এশিয়া কাপের আগে পাওয়ার হিটিং নিয়ে অনেক কাজ হয়েছে। সেই কাজ করতে গিয়ে সিঙ্গেল নেয়ার অভ্যাস কি মরে গেল কি না- সেটাও একটা প্রশ্ন। ধীরে-সুস্থে খেলে ১৩৬ রান তাড়া করার বিশ্বাসই যেন ছিল না গোটা দলের। শুরু থেকে তারা স্নায়ুচাপেই ছিলেন। বড় মঞ্চে মেলে ধরার মানসিক সামর্থ্যই ছিল না টাইগারদের। পাকিস্তানের বিপক্ষে যখন বাংলাদেশ নামল অলিখিত সেমিফাইনালে, তখন বড় ভরসা লিটন দাস ছিলেন ডাগআউটে। দেখতে হলো সতীর্থদের একের পর এক ব্যর্থতা। তৌহিদ হৃদয়, পারভেজ ইমন, জাকের আলী-কারও ব্যাটই জ্বলে উঠেনি। ১১ রানের হারে শেষ হলো টাইগারদের এশিয়া কাপ স্বপ্ন। ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলতে পারেননি লিটন। তার অনুপস্থিতিতে নেতৃত্বের দায়িত্ব পান জাকের। তিনি ভারতের বিপক্ষে চার ও পাকিস্তানের বিপক্ষে পাঁচ রান করেছেন। নতুন নেতৃত্বে আসেনি কোনো ঝলক।
এশিয়া কাপের ব্যর্থতা দুইদিন পরই ভুলে যাবেন ক্রিকেটাররা। নতুন স্বপ্ন দেখাবেন। কিন্তু সেই স্বপ্ন, স্বপ্নই থেকে যাবে। সাবেক বিসিবি প্রধান নাজমুল হোসেন পাপনের সেরা উক্তিটিই মনে হয় ক্রিকেটাররা লালন করছেন, ‘আমাদের টার্গেট পরের বিশ্বকাপ।’ কেউ না আবার বলে বসেন, আমাদের লক্ষ্য পরবর্তী এশিয়া কাপ।’
পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ রিডিং, পিচ রিডিং, পরিস্থিতি অনুযায়ী শট নির্বাচন, সবকিছুর ঘাটতি ছিল। ব্যাটারদের দেখে মনে হয়েছে তারা যেন ২০০ রানের লক্ষ্য তাড়ায় নেমেছেন! অথচ একটু বুঝে শুনে ব্যাটিং করলে, পরিকল্পনা নিলে জয়টা খুব দূরে ছিল না। মাঠে নেমে ব্যাটাররা যেন ছক্কা মারার প্রতিযোগিতায় নেমেছিলেন। দলের সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাওয়া ফিনিশার জাকের আলীও ছিলেন ব্যর্থ। এশিয়া কাপে ৬৬ বল খেলে একটি ছয়ও মারতে পারেননি।
কিংবদন্তি ওয়াসিম আকরাম জানিয়েছেন, ‘ব্যাটিংটাই বাংলাদেশকে ভুগিয়েছে। বাজে শট খেলেছে। পাশাপাশি ফর্মে থাকা অধিনায়ক লিটন দাসকে বাংলাদেশ খুব মিস করেছে।’
প্রধান কোচ ফিল সিমন্সও একই সুরে বলেন, ‘আমরা এখনো এমন দল হয়ে উঠতে পারিনি যেখানে অধিনায়ককে হারিয়ে সেই জায়গা পূরণ করা সম্ভব।’
ব্যাটারদের ব্যর্থতার বিপরীতে সাইফ হাসান ও বোলাররা কিছুটা আলো দেখিয়েছেন। টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ১৭৮ রান করেছেন সাইফ। গড় ৪৪.৬০ ও স্ট্রাইকরেট ১২৮.০৫। বোলারদের মধ্যে মোস্তাফিজ নিয়েছেন মোট ৯ উইকেট, আর তিন উইকেট নিয়েছেন তাসকিন আহমেদ।
ভারতের সাবেক ক্রিকেটার দিনেশ কার্তিকের মতে, ‘জাকের খুব বাজে ব্যাটিং করেছেন। স্পিনের বিপক্ষে স্ট্রাইক রোটেট করতে পারেননি। আফগানিস্তাকে ২০২৩ বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকায় খেলে ২০২৪ বিশ্বকাপে সেমিতে উঠে গেল। অথচ বাংলাদেশ ২৫ বছর ধরে খেলে আন্তর্জাতিক মঞ্চে সেমিতে উঠতে পারে না- এটা ভালো বার্তা নয়।’
কে সাজিয়েছেন এমন একাদশ? মিডল অর্ডার ছাড়া কিভাবেই বা ব্যাটিং লাইন আপ সাজানো হয়েছিল? পাকিস্তানের মতন বড় প্রতিপক্ষের কাছে হারতেই পারে। তবে হারের ধরন, খেলার ধরন, একাদশ, ব্যাটিং লাইন-আপ নিয়ে উঠেছে অনেক প্রশ্ন। নাগালে থাকা একটা ম্যাচ এমন অদ্ভুতুড়ে পরিকল্পনায় হাতছাড়া। টিম ম্যানেজমেন্টও চুপ। মিলছে না জবাব।
টপ অর্ডারে লিটনের জায়গা ফাঁকা, সেখানে আরেকজন টপ অর্ডার (তানজিদ হাসান) বসিয়ে একাদশে নেন লোয়ার অর্ডার ব্যাটার নুরুল হাসান সোহানকে। বাংলাদেশ মূলত খেলেছে তিনজন টপ অর্ডার আর বাকি সব লোয়ার অর্ডার ব্যাটার নিয়ে। দুই ওপেনারের পর তৌহিদ হৃদয় নেমেছেন তিনে, যিনি মূলত চারে সামলান মিডল অর্ডারের দায়িত্ব। হৃদয় উপরে উঠে যাওয়ায় চারে পাঠিয়ে দেয়া হয় শেখ মাহেদীকে, আন্তর্জাতিক টি-২০তে যার ব্যাটিং গড় ১১.৬৯! সিমন্স দিলেন বিস্ময়কর ব্যাখ্যা। পেস বোলারদের আক্রমণ করতেই নাকি পাঠানো হয় তাকে। অথচ ঘরোয়া ক্রিকেটে পেস বলের বিপক্ষেই বেশি দুর্বল মাহেদী।
২৯ রানে তিন উইকেট হারানোর পর শেখ মাহেদীর সাথে পাঁচে পাঠানো হয় সোহানকে। দু’জনেই মূলত লোয়ার মিডল অর্ডার ব্যাটার, খেলে থাকেন সøগ ওভারে। পাওয়ার প্লের ভেতর নেমে তারা যেন পড়েন অকূল সাগরে। সিমন্স জানান এভাবেই নাকি তারা শ্রীলঙ্কার ১৭০ রান তাড়া করে জিতেছিলেন। কিন্তু সেদিন মূলত দুই ওপেনার ছাড়াও তিনে লিটন ছিলেন, তিনি পাওয়ার প্লেতে রেখেছিলেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।



