শিক্ষকদের আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত শিশু শিক্ষার্থীরা, উদ্বিগ্ন অভিভাবক

প্রশাসনিক অনিশ্চয়তার টানাপোড়েনে সবচেয়ে বড় ক্ষতিটা হচ্ছে শিশু শিক্ষার্থীদের। দোটানায় শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ বাড়ছে, অনিশ্চয়তায় পড়ছে ভবিষ্যৎ। অভিভাবকরা দ্রুত কার্যকর সমাধান ও পরীক্ষাগুলো পুনরায় শুরুর দাবি জানিয়েছেন।

নয়া দিগন্ত ডেস্ক
Printed Edition
পাঠদান বন্ধ থাকায় মানিকছড়ির রানী নীহার দেবী বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মাঠে খেলছে
পাঠদান বন্ধ থাকায় মানিকছড়ির রানী নীহার দেবী বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মাঠে খেলছে |নয়া দিগন্ত

দেশের বিভিন্ন জেলায় সরকারি মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চলমান আন্দোলন ও কর্মবিরতির কারণে বার্ষিক পরীক্ষা ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। রংপুর, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, নাটোর, মেহেরপুর, বাগেরহাট, থাগড়াছড়ি এবং মাগুরাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে পরীক্ষা বন্ধ থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছে হাজারো শিক্ষার্থী। একই সাথে পরীক্ষা দিতে এসে পরীক্ষা দিতে না পারায় কোমলমতি এসব শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ বাড়ছে, যা শিশু স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। হঠাৎ করে পরীক্ষার সূচি স্থগিত হওয়ায় প্রস্তুতিমূলক ধারাবাহিকতা ভেঙে পড়ছে বলে জানান শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। শিক্ষকরাও দাবি করছেন, প্রশাসনিক অনিশ্চয়তার টানাপোড়েনে সবচেয়ে বড় ক্ষতিটা হচ্ছে শিশু শিক্ষার্থীদের। দোটানায় শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ বাড়ছে, অনিশ্চয়তায় পড়ছে ভবিষ্যৎ। অভিভাবকরা দ্রুত কার্যকর সমাধান ও পরীক্ষাগুলো পুনরায় শুরুর দাবি জানিয়েছেন।

রংপুর ব্যুরো জানায়, রংপুরের সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও জেলা স্কুলে মঙ্গলবার শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে এসে ফিরে যেতে বাধ্য হয়। সোমবার রাতে পরীক্ষা চালু রাখার প্রজ্ঞাপন জারি হলেও সহকারী শিক্ষকদের অসহযোগিতায় পরীক্ষা গ্রহণ সম্ভব হয়নি। এসএসসি পরীক্ষার্থী উসওসুয়া তুল হাসনা জানান, টেস্ট পরীক্ষা বন্ধ থাকায় তাদের প্রস্তুতি মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থী আহনাফ তাহমিদ তাসিন অভিযোগ করেন, কবে পরীক্ষা হবে তা-ও বলা হচ্ছে না; এতে ভবিষ্যৎ নিয়ে চরম অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) শরীফুল ইসলাম জানান, ৯টি স্কুলের মধ্যে তিনটিতে এখনো পরীক্ষা হচ্ছে না; বিষয়টি সমাধানে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

পটুয়াখালী প্রতিনিধি জানান, পটুয়াখালী সরকারি জুবিলী উচ্চবিদ্যালয় ও সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে বাসমাশিসের ব্যানারে চার দফা দাবিতে কর্মবিরতির কারণে পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। অভিভাবকরা ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, পরীক্ষার সময় আন্দোলন শিক্ষার্থীদের জন্য মারাত্মক অন্যায়। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ মজিবুর রহমান বলেন, জেলার মাত্র দু’টি বিদ্যালয় কর্মবিরতি পালন করছে। বিষয়টি লিখিতভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

ঝালকাঠি প্রতিনিধি জানান, ঝালকাঠিতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অনেকগুলোতে পরীক্ষা স্থগিত রয়েছে। কোথাও প্রধান শিক্ষকরা সীমিতভাবে পরীক্ষা নিলেও নলছিটি, রাজাপুর ও কাঁঠালিয়ায় অধিকাংশ বিদ্যালয়ে শ্রেণীকক্ষ তালাবদ্ধ পাওয়া গেছে। অভিভাবক সালেহ হাসান বলেন, সকালে শিশুদের নিয়ে গিয়ে তালা দেখে ফিরে আসতে হচ্ছে এ কেমন অবস্থা? শিক্ষকরা জানান, লিখিত প্রজ্ঞাপন ছাড়া আন্দোলন প্রত্যাহার সম্ভব নয়।

নাটোর প্রতিনিধি জানান, নাটোরে বাসমাশিসের কর্মবিরতিতে সরকারি বালক ও বালিকা বিদ্যালয়ের পরীক্ষা বন্ধ। পরীক্ষার্থী আরমান শেখ বলেন, রুটিন অনুযায়ী গণিত পরীক্ষা দিতে এসে দেখি সব রুম বন্ধ। অভিভাবকরা আকস্মিক পরীক্ষাবন্ধে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে।

মেহেরপুর প্রতিনিধি জানান, মেহেরপুরে শিক্ষকদের আকস্মিক ধর্মঘটে মাঝপথে পরীক্ষা বন্ধ হয়ে শিক্ষার্থীরা হতবাক হয়ে পড়ে। প্রস্তুতি নিয়ে কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে পরীক্ষা না হওয়ায় অনেক শিক্ষার্থী মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে বলে জানান অভিভাবকরা।

মাগুরা প্রতিনিধি জানান, মাগুরায়ও পূর্বঘোষণা ছাড়াই আন্দোলনের অংশ হিসেবে সব সরকারি হাইস্কুলে পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। রোববার রাতেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ ঘোষণা দেয়ায় শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে এসে ফিরে গেছেন। জেলা প্রশাসক বিষয়টি দ্রুত সমাধানে মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

চিতলমারী (বাগেরহাট) সংবাদদাতা জানান, চরম বিশৃঙ্খলা ও অবস্থাপনার মধ্যে দিয়ে বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার ১৩ হাজার শিশু শিক্ষার্থীর পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়েছে। মঙ্গবার সকাল ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত শুধুমাত্র প্রধান শিক্ষক, অফিস সহায়ক ও অভিভাবকরা এ পরীক্ষা গ্রহণ করেন। কোমলমতি শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার প্রশ্নপত্র না বুঝতে পেরে বিড়ম্বনায় পড়েন।

মানিকছড়ি (খাগড়াছড়ি) সংবাদদাতা জানান, মঙ্গলবার সকালে বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতিষ্ঠানের প্রধান ফটকে কর্মবিরতির ব্যানার ঝুলিয়ে শিক্ষকরা অফিসে খোশগল্পে মেতেছেন। অন্য দিকে শিক্ষার্থীরা মাঠে এবং সিঁড়িতে আড্ডা ও খেলাধুলায় মেতে উঠছে! পরীক্ষা বন্ধ করে শিক্ষকরা আন্দোলনে। তাই খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলার একমাত্র রাণী নীহার দেবী সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের চার শতাধিক শিক্ষার্থী মাঠে খেলাধুলায় ব্যস্ত। যে সময় তাদের পরীক্ষার হলে থাকার কথা সে সময়ে খোলাধুলায় মগ্ন শিক্ষার্থীরা।