বাকেরগঞ্জে স্কুলভবন ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণার পরও পাঠদান

নতুন ভবনের টেন্ডার প্রক্রিয়া ঝুলে আছে

বিদ্যালয়ের একতলা ভবনটিও ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় চরম উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন শিক্ষক ও অভিভাবকরা।

আতাউর রোমান, বাকেরগঞ্জ (বরিশাল)
Printed Edition
সিলিং থেকে খসে পড়ছে পলেস্তরা
সিলিং থেকে খসে পড়ছে পলেস্তরা |নয়া দিগন্ত

বরিশালের বাকেরগঞ্জ পৌর এলাকার ১০৮ নম্বর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৯০০ শিক্ষার্থী কয়েক বছর ধরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিদ্যালয়ে ক্লাস করছে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে এলজিইডি এবং উপজেলা শিক্ষা অফিস তিনতলা বিশিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করলেও সেখানেই পাঠদান কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।

গত বছরের ১১ ডিসেম্বর উপজেলা প্রকৌশলী হাসনাইন আহমেদ ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে বলে গেছেন শিক্ষার্থীদেরকে অন্যত্র ক্লাস করানোর জন্য। পরবর্তীতে ৩০ ডিসেম্বর উপজেলা শিক্ষা অফিসার শহিদুল ইসলাম সরেজমিন পরিদর্শন করে একই নির্দেশ দিয়ে গেছেন। কিন্তু বিকল্প ভবন না থাকায় এখনও ওই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই চলেছে পাঠদান।

সম্প্রতি টানা বৃষ্টিতে ভবনের তিনতলার ছাদের প্লাস্টার খসে পড়েছে। ফলে সেই কক্ষ দু’টি বন্ধ করে দিয়ে পার্শ্ববর্তী জেএসইউ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সেই ক্লাসগুলো নেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি বিদ্যালয়ের একতলা ভবনটিও ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় চরম উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন শিক্ষক ও অভিভাবকরা।

সরাসরি পরিদর্শনে দেখা গেছে, তিনতলা ভবনটির কাঠামো নিচের দিকে বসে যাওয়ায় জানালার গ্রিল বেঁকে গেছে। ছাদের বিভিন্ন স্থানে ফাটল ধরেছে, ভেজা দেয়ালে চুন-সুরকি খসে পড়েছে। বর্ষা মৌসুমে ছাদের পানি চুঁইয়ে পড়ছে। আর সেই কক্ষেই চলছে ছোট ছোট শিক্ষার্থীদের পাঠদান। শিক্ষক সংখ্যা ২০ হলেও শ্রেণীকক্ষের অভাবে তারা ঠিক মতো ক্লাস নিতে পারছেন না।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুন্নাহার বেগম জানান, ১৯৯৩ সালে নির্মিত ভবনটি গত কয়েক বছর ধরে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। বিশেষ করে চলতি বর্ষায় ভবনের অবস্থা আরও নাজুক হয়ে পড়ছে। তৃতীয় তলার দু’টি কক্ষ এতটাই বিপজ্জনক হয়ে উঠছে যে, আমরা বাধ্য হয়ে কক্ষ দু’টি বন্ধ করে দিয়েছি।

তিনি জানান, বিদ্যালয়টিতে প্রায় ৯০০ শিক্ষার্থী রয়েছে। তিনতলার পাশাপাশি একতলা ভবনটিও ঝুঁকিপূর্ণ। ফলে সীমিত পরিসরে পাঠদান চালানো হচ্ছে। জরুরি ভিত্তিতে একটি নতুন ভবন নির্মাণের খুবই প্রয়োজন।

চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী আসফি জান্নাত জানায়, স্কুল ভবন যে কোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে, এই ভয় নিয়েই ক্লাসে উপস্থিত হই। বেঞ্চগুলো ভেজা থাকে। ঠিকমতো লেখা পড়া করতে পারছি না। মাঠ কাদাপানিতে ভরে থাকায় স্কুলে এসে খেলাধুলাও করতে পারি না। তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র আরিয়ান রহমান জানায়, ছাদ ফেটে গেছে, প্লাস্টার খসে পড়ছে। তিনতলায় আমাদের কক্ষটি বন্ধ করে দেয়ায় আমরা অন্য স্কুলে গিয়ে ক্লাস করছি।

শাহাবুদ্দিন তালুকদার শাহিন নামে এক অভিভাবক বলেন, আমাদের সন্তানরা প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্কুলে যাচ্ছে। কোনো বড় দুর্ঘটনা ঘটলে কী উপায় হবে আমাদের? অবিলম্বে নতুন ভবন নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।

বাকেরগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা অফিসার শহিদুল ইসলাম বলেন, বিকল্প ভবন না থাকায় ওই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই পাঠদান চালাতে হচ্ছে। বিদ্যালয়টির জন্য একটি ১২ কক্ষ বিশিষ্ট চারতলা ভবন পাস হয়েছিল। কিন্তু প্রকল্পের নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় টেন্ডার আহ্বান করা যায়নি। পুনরায় টেন্ডার আহ্বানের চেষ্টা চলছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আল এমরান খন্দকার বলেন, আমি নিজে পরিদর্শনে গিয়েছি এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। একটি নতুন ভবনের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।

এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী হাসনাইন আহমেদ জানান, পিইডিপি-৪ প্রকল্পের আওতায় ভবনটির টেন্ডার আহ্বান হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অনুমোদন না আসায় টেন্ডার দেয়া যায়নি। বর্তমানে প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর বাড়ানো হয়েছে। টেন্ডার প্রক্রিয়া চলছে।

বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুমানা আফরোজ বলেন, বিদ্যালয়ের জন্য একটি চারতলা ভবনের অনুমোদন ছিল। কিন্তু সময়স্বল্পতার কারণে নির্মাণ শুরু হয়নি। পরবর্তী প্রকল্পে টেন্ডার দেয়া হবে।