্রুপের ম্যান্ডেটের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারকে আরো সহযোগিতা করার আগ্রহ প্রকাশ করেন।

রুহুল আলম সিদ্দিকী মানবাধিকার সমুন্নত রাখা, সুরক্ষা এবং গুমের শিকার ব্যক্তিদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে সরকারের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বাংলাদেশ সরকারের নেয়া পদক্ষেপগুলো সফলভাবে বাস্তবায়নে জাতিসঙ্ঘের অব্যাহত সমর্থন ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা কামনা করেন।

প্রসঙ্গত, প্রায় এক যুগ ধরে গুমের ঘটনা তদন্তের জন্য বাংলাদেশ সফরের অনুরোধ জানিয়ে আসছে ডব্লিউজিইআইডি। ২০১৩ সালের ১২ মার্চ সফরের জন্য প্রথম চিঠি দিলেও সাড়া দেয়নি তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। এর পর একাধিকবার অনুরোধ করলেও সাড়া মেলেনি। শেষবার ২০২০ সালের ২৪ এপ্রিল সফরের অনুমতি চেয়েছিল ডব্লিউজিইআইডি। কিন্তু তৎকালীন সরকার নিরব ছিল।

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনর সরকারের পতন হয়। এর পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে ডব্লিউজিইআইডি বাংলাদেশ সফরের অনুরোধ জানালে ইতিবাচক সাড়া মেলে। এই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে এলো জাতিসঙ্ঘের গুমবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপ।

গুমের ঘটনা তদন্তে জাতিসঙ্ঘের সহায়তা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা : প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, গত দেড় দশক ধরে জোরপূর্বক গুমের ঘটনা তদন্তে জাতিসঙ্ঘের যেকোনো সমর্থনকে বাংলাদেশ স্বাগত জানাবে। তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি জাতিসঙ্ঘ জোরপূর্বক গুমের ঘটনাগুলো নিয়ে আমাদের চলমান তদন্তের সঙ্গে যুক্ত থাকুক। এটি প্রক্রিয়াটিকে কিছুটা শক্তি দেবে।’

গতকাল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় জাতিসঙ্ঘের ওয়ার্কিং গ্রুপ অন এনফোর্সড অন ইনভলান্টারি ডিসঅ্যাপিয়ারেন্সের (ডব্লিউজিইআইডি) ভাইস চেয়ারপারসন গ্রাজিনা বারানোভস্কা এবং সদস্য আনা লোরেনা দেলগাদিলো পেরেজ সাক্ষাৎ করতে এলে তিনি এসব কথা বলেন। জাতিসঙ্ঘের কর্মকর্তারা জোরপূর্বক গুমের বিষয়টি মোকাবেলায় বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগের প্রশংসা করেন, বিশেষ করে গুম থেকে সবার সুরক্ষার আন্তর্জাতিক কনভেনশনে (আইসিপিপিইডি) বাংলাদেশের যোগদানের উদ্যোগের প্রশংসা করেন। তবে জোর দিয়ে বলেন, এখনো অনেক কিছু করার বাকি রয়েছে।

জাতিসঙ্ঘের কর্মকর্তারা জোরপূর্বক গুম সম্পর্কিত তদন্ত কমিশনের কাজ এবং প্রতিশ্রুতিরও প্রশংসা করেছেন। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘সরকার কমিশনের মেয়াদ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়াচ্ছে।’ বাংলা ট্রিবিউন।

তিনি বলেন, ‘কমিশনের সদস্যরা নানাভাবে হুমকি পেলেও তারা গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছে। তারা যখন সর্বশেষ প্রতিবেদন জমা দেন- তখন আমি তাদের বলেছিলাম, দর্শনার্থীদের জন্য একটি হরর মিউজিয়াম থাকা উচিত। আপনাদের সমর্থনও আমাদের দরকার। আমাদের সহযোগিতা ও সহায়তা প্রয়োজন।’

এক দশকেরও বেশি সময় পর বাংলাদেশ জাতিসঙ্ঘের প্রতিনিধিদলকে এখানে স্বাগত জানাতে পেরে প্রধান উপদেষ্টা সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত খুশি ১৩ বছরের অপেক্ষার পর আপনারা এখানে এসেছেন। আমরা চাই আপনি আমাদের কমিশনের কাজকে সমর্থন করুন। দিকনির্দেশনা ও শক্তি প্রদানের জন্য তাদের সঙ্গে আপনার সহযোগিতা বজায় রাখুন।’ এর জবাবে বারানোভস্কা বলেন, ২০১৩ সাল থেকে তারা বাংলাদেশে জোরপূর্বক গুম নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করছেন এবং তদন্ত কমিশন গঠনের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে ধন্যবাদ জানান তিনি। তিনি বলেন, ‘তদন্ত কমিশন ও তার কাজ এটা আপনার সরকারের অনেক বড় অঙ্গীকার। এ জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। এটা আমাদের জন্য অনেক বড় সম্মানের।’

বারানোভস্কা আরো বলেন, তারা ঢাকার বাইরে যাবেন এবং ভুক্তভোগী, সুশীল সমাজ ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।