১৫ অক্টোবর জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর

কাল সুপারিশ জমা : গণভোটের দিন নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার

Printed Edition

নিজস্ব প্রতিবেদক

আগামী ১৫ অক্টোবর, বুধবার স্বাক্ষরিত হবে বহুল প্রত্যাশিত জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫। এ দিন বেলা ৩টায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিরা এতে স্বাক্ষর করবেন। ঐতিহাসিক জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে নেতৃত্ব দেবেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোটের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করবেন।

চূড়ান্ত হওয়া জুলাই সনদে ৩৩টি রাজনৈতিক দল ও জোটের তালিকা রয়েছে। ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে এসব রাজনৈতিক দলের কাছে সনদে স্বাক্ষরের জন্য দুইজন করে প্রতিনিধির নাম আহ্বান করা হয়। সর্বশেষ গত বুধবার দলগুলোর সাথে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি চূড়ান্তে বৈঠক হয়। বৈঠকে গণভোটের মাধ্যমে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পক্ষে দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য হলেও জাতীয় নির্বাচনের দিন নাকি তফসিল ঘোষণার আগে এটি অনুষ্ঠিত হবে তা নিয়ে বিভক্তি রয়েছে। এ ছাড়া বিএনপিসহ কয়েকটি দল জুলাই সনদে থাকা নোট অব ডিসেন্ট বাস্তবায়নের পক্ষে নয় বলে জানিয়েছে। এ অবস্থায় আগামীকাল শনিবার সরকারকে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ জমা দেবে কমিশন। তাদের সুপারিশে গণভোট আগে নাকি ভোটের দিনই অনুষ্ঠিত হবে- তা সরকারের ওপর ছেড়ে দেয়া হচ্ছে বলে জানা যায়।

এ দিকে গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ ভবনে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কার্যালয়ের সভাকক্ষে কমিশনের বৈঠকে আগামী ১৫ অক্টোবর জুলাই সনদে স্বাক্ষরের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করা হয়। সভায় জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত এবং দলগুলোর সাথে কমিশনের পাঁচটি বৈঠকে প্রাপ্ত মতামত বিশ্লেষণ করা হয়। বৈঠকে আশা প্রকাশ করা হয় যে, বিশেষজ্ঞরা এবং রাজনৈতিক দলগুলো থেকে প্রাপ্ত অভিমত বিশ্লেষণ করে খুব শিগগিরই বাস্তবায়নের উপায় সংক্রান্ত সুপারিশ এবং চূড়ান্তকৃত জুলাই সনদ সরকারের কাছে জমা দেয়া হবে।

বৈঠকে কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, বিচারপতি মো: এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান ও ড. মো: আইয়ুব মিয়া উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া ঐকমত্য গঠন প্রক্রিয়ায় যুক্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারও সভায় অংশ নেন।

বিশেষজ্ঞ প্যানেলের এক সদস্য নাম না প্রকাশের শর্তে জানান, আমরা যে মতামত দিয়েছিলাম সেখানে ছিল একটা সংবিধান আদেশ হবে। এরপর গণভোট হবে। আগামী জাতীয় সংসদের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা একই সাথে সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবেও থাকবেন। একটা টাইম ফ্রেইম হবে, ছয় মাস বা এক বছর, সেটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এই সময়ের মধ্যে জুলাই সনদ অনুযায়ী সংবিধান সংস্কার পরিষদ সংবিধানের সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন করবে।

নোট অব ডিসেন্টের বিষয়ে এই বিশেষজ্ঞ বলেন, দু’টি ভাগে প্রশ্ন থাকবে। অর্থাৎ সংবিধান আদেশের একটা অংশে থাকবে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যেসব বিষয়ে বৃহত্তর ঐকমত্য হয়েছে সেটি; আরেকটি অংশ থাকবে যেখানে দলগুলোর মধ্যে এখনো যে মতানৈক্য রয়ে গেছে সেটি। আপাতত যেটা চিন্তা করা হয়েছে গণভোটে প্রশ্ন দু’টি থাকবে। প্রশ্ন থাকবে যে, রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যে সংস্কারের বিধানগুলোর সাথে আপনারা (জনগণ) একমত কি না; দ্বিতীয় প্রশ্ন থাকবে- যেসব বিষয়ে মতানৈক্য (দলগুলো নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে) রয়েছে, সেসব বিষয়ের সাথে একমত নাকি আপনারা (জনগণ) নোট অব ডিসেন্ট দেয়া বিষয়গুলো বাস্তবায়ন চান। জনগণ যদি নোট অব ডিসেন্টগুলোর বিষয়ে একমত না হয় অর্থাৎ জনগণ চাইলে সেগুলোও বাস্তবায়ন হবে। তিনি বলেন, জনগণের মতামত রাজনৈতিক দলগুলোর নোট অব ডিসেন্টের ওপর প্রাধান্য পাবে। সংবিধান আদেশে এটাও বলা থাকবে গণভোটের যে ফলাফল সংসদ বা সংবিধান সংস্কার পরিষদ বাস্তবায়ন বাধ্য থাকবে।

গণভোট আগে নাকি জাতীয় নির্বাচনের দিনই অনুষ্ঠিত হবে- এ নিয়ে দলগুলোর মধ্যে বিভক্তি রয়েই গেছে। এ অবস্থায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন বা বিশেষজ্ঞ প্যানেল বলছে, এটা সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর ছেড়ে দেয়া হবে। কারণ এটি আইনি বিষয় নয়, রাজনৈতিক বিষয়। সক্ষমতার বিষয়।

গত বুধবার বিকেল থেকে রাত প্রায় সাড়ে ১১টা পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের গণভোটের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হলেও ভোটের দিনক্ষণ নিয়ে এক জায়গায় আসতে পারেনি। বৈঠকে সনদ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে গণভোট কখন ও কী আদেশে হবে সেটি নিয়ে বিভক্তি দেখা যায়। বিএনপি জাতীয় নির্বাচনের দিন গণভোট চেয়েছে। জামায়াত এবং এনসিপি চায় সংবিধান বা জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট।

এ দিন সমাপনী বক্তব্যে কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমরা আজ সারা দিনের আলোচনার সারাংশ নিয়েছি এবং বিশেষজ্ঞদের মতামতের আলোকে সরকারকে দ্রুত পরামর্শ দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। তিনি জানান, বিশেষজ্ঞরা সর্বসম্মতভাবে পাঁচটি প্রস্তাব দিয়েছেন, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের জন্য একটি বিশেষ আদেশ জারি করতে হবে; ওই আদেশের মাধ্যমেই গণভোট আয়োজন করতে হবে; গণভোটে দু’টি আলাদা প্রশ্ন রাখতে হবে, যাতে ঐকমত্য ও মতবিরোধ উভয় বিষয় স্পষ্ট হয়; নির্বাচনের মাধ্যমে সংবিধান সংস্কার পরিষদ ও ১৩তম জাতীয় সংসদ গঠন করতে হবে; গণভোটে অনুমোদনের পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জুলাই সনদে বর্ণিত সংস্কার সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।