- মন্ত্রণালয়ের নীরব ভূমিকায় ক্ষুব্ধ শিক্ষা পরিবার
- আজ থেকে ‘নো প্রমোশন নো ওয়ার্ক’ কর্মসূচি
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিতর্কিত বিধিবহির্ভূত আদেশের কারণে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পাচ্ছেন না শিক্ষা ক্যাডারের কয়েক হাজার কর্মকর্তা। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি), বিসিএস শিক্ষা সমিতি এবং পদোন্নতি প্রত্যাশী (৩২তম থেকে ৩৭তম ব্যাচ) ক্যাডার কর্মকর্তারা এ সমস্যার সমাধানে বারবার মন্ত্রণালয়কে তাগাদা দিলেও কর্তৃপক্ষ ভ্রƒক্ষেপ করছে না। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ চলতি বছরে জুন ও নভেম্বর মাসে দু’দফায় একাধিকবার ডিপিসি (ডিপার্টমেন্টাল প্রমোশন কমিটি) সভা করেও মামলা জটিলতার অজুহাতে পদোন্নতির আদেশ জারি করছে না মন্ত্রণালয়। এতে চরম ক্ষুব্ধ ও হতাশ হয়ে আন্দোলনে নেমেছেন তারা। এ দিকে আজ রোববার থেকে ‘নো প্রমোশন নো ওয়ার্ক’ কর্মসূচিতে যাচ্ছেন এ পদোন্নতি প্রাত্যাশীরা।
শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা জানান, মন্ত্রণালয়ের বিতর্কিত ২০০০ বিধিমালা প্রণয়নকালে নেয়া হয়নি আইন মন্ত্রণালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মতামত। বিতর্কিত এ বিধি ৬(৫) অনুযায়ী আত্মীকৃত শিক্ষকগণ সব যোগ্যতা অর্জন করার পর নিয়মিতকরণ হলে তখন ক্যাডার কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রভাবশালী কর্মকর্তা ২০২৪ সালে একটি বিশেষ সময়ে বিধিমালা ২০০০ অমান্য করে একটি বিশেষ মহলকে সুবিধা দিতে একই তারিখ ও স্মারকে স্থলাভিষিক্ত করে ৫৪টি আদেশ জারি করে। এসব আদেশে প্রায় ২০০০ আত্মীকৃত শিক্ষক ক্যাডার হিসেবে যুক্ত হওয়ার সুযোগ পায়। এ ৫৪টি অবৈধ আদেশ বাতিলের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত ক্যাডার কর্মকর্তারা ২০২৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মাধ্যম হয়ে সিনিয়র সচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন।
মাউশি ২০২৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর থেকে ২০২৫ সালের ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত ১১টি আবেদনের প্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে প্রতিবেদনসহ মীমাংসা চেয়ে চিঠি দিলেও সেই চিঠির বিষয়ে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে প্রভাষক থেকে সহকারী অধ্যাপক পর্যায়ের পদোন্নতি গত ১৭ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। সর্বশেষ পদোন্নতির জন্য চলতি বছরের ৪ জুন প্রথম দফায় ডিপিসি (ডিপার্টমেন্টাল প্রমোশন কমিটি) বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু সেই বৈঠকের পর গত পাঁচ মাস পার হলেও পদোন্নতি দেয়া হয়নি। আত্মীকৃত শিক্ষকদের মামলার অজুহাতে এ পদোন্নতি প্রক্রিয়া বন্ধ রাখে মন্ত্রণালয়। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ আদালত পদোন্নতিতে স্থগিত নির্দেশ দেননি, অথচ মন্ত্রণালয়ে পদোন্নতি স্থগিত রেখেছে।
ভুক্তভোগী শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তরা ৪ জুনের ডিপিসির পর গত ৬ মাস ধরে মন্ত্রণালয় ও মাউশি কর্তৃপক্ষকে বিধি সংশোধন ও মামলার বিষয়টি সুরাহা করে পদোন্নতির দাবি জানান। কিন্তু কোনো সমাধান না পেয়ে পদোন্নতির অপেক্ষা দীর্ঘ হতে থাকায় শেষ পর্যন্ত আন্দোলনে নামেন ক্ষুব্ধ প্রভাষকরা। এ প্রেক্ষাপটে গত ৩০ অক্টোবর পদোন্নতি বঞ্চিত কর্মকর্তারা ‘বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার প্রভাষক পরিষদ’ ব্যানারে দ্রুত পদোন্নতির দাবিতে মাউশির সামেনে অবস্থান, মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করে।
আন্দোলনের মুখে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ৬ নভেম্বর ও পরবর্তীতে একাধিক ডিপিসি সভা করে। ডিপিসি কমিটি পদোন্নতির সিদ্ধান্ত নিলেও কোনো আদেশ জারি করেনি। মন্ত্রণালয়ের সূত্রমতে, আত্মীকৃতদের মামলা জটিলতার কারণে আদেশ জারির মুহূর্তে হঠাৎ আটকে যায় ১২ বছর ধরে পদোন্নতি বঞ্চিত শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদোন্নতি।
এ দিকে আন্দোলনকারী প্রভাষকরা ৯ নভেম্বর সারা দেশে সব সরকারি কলেজে মানববন্ধন কর্মসূচি এবং সব জেলা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে। সংবাদ সম্মেলনে তারা ঘোষণা দিয়েছিলেন যে ১৩ নভেম্বরের মধ্যে পদোন্নতির আদেশ জারি না হলে ১৬ নভেম্বর ‘নো প্রমোশন, নো ওয়ার্ক’ লাগাতার কঠোর কর্মসূচি দিবেন।
ভুক্তভোগীরা জানান, অন্য ক্যাডারের ৩৬তম ব্যাচ ২০২৩ সালে এবং ৩৭তম ব্যাচ ২০২৪ সালে পদোন্নতি পেয়েছে। চলতি সপ্তাহেও বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারে পঁাঁচ শতাধিকেরও অধিক কর্মকর্তার সুপারনিউমারি পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। অথচ শিক্ষা ক্যাডারে প্রভাষক পর্যায়ের ৩২-৩৭ ব্যাচ পর্যন্ত প্রায় আড়াই হাজার কর্মকর্তা পদোন্নতির সব যোগ্যতা অর্জন করেও পদোন্নতি পাচ্ছেন না। ভুক্তভোগী ক্যাডার কর্মকর্তারা আরো জানান, শিক্ষা ক্যাডারের ৩২তম ব্যাচ থেকে ৩৭তম ব্যাচ পর্যন্ত পদোন্নতি যোগ্যদের অনতিবিলম্বে পদোন্নতি চাই। সরকার ইচ্ছে করলেই আমাদের পদোন্নতি দিতে পারে। এজন্য প্রয়োজন উদ্যোগ গ্রহণ করা ও যথেষ্ট সদিচ্ছা থাকা। কেননা পদোন্নতিযোগ্যদের তালিকায় থাকা ৩৫ ব্যাচ পর্যন্ত কর্মকর্তাদের পদোন্নতিতে সরকারের কোন আর্থিক সংশ্লেষ থাকছে না।
জানা গেছে, ৩২তম ও ৩৩তম বিসিএস ব্যাচের প্রায় চার শতাধিক প্রভাষক চাকরিতে যোগদানের এক যুগ পরেও প্রথম পদোন্নতি পাননি। এ ছাড়া ৩৪তম বিসিএস ১০ বছর ৩৫তম বিসিএস ৯ বছর বছর এবং ৩৬তম বিসিএস ৮ বছর, ৩৭তম বিসিএস ৭ বছরে পার করলেও পদোন্নতি পাচ্ছেন না। প্রভাষক হতে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির লক্ষ্যে গ্রেডেশনভুক্ত কর্মকর্তার সংখ্যায় ৩২তম বিসিএসে রয়েছেন ৫৪ জন, ৩৩তম বিসিএসে ৩৬১ জন, ৩৪তম বিসিএসে ৬৩১ জন, ৩৫তম বিসিএসে ৭৪০ জন ৩৬তম বিসিএসে ৪৬০ জন এবং ৩৭তম বিসিএসে ১৫৩ জন। এ বিষয়ে দ্রুত সুরাহা চেয়েছেন প্রমোশন না পাওয়া এ বিশাল সংখ্যার শিক্ষা ক্যাডারের প্রভাষক পদের কর্মকর্তারা।



