রোববার সূচকের পতন দিয়ে সপ্তাহ শুরু করা দেশের পুঁজিবাজারগুলো গতকাল বৃহস্পতিবার একইভাবে সপ্তাহ শেষ করেছে। উপরন্তু পতনের মাত্রা আরো বেড়েছে। দেশের পুঁজিবাজারের আগের ইতিহাসকে মিথ্যা প্রমাণ করে বুধবার বিনিয়োগকারীদের বিক্ষোভের পর গতকাল এ পতন আরো বেড়ে যায়। এভাবে গতকাল পতন গড়ায় নবম দিনে। আর এ পতনের ফলে সাত মাস পর আবার পাঁচ হাজার পয়েন্টের নিচে নামল দেশের প্রধান পুঁজিবাজারের প্রধান সূচক।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচকটি গতকাল ৪৯ দশমিক ৮৭ পয়েন্ট অবনতির শিকার হয়। পাঁচ হাজার ২২ দশমিক ৪৭ পয়েন্ট থেকে দিন শুরু করা সূচকটি বৃহস্পতিবার দিনশেষে চার হাজার ৯৭২ দশমিক ৩৯ পয়েন্টে স্থির হয়। এর আগে সর্বশেষ গত বছরের ১ অক্টোবর পাঁচ হাজার পয়েন্টের নিচে ছিল সূচক। পরবর্তীতে পতন সামলে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরলে ওই মাসেই পাঁচ হাজার ৫০০ পয়েন্টের ঘর অতিক্রম করে বাজার সূচকটি। প্রধান সূচকটির মতোই গতকাল বৃহস্পতিবার ডিএসইর অন্য দুই সূচক ডিএসই-৩০ ও ডিএসই শরিয়াহ হারায় যথাক্রমে ২২ দশমিক ৫১ ও ১৬ দশমিক ৫০ পয়েন্ট।
অন্যদিকে দ্বিতীয় পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সূচকের মিশ্র আচরণ দেখা যায়। এখানে সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই ৫৪ দশমিক ৩৭ পয়েন্ট অবনতির শিকার ছিল। অন্যদিকে সিএসই-৩০ সূচকটি ২৭ দশমিক ৭৭ পয়েন্ট উন্নতি ধরে রাখলেও সিএসসিএক্স সূচকের অবনতি ঘটে ২৫ দশমিক ৬০ পয়েন্ট।
এ দিকে সূচকের অবনতি সত্ত্বেও গতকাল দুই পুঁজিবাজারেই লেনদেনের কমবেশি উন্নতি ঘটে। এ দিন ডিএসই ৩৬৭ কোটি টাকার লেনদেন নিষ্পত্তি করে যা আগের দিন অপেক্ষা ৬৭ কোটি টাকা বেশি। বুধবার বাজারটির লেনদেন ছিল ৩০০ কোটি টাকা। চট্টগ্রাম শেয়ারবাজারে চার কোটি ৮৩ লাখ টাকা থেকে সাত কোটি ১৩ লাখ টাকায় পৌঁছে লেনদেন।
সূচকের টানা এ পতনের জন্য বাজার সংশ্লিষ্টরা মার্জিন ঋণের নেগেটিভ ইক্যুইটিকে দায়ী মনে করছেন। তাদের মতে, বাজার যখন কিছুটা ভালো হয় তখন বিনিয়োগকারীদের একটি বড় অংশই ঋণসুবিধা নিয়ে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। আর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নিজেদের ব্যবসার চিন্তা মাথায় রেখে ব্রোকার হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের এ ঋণের জোগান দিয়ে থাকেন। কিন্তু পরবর্তীতে বাজারে মন্দা দেখা দিলে উভয়ের জন্য এ বিনিয়োগ গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়ায়। গত কয়েক বছর ধরে টানা মন্দার ফলে এ ঋণ বিনিয়োগকারীদের ওপর বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর ব্রোকার হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর হাতেও নিজেদের বিনিয়োগ নিরাপদ রাখতে ফোর্স সেল ছাড়া বিকল্প নেই। আর এটাই ধারাবাহিক পতনের শিকার বানাচ্ছে পুঁজিবাজারকে।
সাম্প্রতিক দিনগুলোতে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বেশ কয়েকবার উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে ব্রোকার হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর সাথে এ নেগেটিভ ইক্যুইটির পরিকল্পিত ব্যবস্থাপনা নিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানে পৌঁছার চেষ্টা করলেও তা বাজারে খুব একটা সুফল বয়ে আনতে পারেনি।
সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে গতকাল দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনের শীর্ষে উঠে এসেছে বিচ হ্যাচারি লিমিটেড। গতকাল কোম্পানিটির ৪৫ কোটি ৯৫ লাখ টাকায় ৭৭ লাখ ৬৫ হাজার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এটি ডিএসইর মোট লেনদেনের প্রায় ১২ শতাংশ। লেনদেনের শীর্ষ তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা ফাইন ফুডসের লেনদেন হয়েছে ১৩ কোটি টাকায় ৬৪ লাখ ৫৯ হাজার শেয়ার। আর ১০ কোটি ৬৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন নিয়ে শীর্ষ তালিকার তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসি।
লেনদেনের শীর্ষ তালিকায় থাকা অন্যান্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে- শাহজিবাজার পাওয়ার কোম্পানি, লাভেলো আইসক্রিম, শাইনপুকুর সিরামিকস, এনার্জিপ্যাক পাওয়ার জেনারেশন, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, ডরিন পাওয়ার এবং বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড।
অপর দিকে চট্টগ্রাম শেয়ারবাজারের লেনদেনের শীর্ষ ১০ কোম্পানির তালিকায় ছিল যথাক্রমে ক্রাউন সিমেন্ট, লাভেলো আইসক্রিম, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস, বিচ হ্যাচারি, রবি অজিয়াটা, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ, এনার্জি প্যাক পাওয়ার জেনারেশন, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও উত্তরা ব্যাংক।
সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেনে অংশ নেয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষে উঠে এসেছে এনার্জিপ্যাক পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেড। এদিন কোম্পানির শেয়ারদর আগের দিনের চেয়ে এক টাকা ৯০ পয়সা বা ৯ দশমিক ২৬ শতাংশ বেড়েছে। তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা তাকাফুল ইসলামী ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারদর আগের দিনের চেয়ে ৪ দশমিক ৬৭ শতাংশ বেড়েছে। তালিকায় তৃতীয় স্থানে থাকা প্রভাতী ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারদর আগের দিনের চেয়ে ৪ দশমিক ৪৪ শতাংশ বেড়েছে।
তালিকায় থাকা অন্যান্য কোম্পানির মধ্যে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ, সোনালি পেপার বোর্ড মিলস, এনআরবি ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ইসলামী ইন্স্যুরেন্স, এসইএমএল লেকচার ইক্যুইটি ফান্ড, ডরিন পাওয়ার এবং স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক পিএলসি।
বৃহস্পতিবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেনে অংশ নেয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দরপতনের তালিকায় শীর্ষে উঠে এসেছে খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেড। এদিন খুলনা প্রিন্টিংয়ের শেয়ারদর আগের কার্যদিবসের তুলনায় কমেছে দুই টাকা বা ৯ দশমিক ৭০ শতাংশ। তাতে দরপতনের শীর্ষে জায়গা নিয়েছে কোম্পানিটি। দর হারানোর তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসা বিচ হ্যাচারির শেয়ারদর আগের দিনের তুলনায় ৯ দশমিক ৪৭ শতাংশ কমেছে। আর শেয়ারদর ৮ দশমিক ৮২ শতাংশ হ্রাস পাওয়ায় তালিকার তৃতীয় স্থানে ছিল ফার ইস্ট ফাইন্যান্স। এ দিন দরপতনের তালিকায় উঠে আসা অন্যান্য কোম্পানিগুলো হলো- এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলস, জেমিনি সি ফুড, হামি ইন্ডাস্ট্রিজ, ইসলামী ব্যাংক, খান ব্রাদার্স, সাইফ পাওয়ারটেক এবং মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড।