১৫ আগস্ট ঘিরে বিশৃঙ্খলার ছক পতিত আ’লীগের

১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী। অতীতের মতো এ দিন জাতীয় শোক দিবস ঘোষণা করে মাসব্যাপী কর্মসূচিও পালন করছে দলটি। ১৫ আগস্ট ধানমন্ডির ৩২ নম্বর শেখ মুজিবের প্রতিকৃতিতে এবং বনানীর কবরস্থানে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য দলটির এক বিবৃতিতে নেতাকর্মীদের আহ্বান জানানো হয়েছে। যদিও তাদের পরিকল্পনা রয়েছে ভিন্ন।

মনিরুল ইসলাম রোহান
Printed Edition

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়া আওয়ামী লীগ আবারো দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে পাল্টা সরকার পরিবর্তনের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে এমন আশঙ্কা ক্রমেই জোরাল হচ্ছে। গত ৫ আগস্ট ঘিরে নাশকতার যে ভয়াবহ পরিরকল্পনা করেছিল তা টের পেয়ে অন্তর্বর্তী সরকার আগেভাগেই কঠোর অবস্থানে চলে যায়। ওই দিনের পরিকল্পনা ব্যর্থ হওয়ার পর এবার ১৫ আগস্টকে কেন্দ্র করে পতিত আওয়ামী লীগ নাশকতার নতুন পরিকল্পনা সাজিয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।

সূত্রের বরাতে জানা গেছে, ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী। অতীতের মতো এ দিন জাতীয় শোক দিবস ঘোষণা করে মাসব্যাপী কর্মসূচিও পালন করছে দলটি। ১৫ আগস্ট ধানমন্ডির ৩২ নম্বর শেখ মুজিবের প্রতিকৃতিতে এবং বনানীর কবরস্থানে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য দলটির এক বিবৃতিতে নেতাকর্মীদের আহ্বান জানানো হয়েছে। যদিও তাদের পরিকল্পনা রয়েছে ভিন্ন। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ফুল দেয়ার কর্মসূচি নামেমাত্র হলেও এর মাধ্যমে একটি বড় ধরনের জনসমাগম ঘটানোর পরিকল্পনা রয়েছে পতিত আওয়ামী লীগের। ইতোমধ্যে নিষিদ্ধ ঘোষিত যুবলীগ, ছাত্রলীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগের অপরিচিতমুখগুলো রাজধানীর নিরাপদস্থানে অবস্থান করছেন। ওই দিন সকাল থেকেই গ্রেফতার এড়িয়ে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের অলিতে-গলিতে থাকার দলীয় নির্দেশনা রয়েছে। সুযোগ পেলেই শক্তি প্রদর্শনের এ মহড়ায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা নেতাকর্মীরা অংশ নেবেন। তা ছাড়া ওই মহড়ায় কেউ বাধা দিলে সুযোগ বুঝে পাল্টা আঘাতেরও চিন্তা রয়েছে। ভারতের দিল্লিতে অবস্থানরত শেখ হাসিনা সে দেশের একটি গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় বাংলাদেশের ভেতরে নাশকতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে ‘তৃতীয় শক্তির’ আবির্ভাব ঘটিয়ে অন্তর্

সূত্র জানায়, শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় গত মাসের শেষের দিকে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত কয়েক শ’ পৌর মেয়রের সাথে অনলাইনে বৈঠক হয়েছে। একইভাবে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এবং সাবেক এমপিদের সাথেও পর্যায়ক্রমে বৈঠক হয়েছে এবং হচ্ছে। বৈঠকের নির্দেশনার আলোকে এত দিন নিশ্চুপ থাকা প্রভাবশালী কিছু সাবেক এমপি সামাজিকযোগাযোগ মাধ্যমে হঠাৎ সরব হয়ে উঠেছেন। এর মাধ্যমে তারা নিজেদের সক্রিয় দলীয় অবস্থানের কথাও জানান দিচ্ছেন। অন্তর্বর্তী সরকারকে হটানোর বিষয়টিও তারা জোরালভাবে সামাজিকযোগাযোগ মাধ্যমে তুলে ধরছেন। এরই মধ্যে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের কাছে কিছু গোপন নির্দেশনাও পৌঁছে গেছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক টানাপড়েন, এনসিপি-বিএনপি দ্বন্দ্ব এবং ‘জুলাই সনদ’ নিয়ে অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে আওয়ামী লীগ একটি ভয়াবহ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির ছক আঁকছে। পাহাড়েও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির আশঙ্কা করা হচ্ছে। সারা দেশে সাংবাদিক হত্যাসহ মব সৃষ্টির কিছু নমুনা ইতোমধ্যে দেখা গেছে। ৫ আগস্ট বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারায় এখন ১৫ আগস্টকে সামনে রেখে পরিকল্পনা সাজিয়েছে পতিত আওয়ামী লীগ। ওই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য ‘চূড়ান্ত নির্দেশনা’ দিচ্ছেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা- এমন আভাসও মিলেছে। বিশ্বস্ত সূত্রগুলো বলছে, ওই পরিকল্পনায় রাজনৈতিকভাবে বিতাড়িত কিছু সাবেক আমলা, পুলিশ কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যও সম্পৃক্ত, যারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় থেকে শেখ হাসিনার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করছেন এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে ‘দ্বিতীয় দফা প্রতিশোধমূলক নাশকতার’ পরিকল্পনায় সহায়তা করছেন।

এ দিকে সরকারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত সন্তু লারমা চিকিৎসার অজুহাতে দীর্ঘদিন ভারতে অবস্থান করায় রাজনৈতিক মহলেও নানা প্রশ্ন উঠেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, পাহাড়ে সঙ্ঘাত উসকে দিয়ে সামরিক হস্তক্ষেপকে টেনে আনার পরিকল্পনা থাকতে পারে। এমন অভিযোগে সেনাবাহিনীকে সাবধান থাকতে বলছেন পর্যবেক্ষকরা।

এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট রাজনীতি বিশ্লেষক ড. আবদুল লতিফ মাসুম নয়া দিগন্তকে বলেন, ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনার মানসিক ভারসাম্য নষ্ট হয়ে গেছে। ভারতে বসে নিজ দেশের বিরুদ্ধে একের পর এক ষড়যন্ত্র করছে। তারা যেকোনো সময় বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে। এজন্য সরকারকে সর্বদা সতর্ক থাকতে হবে, যেন ফ্যাসিবাদী দোসররা দেশকে নতুন বিপদের দিকে ঠেলে না দেয়। তিনি পাহাড় ইস্যু নিয়ে বলেন, সন্তু লারমারাই শান্তির নামে অশান্তি সৃষ্টি করে আসছেন। বর্তমান সরকারের রাজনৈতিক ভিত্তি দুর্বল হলেও শক্ত অবস্থান না নিলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে।

প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দলটি প্রথমে ‘জুডিশিয়াল ক্যু’-এর মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারকে উৎখাতের চেষ্টা করে। পরে গ্রাম পুলিশ, আনসার, শ্রমিক, চাকরিজীবী, সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রদের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন সময় অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা চালিয়েছে। সম্প্রতি গোপালগঞ্জ ও সচিবালয়ের কিছু ঘটনায় নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সক্রিয় ভূমিকা ছিল বলে জানা গেছে। বিশ্লেষকদের মতে, ৫ আগস্ট সামনে রেখে দেশ এক উত্তপ্ত সপ্তাহের মুখোমুখি ছিল। ১৫ আগস্ট সামনে রেখেও দেশে প্রতিনিয়ত নানা অঘটন ঘটছে। সরকার, নিরাপত্তা বাহিনী ও জনসাধারণের সর্বোচ্চ সতর্কতা ছাড়া পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যেতে পারে।