- অবৈধ বালু উত্তোলনকে দায়ী করছেন স্থানীয়রা
- ৮ বার স্থানান্তর করা হয়েছে লস্করপুর খেয়াঘাট
- ভাঙনঝুঁকিতে আদনান হাফিজিয়া মাদরাসা ও এতিমখানা
বরিশালের বানারীপাড়া ও উজিরপুর উপজেলায় সন্ধ্যা নদীর তীব্র ভাঙনে ১০ গ্রামের মানুষের মাঝে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। ইতোমধ্যে এসব গ্রামের অনেক বিস্তীর্ণ এলাকা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।
বর্তমানে ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে বানারীপাড়া উপজেলার চাখার ইউনিয়নের চিরাপাড়া গ্রামের আদনান হাফিজিয়া মাদরাসা ও এতিমখানা এবং চিরাপাড়া শের-ই-বাংলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এ ছাড়াও সন্ধ্যা নদীর ভাঙনে উজিরপুর উপজেলার বরাকোঠা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম, ব্যবসায়িক বাজার ও বসতবাড়িও ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে। গত দুই মাসে নদীর তীব্র স্রোতে ভাঙন বেড়েছে আগের চেয়ে কয়েকগুণ। ভাঙন ঠেকাতে ওই স্থানে নদীর তীরে ব্লক নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। ভাঙনে এরই মধ্যে বিলীন হয়েছে একাধিক গ্রাম, রাস্তাঘাট, বাজারসহ বিভিন্ন স্থাপনা। চাখার ইউনিয়নের প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকা ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। বানারীপাড়া ও উজিরপুর উপজেলার চিরাপাড়া, চালিতা বাড়ি, বড় চাউলকাঠি, লস্করপুর, নারকেলী ১০টির বেশি গ্রাম রয়েছে ভাঙনের মুখে।
সন্ধ্যা নদীর ভাঙনের কারণে গত দুই বছরে লস্করপুর খেয়াঘাট আট দফা স্থানান্তর করা হয়েছে বলেও জানান তারা।
স্থানীয় বাসিন্দা খোকন হোসেন জানান, লস্করপুর মূল বাজার এখন সন্ধ্যা নদীর মাঝে চলে গেছে। এরই মধ্যে লস্করপুর খেয়াঘাট ও বাজারের অন্তত ২০টি দোকান এবং কয়েক শ’ ঘরবাড়ি বিলীন হয়েছে। চিরাপাড়া গ্রামের বিদ্যালয়, ঘরবাড়ি, মসজিদ, এতিমখানাসহ বেশ কিছু স্থাপনা রয়েছে ভাঙনের ঝুঁকিতে।
সন্ধ্যা নদী পাড়ের বাসিন্দা আছমা বেগম জানান, যুগ যুগ ধরে এই নদীর দুই পাড় ভাঙছে। প্রতিনিয়ত এলাকার সব স্থাপনা ও গাছপালা ভাঙনে বিলীন হচ্ছে। ভাঙন রোধে সরকার কোনো পদক্ষেপ না নিলে এই এলাকা রক্ষা করা যাবে না।
বালু উত্তোলন বন্ধ না হলে বাঁধ দিয়েও জমি-বাড়িঘর রক্ষা করা যাবে না বলে জানালেন রহিমা বেগম নামে নদী পাড়ের এক নারী। তিনি বলেন, নদীভাঙনে বহুবার বাড়িঘর হারিয়েছি। এখনো হারানোর আতঙ্কে থাকি। যখন অবৈধ ড্রেজার চলার শব্দ হয়, তখন নিজের মনকে বোঝানো ছাড়া প্রতিবাদ করার আর কোনো উপায় থাকে না। প্রশাসন যদি কঠোর হয়, তাহলে এদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
আদনান হাফিজিয়া মাদরাসা ও এতিমখানার পরিচালক হাফেজ মাওলানা মিজানুর রহমান বলেন, জরুরি ভিত্তিতে নদী শাসনের উদ্যোগ না নিলে ভাঙন ঠেকানো সম্ভব হবে না।
স্থানীয়রা জানান, বালুমহাল ছাড়া নদী থেকে বালু উত্তোলন অবৈধ। কয়েক বছর ধরে রাতের আঁধারে সন্ধ্যা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু কাটা হচ্ছে।
তাদের অভিযোগ, রাতে ড্রেজার দিয়ে বালু তোলা হলেও দিনে সেগুলো দেখা যাচ্ছে না। দিনের বেলা ড্রেজারগুলো নদী থেকে খালে অন্যত্র সরিয়ে রাখা হচ্ছে। ফলে দিনে নদীর দিকে তাকালে কিছু বোঝার উপায় থাকছে না।
বানারীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বায়েজিদুর রহমান জানান, ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানানো হয়েছে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে শিগগিরই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উজিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলী সুজা বলেন, সন্ধ্যা নদীর ভাঙনের কবলে রয়েছে উপজেলার বিভিন্ন জনপদ। এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জাবেদ ইকবাল জানান, সন্ধ্যা নদীর ভাঙন রোধে আমাদের সমীক্ষা চলছে। সমীক্ষা রিপোর্ট অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।
এ দিকে বাবুগঞ্জে সন্ধ্যা ও আড়িয়াল খাঁ নদীর ভাঙন আরো তীব্রতর হয়েছে। গত শুক্রবার ২৫ জুলাই গভীর রাতে ১ ঘণ্টার ব্যবধানে ৪টি বসতঘরসহ বেশ কিছু স্থাপনা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এখনো ভাঙনের ঝুঁকিতে আছে সবুজ বাংলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ চরহোগল পাতিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও স্থানীয় একটি জামে মসজিদসহ আরো শতাধিক বাড়িঘর ও আশপাশের এলাকা।
গত কয়েক দিনে বাবুগঞ্জের সন্ধ্যা, সুগন্ধা ও আড়িয়াল খাঁ নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় এ ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে। এতে আতঙ্কে রয়েছে উপজেলার জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়নের দক্ষিণ চরহোগল পাতিয়া গ্রাম সহ বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ।
গতকাল শনিবার দুপুরে সরেজমিন পরিদর্শনকালে দেখা যায়, বাবুগঞ্জের জাহাঙ্গীর নগর ইউনিয়নের দক্ষিণ চরহোগল পাতিয়া গ্রামে আকস্মিক নদী ভাঙনে চারটি পরিবারের বসতবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনকবলিত এলাকার বাসিন্দারা জানায়, শুক্রবার গভীর রাতে উপজেলার সন্ধ্যা নদীর আকস্মিক ভাঙনে বসতিগুলো বিলীন হয়ে যায় । এ সময় নদী পাড়ের গাছপালাও নদীতে তলিয়ে যায়। ওই এলাকার সবুজ বাংলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ চরহোগল পাতিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও স্থানীয় জামে মসজিদ, ভাঙ্গারমুখ লঞ্চঘাটসহ ২৫টি বসত ঘর হুমকির মুখ রয়েছে। যেকোনো মুহূর্তে এই স্থাপনাগুলো ভেঙে নদীতে পড়ে যেতে পারে।
এ ছাড়াও ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে বানারীপাড়া উপজেলার চাখার ইউনিয়নের চিরাপাড়া গ্রামের আদনান হাফিজিয়া মাদরাসা ও এতিমখানা এবং চিরাপাড়া শের-ই বাংলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সন্ধ্যা নদীর ভাঙনে উজিরপুর উপজেলার বরাকোঠা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম, ব্যবসায়িক বাজার ও বসতবাড়িও ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে। গত ২ মাসে নদীর তীব্র স্রোতে ভাঙন বেড়েছে আগের চেয়ে কয়েক গুণ। ভাঙন ঠেকাতে ওই স্থানে নদীর তীরে ব্লক নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। তারা আরো জানান, সন্ধ্যা নদীর ভাঙনে গত দুই বছরে লস্করপুর খেয়াঘাট আট দফা স্থানান্তর করা হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা খোকন হোসেন জানান, লস্করপুর মূল বাজার এখন সন্ধ্যা নদীর মাঝে চলে গেছে। এরই মধ্যে লস্করপুর খেয়াঘাট ও বাজারের অন্তত ২০টি দোকান এবং কয়েক শ’ ঘরবাড়ি বিলীন হয়েছে। চিরাপাড়া গ্রামের বিদ্যালয়, ঘরবাড়ি, মসজিদ, এতিমখানাসহ বেশ কিছু স্থাপনা রয়েছে ভাঙনের ঝুঁকিতে।
বালু উত্তোলন বন্ধ না হলে বাঁধ দিয়েও জমি-বাড়িঘর রক্ষা করা যাবে না বলে জানালেন রহিমা বেগম নামে নদী পাড়ের এক নারী। তিনি বলেন, নদীভাঙন বহুবার বাড়িঘর হারিয়েছি। এখনো হারানোর আতঙ্কে থাকি। যখন অবৈধ ড্রেজার চলার শব্দ হয়, তখন নিজের মনকে বোঝানো ছাড়া প্রতিবাদ করার আর কোনো উপায় থাকে না। প্রশাসন যদি কঠোর হয়, তাহলে এদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
গতকাল দুপুরে বাবুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারুক আহমেদ বলেন, পানি উন্নয়ন বোডের্র সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া এবং নদীভাঙনের কারনে ভুক্তভোগীদের সহযোগিতা করা হবে।
বানারীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বায়েজিদুর রহমান জানান, ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানানো হয়েছে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে শিগগিরই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উজিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলী সুজা বলেন, সন্ধ্যা নদীর ভাঙনের কবলে রয়েছে উপজেলার বিভিন্ন জনপদ। এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জাবেদ ইকবাল জানান, সন্ধ্যা নদীর ভাঙন রোধে আমাদের সমীক্ষা চলছে। সমীক্ষা রিপোর্ট অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।