শর্তের বেড়াজালে ঋণের কিস্তি ছাড়ের সিদ্ধান্ত ঝুলিয়ে রাখছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। দুই দিনের উচ্চপর্যায়ের বৈঠক শেষ হলেও এ বিষয়ে পরিষ্কার কিছু বলছে না সংস্থাটি। প্রধান শর্তের মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হার পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দিতে বলছে আইএমএফ। কিন্তু এই মুহূর্তে মূল্যস্ফীতিসহ দেশের জন্য বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কায় নিয়ন্ত্রিত বিনিময় হারের প্রতিই অনড় থাকছে বাংলাদেশ। আর এ কারণেই ঋণদাতা সংস্থাটির পক্ষ থেকে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত আসছে না।
আরেকটি দিন, আরেকটি বৈঠক : তবুও নেই কোনো সিদ্ধান্ত
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, দুই দিনের ভার্চুয়াল বৈঠকের শেষদিন ছিল গত মঙ্গলবার। আলোচনা শেষ হলেও তাতে কোনো অগ্রগতি হয়নি। আইএমএফ চায়, বাংলাদেশ বাজারভিত্তিক বিনিময় হার চালু করুক। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক এখনই বাজারের ওপর তা ছেড়ে দিতে রাজি নয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আইএমএফের বসন্তকালীন বৈঠকের সময় চুক্তিতে পৌঁছাতে বাংলাদেশের সাথে আলোচনা চলছিল। এখন ঋণচুক্তির আওতায় থাকা শর্তের অংশ হিসেবে সংস্কারকার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় নীতিমালা ও শর্ত নিয়ে ভার্চুয়ালি আলোচনা চলছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, আইএমএফ নমনীয় বিনিময় হার বাস্তবায়নের ওপর জোর দিচ্ছে, যেখানে ছোটখাটো পরিবর্তনের বাইরে গিয়ে একাধিক বিনিময় হার তুলে দেয়ার কথা বলা হচ্ছে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করছে, এতে মুদ্রাস্ফীতি ও রাজনৈতিক চাপ বাড়তে পারে। ২০২৩ সালে আইএমএফ বাংলাদেশের জন্য ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ অনুমোদন করে। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত তিন কিস্তিতে বাংলাদেশ পেয়েছে ২.৩ বিলিয়ন ডলার। চতুর্থ কিস্তির (৬৪৫ মিলিয়ন ডলার) বিষয়ে আলোচনার অগ্রগতি না হওয়ায় গত ফেব্রুয়ারিতে তা আটকে যায়। এরপর অর্থ মন্ত্রণালয় জানায়, পারস্পরিক সম্মত শর্ত পূরণে সময় লাগার কারণেই এই দেরি।
মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘অর্থনীতির ভিত্তি মজবুত করতে আইএমএফের সাথে চুক্তির আওতায় যেসব শর্ত নির্ধারিত হয়েছে, তা পূরণের পরই ঋণের কিস্তি ছাড়া হয়। এসব শর্তের অনেকগুলো বাস্তবায়নে সময় লাগে।’ এতে আরো বলা হয়, ‘তাই পারস্পরিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি একত্রে ছাড়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।’ অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, এপ্রিলের পর্যালোচনা এবং ২০২৫ সালের জুনে আইএমএফ বোর্ডের অনুমোদন পাওয়ার পর জুন মাসেই এই দুই কিস্তি একসাথে ছাড়া হবে।
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালে আইএমএফ বাংলাদেশের জন্য ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ অনুমোদন করে। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত তিন কিস্তিতে বাংলাদেশ পেয়েছে ২.৩ বিলিয়ন ডলার।