ঢাকার সাভারে সদ্য পদায়নকৃত নতুন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহবুবুর রহমান রুমনকে (ইউএনও) ঘিরে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। আওয়ামী বিরোধী বঞ্চিত কর্মকর্তাদের একটি গ্রুপের তদবিরে আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত এই কর্মকর্তাকে পদায়ন করা হয়েছে বলে জানা গেছে। তদবির করা এসব কর্মকর্তার কর্মকাণ্ড নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
জনপ্রশাসন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাভারের মতো রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল ও গুরুত্বপূর্ণ উপজেলায় একজন নিরপেক্ষ, দূরদর্শী ও প্রশাসনিকভাবে দক্ষ কর্মকর্তার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু বিতর্কিত এই কর্মকর্তাকে পদায়নের জন্য জনপ্রশাসনে তদবির করেছেন দুইজন প্রভাবশালী কর্মকর্তা। এদের মধ্যে একজন আওয়ামী লীগের শাসনামলে বঞ্চিত থাকায় ৫ আগস্টের পরে তিন ধাপে পদোন্নতি পেয়ে অতিরিক্ত সচিব হয়েছেন। বিসিএস ১৮ ব্যাচের এই কর্মকর্তা প্রশাসনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত রয়েছেন। এ ছাড়াও পদায়নের তদবির করার অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী বিরোধী একটি রাজনৈতিক দলের প্রধানের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং সাবেক সচিবের বিরুদ্ধে। এই দুইজন মিলে বিতর্কিত আওয়ামীপন্থী এই কর্মকর্তাকে পদায়ন করিয়েছেন বলে জানা গেছে।
গত বছরের আগস্টের প্রথম সপ্তাহে যখন বাংলাদেশ ফ্যাসিস্টের তাণ্ডবে রক্তাত্ব তখন এই লীগার রুমন বিসিএস ৭১ গ্রুপে আস্ফালন করছেন, “সিলেট ক্লিয়ার, শাহবাগ ক্লিয়ার, চিটাগং নাসির-নওফেল গ্রুপ একসাথে নামবে। মিডিয়া গরম, কাল থেকে আওয়ামী লীগ মাঠে নামবে পুরোদমে। স্বাভাবিক হতে বেশি সময় লাগার কথা না।”
তার এই মন্তব্যে বোঝা যায় যে, তিনি তখনকার রাজনৈতিক পরিস্থিতিতেও আওয়ামী লীগের প্রতি প্রজ্ঞাঢ় আনুগত্য প্রকাশ করেছেন এবং সরকারপক্ষ দ্রুত নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাবে বলে বিশ্বাস করেছেন। সাধারণ মানুষের রক্ত তাকে এক মুহূর্তের জন্য বিচলিত করতে পারেনি।
৩৬তম বিসিএস এ প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশ প্রাপ্ত মাহবুবুর রহমান রুমনকে তার নিজ উপজেলা পূর্বধলার আওয়ামী লীগের পার্টি অফিসে ২০২৪ সালের নির্বাচনে আ’লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেনকে বিজয়ী করতে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সাথে স্থানীয় পার্টি অফিসে প্রচারণা চালাতে দেখা গেছে। এ ছাড়াও তিনি আওয়ামী লীগ সমর্থিত আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান (আমুস) কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
মাহবুবুর রহমান রুমন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামী শিক্ষক নেতা অধ্যাপক মোহাম্মদ সামাদের ২১-এ পদক প্রাপ্তিতে তাকে অভিবাদন জানান এবং মাহবুবর রহমান রুমনের নিজের লেখা কবিতার বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে অধ্যাপক মো: সামাদকে প্রধান অতিথি করেন। পাশাপাশি অধ্যাপক মোহাম্মদ সামাদের সাথে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ছাড়াও মাহবুবুর রহমান রুমনের ফেসবুক আইডি ঘুরে দেখা যায় তার ব্যক্তিগত ফেসবুক ওয়ালে সাবেক স্বৈরাচার সরকারের প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়েও বিভিন্ন চাটুকারী পোস্ট করেছেন। পাশাপাশি বেশ কিছু আওয়ামী লীগের নেতার সাথে তার সখ্যের প্রমাণও পাওয়া গেছে।



