বিশেষ সংবাদদাতা
গণতন্ত্রের ধারা বহমান রাখতে হলে সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গতকাল বৃহস্পতিবার ‘শহীদ জেহাদ দিবস’ উপলক্ষে এক বাণীতে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তারেক রহমান বলেন, স্বৈরশাসক এরশাদ গণতন্ত্রকে হত্যা করেছিল। গণতন্ত্রকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং দৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড় করানোর দৃঢ়-প্রত্যয় নিয়েই জেহাদ নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। আমরা তার সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে না পারলে তার আত্মা কষ্ট পাবে। গণতন্ত্রের ধারা বহমান রাখতে হলে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে হবে। গণতন্ত্র মানে শুধুমাত্র নির্বাচন নয়, গণতন্ত্র মানে মানুষের স্বাধীনতা ও মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা। তাই শহীদ জেহাদের আত্মত্যাগের প্রেরণাকে বুকে ধারণ করেই দেশী-বিদেশী অপশক্তির চক্রান্ত প্রতিহত, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে হবে।
তিনি বলেন, শহীদ জেহাদ দিবস উপলক্ষে আমি স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের অকুতোভয় সৈনিক শহীদ নাজির উদ্দিন জেহাদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। তার রূহের মাগফিরাত কামনা করি। শহীদ নাজির উদ্দিন জেহাদ ৯০’র স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে একটি অবিস্মরণীয় নাম।
তারেক রহমান বলেন, রক্তমাখা ওই আন্দোলন ছিল বহুদলীয় গণতন্ত্র, মত প্রকাশ ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার। নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী গণআন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে গিয়ে শহীদ জেহাদ পুলিশের বুলেট নিজের বুকে বরণ করে নেন। শাহাদতবরণ করেন এই অকুতোভয় ছাত্রনেতা। তার রক্ত স্রোতের ধারা বেয়েই সে বছর সংঘটিত হয় গণঅভ্যুত্থান, পতন হয় স্বৈরশাসক এরশাদের।
অপর এক বাণীতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলনে অগ্রসেনানী শহীদ নাজির উদ্দিন জেহাদের রূহের মাগফিরাত কামনা করছি এবং তার অম্লান স্মৃতির প্রতি আমি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি। শহীদ নাজির উদ্দিন জেহাদ বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ইতিহাসে এক চিরস্মরণীয় নাম।
তিনি বলেন, শহীদ জেহাদ নিজেকে উৎসর্গ করেছেন গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করতে। তার এই মহিমান্বিত আত্মদানের ফলেই স্বৈরশাহী এরশাদের পতন হয়। শুরু হয় সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা। নব্বইয়ে স্বৈরাচারী সরকারকে উৎখাত করে গণতন্ত্রের বিজয়ে তার অগ্রণী ভূমিকার জন্য জাতি হিসেবে আমরা গর্ববোধ করি।
মির্জা ফখরুল বলেন, যে স্বপ্ন ও আশা নিয়ে শহীদ নাজির উদ্দিন জেহাদ সে দিন স্বৈরাচারীর বুলেট নিজের বুকে বরণ করে নিয়েছিলেন, সেই স্বপ্ন পূরণে রাষ্ট্র ও সমাজের সব স্তরে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করাই হবে আমাদের মূল লক্ষ্য।
বিএনপির সাথে জার্মান রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ
বিশেষ সংবাদদাতা জানায়, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সাথে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত জার্মানির নতুন রাষ্ট্রদূত রুডিগার লোটজ। বৈঠকে বাংলাদেশ-জার্মানির আগামী দিনের সম্পর্ক ও দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য-বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সাক্ষাতে বিএনপি মহাসচিব ছাড়াও স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির ও সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকের পর এক সংবাদ সম্মেলনে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিএনপি আগামীতে ক্ষমতায় গেলে বড় কর্মসূচি হচ্ছে ১৮ মাসের মধ্যে এক কোটি লোকের কর্মসংস্থান ঘোষণা করেছে। সেই কর্মসূচির সফল করতে হলে আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য হলো, আমরা জোর দিচ্ছি স্কিল ডেভেলপমেন্ট। বিভিন্ন জায়গায় চাকরি করতে হলে স্কিল ডেভেলপমেন্ট প্রয়োজন। প্রযুক্তি ও আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্সে আমরা জোর দিচ্ছি এজন্য যে, প্রযুক্তি ছাড়া আসলে অর্থনীতিতে সামনে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। এই ক্ষেত্রে জার্মানির সহযোগিতা আমাদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আলোচনা করেছি কিভাবে আমরা স্কিল ডেভেলপমেন্ট করতে পারি আগামী দিনে।
জার্মান বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে খসরু বলেন, আমরা তাদের বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনা করেছি। জার্মানরা চীনে বিনিয়োগ করেছে, ভারতেও কিছু বিনিয়োগ করেছে। ইতোমধ্যে তারা মনে করেছে বাংলাদেশে আগামী দিনে বিনিয়োগের জন্য ভালো ডেসটিনেশন। সেজন্য বাংলাদেশে জার্মান বিনিয়োগ তাদের ইন্টারেস্ট আছে এবং উদ্যোগ আছে। আমাদেরও প্রত্যাশা আছে।
বিনিয়োগের পরিবেশ সম্পর্কে বিএনপির কর্মপরিকল্পনা কী হবে তা ইতোমধ্যে প্রত্যেকটি দূতাবাসে পাঠিয়েছেন বলে জানান আমীর খসরু।
তিনি বলেন, শুধু জার্মান বিনিয়োগ নয়, সব দেশই বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে চায়। সবাই নির্বাচনের অপেক্ষায় আছে। প্রত্যেকের সাথে আলাপ-আলোচনা হচ্ছে, তার শেষ কথা হচ্ছে যত তাড়াতাড়ি নির্বাচন হয়ে নির্বাচিত সরকার আসবে, যাতে যেখানে শর্ট টার্ম, মিড টার্ম ও লং টার্ম সিদ্ধান্তগুলো নিতে পারে। সেজন্য তারা অপেক্ষায় আছে সুষ্ঠু, অবাধ, নির্বাচনের মাধ্যমে একটি জবাবদিহিতমূলক নির্বাচিত সরকার হবে।