আলজাজিরা
সুদানের দারফুর অঞ্চলের কৌশলগত শহর আল-ফাশারে র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) দখল ও গণহত্যার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে সৌদি আরব, মিসর, কাতার, তুরস্ক ও জর্দান। শহরটি সুদানি সেনাবাহিনীর শেষ ঘাঁটি ছিল, যা ১৭ মাসের অবরোধ শেষে আরএসএফ গত রোববার দখল করে নেয়।
সুদানি সরকার জানিয়েছে, আল-ফাশারে আরএসএফের হামলায় অন্তত ২,০০০ মানুষ নিহত হয়েছে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও ত্রাণ সংস্থার বরাতে জানা গেছে, শহরজুড়ে সাধারণ নাগরিকদের ওপর নির্বিচার হামলা, বাড়ি বাড়ি অভিযান, পালানোর পথে গুলি করে হত্যা এবং নারীদের ওপর যৌন সহিংসতা চালানো হয়েছে।
ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যানিটারিয়ান রিসার্চ ল্যাব স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণ করে জানিয়েছে, আল-ফাশারের দারাজা উলা এলাকায় আরএসএফ বাহিনীর যানবাহনের পাশে মানবদেহের আকৃতির বস্তু দেখা গেছে। মাটিতে লালচে দাগও রয়েছে, যা রক্তপাতের ইঙ্গিত দেয়। গবেষক নাথানিয়েল রেমন্ড বলেন, “এই সহিংসতার মাত্রা নজিরবিহীন। আমরা এমন দৃশ্য দেখছি যা গণহত্যার প্রমাণ হতে পারে।”
আরএসএফের বিরুদ্ধে এই অভিযোগগুলো এমন সময় উঠল, যখন জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস আল-ফাশারের পতনকে “ভয়াবহ উত্তেজনা বৃদ্ধি” হিসেবে আখ্যা দিয়ে যুদ্ধরত পক্ষগুলোর প্রতি বিদেশী সামরিক সহায়তা বন্ধের আহ্বান জানান। যদিও তিনি কোনো দেশের নাম উল্লেখ করেননি, তবে সুদানি কর্তৃপক্ষ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো বারবার সংযুক্ত আরব আমিরাতকে আরএসএফকে অস্ত্র সরবরাহের জন্য দায়ী করেছে যা আমিরাত অস্বীকার করেছে।
সৌদি আরব এক বিবৃতিতে “গভীর উদ্বেগ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের তীব্র নিন্দা” জানিয়ে আরএসএফ-এর প্রতি বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে। মিসর যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে সুদানের অখণ্ডতা রক্ষায় সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তুরস্ক ও কাতারও যুদ্ধ বন্ধ, মানবিক সহায়তার নিরাপদ প্রবেশ এবং সংলাপের মাধ্যমে সঙ্কট সমাধানের ওপর জোর দিয়েছে। জর্ডান বলেছে, “বেসামরিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি প্রয়োজন।”
আরএসএফ এই অভিযোগগুলোর বিষয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি। বাহিনীটি মূলত ২০০০-এর দশকে দারফুরে গণহত্যায় অভিযুক্ত জানজাওয়িদ মিলিশিয়া থেকে গড়ে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে আরএসএফ ও তাদের মিত্রদের বিরুদ্ধে বর্তমান সঙ্ঘাতে গণহত্যার অভিযোগ এনেছে।
ইয়েল রিসার্চ ল্যাব সতর্ক করেছে, আল-ফাশারে যা ঘটছে তা দারফুর ও উত্তর কোরডোফানে আরো ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের পূর্বাভাস হতে পারে। তারা বলেছে, “আরএসএফ ও তাদের পৃষ্ঠপোষকদের- বিশেষ করে আমিরাতের ওপর সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগ করতে হবে, এখনই হত্যাকাণ্ড বন্ধ করতে।”



