সিডরের ১৮ বছর

নয়া দিগন্ত ত্রাণ তহবিলের সহায়তায় সচ্ছল রবিউল

আযাদ আলাউদ্দীন, বরিশাল ব্যুরো
Printed Edition
নয়া দিগন্তের তহবিলের সহায়তায় গড়া দোকানে কাপড় সেলাই করছেন রবিউল ইসলাম : নয়া দিগন্ত
নয়া দিগন্তের তহবিলের সহায়তায় গড়া দোকানে কাপড় সেলাই করছেন রবিউল ইসলাম : নয়া দিগন্ত

দ্বীপ জেলা ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রাম পদ্মামনসা। এ গ্রামেরই দরিদ্র এক পরিবারের সন্তান রবিউল ইসলাম (৩৫)। বাবা-মা, ভাইবোনসহ আট সদস্যের পরিবার রবিউলদের, বাবাই একমাত্র উপার্জনকারী। বোন সবার বড়, রবিউল পরিবারের দ্বিতীয়। নিজস্ব জায়গা জমি নেই বললেই চলে। জমি বর্গা, নগদ রেখে কৃষি কাজ করেই কোনো রকম খেয়ে না খেয়ে চলতো তাদের পরিবার।

অভাবের কারণে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্তই লেখা পড়ার পর্ব শেষ। এলাকার লোকজনের পরামর্শে রবিউলকে টেইলারিং কাজ শিখতে দেয়া হয়। দুই বছরের মাথায় টেইলারিং কাজ শিখলেও অর্থের অভাবে তার পরিবারের পক্ষে একটি সেলাই মেশিন কেনা সম্ভব হয়নি। মাঝে মধ্যে মেশিন ভাড়া নিয়ে দোকানে কাজ করলেও যা আয় হতো তা মেশিন ভাড়া ও অন্যান্য খরচেই শেষ হয়ে যেত।

পরিবারের তেমন কোনো আয় না থাকা, বোনের বিবাহ, আট সদস্যের বিশাল পরিবারের খরচ মেটাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছিল তার বাবা আবু তাহেরকে। ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর প্রলয়করী ঘূর্ণিঝড় সিডরের আঘাতে তাদের ঘরটি উড়ে যায়। সরকারি কোনো সহযোগিতা না পেয়ে বেসরকারি সংস্থা আশা ও ব্র্যাক থেকে ঋণ গ্রহণ করে তার পরিবার। ঋণের টাকা দিয়ে ঘরটি কোনো রকম দাঁড় করাতে পারলেও কিস্তির টাকা পরিশোধ করা নিয়ে পরিবারটি পড়ে চরম বিড়ম্বনায়।

সিডর পরবর্তী পুনর্বাসনের কর্মসূচির অংশ হিসেবে ২০০৮ সালের ২৮ এপ্রিল দৈনিক নয়া দিগন্ত ত্রাণ তহবিলের পক্ষ থেকে রবিউলকে দেয়া হয় একটি সেলাই মেশিন। নয়া দিগন্তের ভোলা জেলা সংবাদদাতা শাহাদাত শাহিনের মাধ্যমে দেয়া এ সেলাই মেশিনকে আশীর্বাদ বলে মনে করছেন তার পরিবার। রবিউল প্রথমে নিজ ঘরে বসে সেলাই মেশিন দিয়ে কাজ করে পরিবারে সচ্ছলতা আনতে শুরু করেন। একপর্যায়ে বাড়ির কাছে একতা বাজারে একটি টেইলার্সের দোকান দেন তিনি।

একটি সেলাই মেশিন থেকে বৃদ্ধি পেয়ে তার দোকানে এখন চারটি সেলাই মেশিন। পাঁচজন বেকারকে সেলাই ও দর্জির কাজ শিখিয়ে তার অধীনে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন রবিউল। তার এখন মাসিক আয় ৩০ হাজার টাকারও বেশি। এক সময়কার অস্বচ্ছল এই পরিবারটিতে ফিরে এসেছে সচ্ছলতা। রবিউলের ছেলের নামে প্রতিষ্ঠিত ‘সিয়াম টেইলার্স’ এখন কুনজেরহাট এলাকার একতা বাজারের মানুষের কাছে একটি বিশ্বাস ও আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছে।

রবিউল ইসলাম জানান, নয়া দিগন্ত ত্রাণ তহবিলের দেয়া একটি সেলাই মেশিন আর নিজের কঠোর পরিশ্রম বদলে দিয়েছে আমার ভাগ্যের চাকা। অতীতের ঋণের টাকা পরিশোধ করে ঋণমুক্ত হয়ে তার পরিবার এখন ভালোই দিন কাটাচ্ছে। এই সাফলের‌্যর জন্য নয়া দিগন্ত পরিবারের কাছে কৃতজ্ঞতা জানান রবিউল।