সিলেট ব্যুরো
- সিলেটে যুবদল নেতার বালুকাণ্ডে তোলপাড়!
- দুদকে অভিযোগ নিলাম বাতিল
সিলেটে সরকারিভাবে জব্দ ৭৫ টাকা ফুটের বালু নিলামে মাত্র ২ টাকায় ক্রয় করছিলেন জেলা যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কয়েস আহমদ। ১৩ কোটি টাকার বালু মাত্র ৩৮ লাখ টাকায় কেনার বন্দোবস্তও করে ফেলেছিলেন তিনি। আর এতে সরকারের গচ্ছা যাচ্ছিল সাড়ে ১২ কোটি টাকার বেশি। নিরুপায় হয়ে নিলামে অংশ নিতে না পারা এক ব্যবসায়ী দুদকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। এ নিয়ে সিলেটজুড়ে চলে তোলপাড়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল নিলামটি বাতিল করেছে প্রশাসন।
তবে যুবদল নেতার এমন কর্মকাণ্ডের অভিযোগ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সিলেটজুড়ে শুরু হয় সমালোচনা। কেউ কেউ যুবদল নেতার এই নিলামকে নবাব শায়েস্তা খাঁর আমলের সাথে তুলনা করে উপহাস করছেন।
জানা গেছে, সিলেটে অবৈধ পাথর লুটপাটের সাথে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে প্রশাসন। চলছে নিয়মিত অভিযান। সিলেটজুড়ে জব্দ হচ্ছে লাখ লাখ ঘনফুট বালু। এসব বালু নিজেদের করে নিতে রাজনৈতিক শেল্টারে গড়ে উঠেছে একাধিক সিন্ডিকেট। আর এসব সিন্ডিকেটের প্রভাবে একতরফা বালুর বাজারদরের সাথে আকাশ-পাতাল ফারাক রেখে নিলাম ডাক সম্পন্ন করা হয়। সম্প্রতি দুই টাকা ফুট দরে বালু কিনেছেন সিলেট জেলা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক কয়েস আহমদ। নিলামে যুক্ত কর্মকর্তাদের সাথে সিন্ডিকেটের একটি অংশের যোগসাজশে বালুর দর দুই টাকায় নামিয়ে এই নিলাম সম্পন্ন করা হয়। শুধু তা-ই নয়, গতকাল (২৩ নভেম্বর) তড়িঘড়ি করে ৬ মাসের সময় দিয়ে বালুর ক্রেতাকে ওয়ার্ক ওয়ার্ডার দেয়ার প্রস্তুতি নিয়েছিল প্রশাসন। তবে দুর্নীতি বন্ধ করতে শনিবার (২২ নভেম্বর) দুদক সমন্বিত সিলেট জেলা কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন নিলামে অংশ নিতে না পারা মোঃ এমদাদ হোসেন ভূঁইয়া।
সরকারি নিলাম বিজ্ঞপ্তির সূত্র ধরে তিনি জানান, সিলেটের জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও জকিগঞ্জ, কানাইঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বালুমহাল বহির্ভূত এলাকা থেকে জব্দ করা বালুসহ বিভিন্ন পণ্যের প্রকাশ্য নিলাম ডাক সম্পন্ন হয় ১৯ নভেম্বর। এর মধ্যে ১০ লাখ ৪৯ হাজার ৯৯৬ ঘনফুট ও ১১ লাখ ৭৮ হাজার ৯৯৯ ঘনফুট বালুর নিলাম ডাক হয়। বালুর বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী প্রায় ১৩ কোটি টাকার বালুর নিলাম ডাকে অংশ নেয়ার কথা ছিল ৯ জন ব্যবসায়ীর। কিন্তু নিলাম ডাকের সময় অনুপস্থিত থাকেন আটজন। অংশ নেন কেবল জেলা যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কয়েস আহমদ।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, নিলাম ডাকের প্রথম বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী বালুর দর প্রতি ফুট সাড়ে ৯ টাকা ডাক উঠেছিল। বাজারদরের সাথে অসামঞ্জস্য থাকায় তখন দাম বাড়াতে দ্বিতীয় দফা নিলাম ডাক আহ্বান করা হয়। গত ২২ অক্টোবর সেই নিলাম ডাকের নথি থেকে জানা গেছে, ৯ জন ব্যবসায়ী অংশ নেন। সর্বোচ্চ দর ছিল সাড়ে ৯ টাকা। বাকিরা কোনো দর হাঁকাননি। দ্বিতীয় দফায় এসে দর নামে ৭ টাকা ৬০ পয়সা। সর্বশেষ দুই টাকা ৬৮ পয়সা। নিলাম সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, বালু ৩৮ লাখ টাকায় বিক্রি করে নিলাম ডাকের মধ্যে সরকারের প্রায় ১৩ কোটি টাকা গচ্চা দেয়ার প্রস্ততি সম্পন্ন করেছিল প্রশাসন।
জানা গেছে, নিলাম ডাকে এত স্বল্প মূল্যের দর ঢাকতে দ্রুত সরকারি কোষাগারে টাকা জমা দিয়ে ওয়ার্ক ওয়ার্ডার গ্রহণপূর্বক নিলামের বালু অপসারণ তথা ক্রেতার হেফাজতে নিতে ছয় মাস সময় চেয়ে আবেদন করেন নেতা কয়েস আহমদ। প্রথম দফার নিলামে অংশ নেয়া বালু ব্যবসায়ীরা বলছেন, ছয় মাসের আবেদন মঞ্জুর হলে নিলামের বালু অপসারণের নামে বালু আহরণপূর্বক পুরো নিলাম ডাকের সমপরিমাণ বালু আহরণে সুযোগ নিতে চেয়েছিল সিন্ডিকেটটি। এতে ১৩ কোটি টাকার বালুর সাথে আরো প্রায় দ্বিগুণ বালু মিলিয়ে সরকারের প্রায় অর্ধশত কোটি টাকার বালু লুটের তৎপরতা চলেছে।
এ ব্যাপারে সিলেটের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নিলাম কমিটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা (নাজির) ফাইজুল ইসলামের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দেয়া হলেও তিনি রিসিভি করেননি।
এ দিকে সিলেট জেলা যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কয়েস আহমদ এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য না করে শুধু জানান নিলামটি বাতিল করা হয়েছে। আর কিছু জানার থাকলে নিলাম প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান সিলেটের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নিলাম কমিটির সংশ্লিষ্ট শাখার সাথে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন।



