- হাজার কোটি টাকা ক্ষতির আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের
- তদন্তের আগে কিছুই বলতে পারছে না সংস্থাগুলো
- পাঁচ কারণে আগুন নিভতে দেরি : ফায়ার সার্ভিস
‘হংকং ও চায়না থেকে দু’টি শিপমেন্ট এসেছিল একটি রেডিমেড গার্মেন্টের। গত শনিবার দুপুরে হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজের যে আগুনের ঘটনা ঘটেছে ওই আগুনে স্যাম্পল প্রোডাক্টসহ সবই পুড়ে গেছে। গতকাল সেখানে ওই আমদানিকারক গিয়ে দেখেন শুধু তার মালামালই নয়, কার্গো ভিলেজে যা ছিল সব পুড়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। মো: বেনজীর আহমেদ নামে একজন গার্মেন্ট ব্যবসায়ী বলেন, আমরা ছোট ব্যবসায়ী। অল্প টাকার মাল পুড়লেও সেটা আমাদের জন্য বিশাল ক্ষতি। আজ মালামাল খালাসের কথা ছিল, কিন্তু আগুনে সব শেষ!’
গতকাল সকালে এই ব্যবসায়ীর মতো অনেকে এসেছেন তাদের মালামাল দেখতে। ধ্বংসাবশেষ দেখে তাদের চোখে মুখে হতাশার ছাপ। গতকাল আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও ভবনজুড়ে ধোঁয়ার কুণ্ডলী উঠছিল। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরাও অগ্নিনির্বাপনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। পরে বিকেল ৪টা ৫৮ মিনিটে আগুন পুরোপুরি নির্বাপনের ঘোষণা দেন ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক লে. কর্নেল তাজুল ইসলাম।
সকাল থেকেই ধ্বংসস্তূপ দেখতে ঘটনাস্থলে ভিড় করেন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী, সাধারণ মানুষ ও বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা। সাংবাদিকদের কাছে তারা প্রশ্ন ছুড়ে বলেন, এই আগুনের দায় কার? এটি নিছক দুর্ঘটনা নাকি অন্য কিছু। সরকারের পক্ষ থেকে কোনো প্রশ্নেরই জবাব মিলছে না। আদৌ কি তারা ব্যবসায়ীদের ক্ষতিপূরণ দেবেন?
হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে কোটি কোটি টাকার গার্মেন্ট পণ্য, ওষুধশিল্পের কাঁচামাল ও আন্তর্জাতিক কুরিয়ার সার্ভিসের মূল্যবান দলিল পুড়ে গেছে।
এ ঘটনায় মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছে অসংখ্য আমদানিকারক ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। তারা আশঙ্কা করছে ভয়াবহ এই আগুনে ক্ষতির পরিমাণ ছাড়িয়ে যেতে পারে হাজার কোটি টাকা।
ক্ষতিগ্রস্তদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আগুনে শুধু তাদের আর্থিক ক্ষতিই হয়নি, অনেক গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক অর্ডারেরও (ক্রয়াদেশ) ক্ষতি হবে। এতে মাঠপর্যায় থেকে শুরু করে প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায় পর্যন্ত প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশেষ করে, ওষুধশিল্পের কাঁচামাল পুড়ে যাওয়ায় দেশের স্বাস্থ্য খাতে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। কারণ এ কাঁচামাল দিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জীবন রক্ষাকারী ও ক্যানসারের ওষুধ তৈরি হয়।
গতকাল দুপুর থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ৮ নম্বর গেটের সামনে কার্গো ভিলেজে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী বিভিন্ন সংস্থার কর্মী এবং একাধিক ব্যক্তির সাথে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
তাদের মধ্যে একজন প্রত্যক্ষদর্শী সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠান এম আর লজিস্টিকসের কর্মচারী মো: এনায়েত হোসেন বলেন, শুরুতে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি কার্গো ভিলেজের ভেতরে প্রবেশ করতে পারেনি, ৮ নম্বর ফটকে আটকে দেয়া হয়। তাদের ভেতরে প্রবেশের অনুমতি নেই বলে জানানো হয়। ফলে প্রায় ২০-২৫ মিনিট সময় নষ্ট হয়। এর মধ্যেই আগুন সারা ভবনে ছড়িয়ে পড়ে।
তবে সেখানে অবস্থানরত এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা নয়া দিগন্তকে বলেন, ফায়ার সার্ভিসের যে দু’টি গাড়ি নিয়ে অভিযোগ উঠেছে তা সঠিক নয়। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখিয়ে তিনি বলেন, আগুন লাগার পর আস্তে আস্তে বেশ কয়েকটি ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ভেতরে প্রবেশ করে। বিকেল ৩টা ৫৮ মিনিটে ২টা গাড়ি হঠাৎ আটকে যায়। সাথে সাথে লোক পাঠিয়ে তাদের কাছ থেকে জানতে পারি গাড়ি দু’টি প্রেসার মেশিন সংযুক্ত করতে পারেনি। সংযুক্ত হওয়ার সাথে সাথেই গাড়ি দু’টি আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছে।
কার্গো ভিলেজের কিউইপি-এক্সপ্রেস নামে একটি আন্তর্জাতিক কুরিয়ার সার্ভিসের কর্মী মো: সাইদ হোসেন বলেন, বেলা সোয়া ২টায় কেমিক্যাল গোডাউন থেকে আগুন দেখা যায়। কিছুক্ষণ পর ফায়ার সার্ভিস আসে। কিন্তু তারা ভেতরে ঢুকতে পারেনি। তবে শনিবার রাতে এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল সাংবাদিকদের বলেন, আপনারা গেটে যে গাড়ি দেখেছেন, সেটি হয়তো অন্য কোনো সংস্থার ছিল। আমাদের ফায়ারের ইউনিট যখন ঘটনাস্থালে পৌঁছায়, তখন আগুন ছড়িয়ে পড়েছে।
সরেজমিন দেখা যায়, আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও গতকাল সাড়ে ৩টায়ও ভবনজুড়ে ধোঁয়ার কুণ্ডলী উঠছিল।
জানা যায়, এখানে ৬৮টি আন্তর্জাতিক কুরিয়ার সার্ভিস অফিস রয়েছে। তবে ২০-২২টি নিয়মিত কার্যক্রম চালায়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে হাজার কোটি টাকার মালামাল আসে। এখন প্রায় সবই পুড়ে গেছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
কাওরান বাজারের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট প্রতিষ্ঠান এমএসজিএস কোম্পানি জানায়, তাদের প্রায় ১ লাখ মার্কিন ডলারের কাঁচামাল আগুনে পুড়ে গেছে। তিনি বলেন, ওষুধশিল্পের কাঁচামাল পুড়ে যাওয়ায় সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয়েছে স্বাস্থ্য খাতে।
প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা মাহতাব উদ্দিন বলেন, আমরা দেশের নামীদামি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলোর জন্য চীন, ভারত ও জার্মানি থেকে কাঁচামাল আনি। ভেতরে আমাদের ২০টি শিপমেন্ট ছিল, সবই পুড়ে গেছে। এসব কাঁচামাল দিয়ে ক্যানসারসহ জীবন রক্ষাকারী ওষুধ তৈরি হতো। এতে ওষুধ উৎপাদনে বড় ধরনের বিরূপ প্রভাব পড়বে। গার্মেন্ট শিল্পেও বড় ধাক্কা লেগেছে। আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান পিটি গ্রুপের এজিএম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমাদের ১০টি শিপমেন্ট ছিল সবই গার্মেন্টের কাঁচামাল। ফেব্রিকস, সুতা, ডাইং মেশিনের স্পেয়ার পার্টস সব পুড়ে গেছে। ক্ষতির পরিমাণ ৯-১০ কোটি টাকা হবে।
মোস্তাফিজুর রহমান আরো বলেন, আমাদের সব শিপমেন্টে ইনস্যুরেন্স ছিল, ক্ষতিপূরণ দাবি করব। কিন্তু শিল্পে যে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়বে, সেটা আর পুষিয়ে ওঠা সহজ নয়। কাঁচামাল ছাড়া পোশাক উৎপাদন সম্ভব নয়।
উড়োজাহাজ থেকে কার্গো নামানো থেকে শুরু করে আমদানিকারকের হাতে পণ্য বুঝিয়ে দেয়া পর্যন্ত দায়িত্বে থাকে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলার, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস (বিমান)। পণ্য আনলোড, স্ক্যানিং, ওজন, হ্যান্ডলিং, স্টোরেজ, বিলিং ও ডকুমেন্টেশন, সবই তাদের কাজ। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পণ্য না তুললে প্রতিদিনের জন্য আলাদা ফিও নেয় তারা।
অন্য দিকে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) বিমানবন্দরের মালিক ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে অবকাঠামো, নিরাপত্তা ও কার্গো টার্মিনাল ব্যবস্থাপনা তদারকি করে। এ জন্য বিমানবন্দর ব্যবহার, নিরাপত্তা যাচাই, স্ক্যানিং ও পার্কিং চার্জ নেয় বেবিচক।
বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাফা) তথ্য অনুযায়ী, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রতি কেজি পণ্য আমদানিতে শূন্য দশমিক ২৯ মার্কিন ডলার চার্জ আদায় করা হয়। এর মধ্যে শূন্য দশমিক ১০ ডলার নেয় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস, অন্য শূন্য দশমিক ১৯ ডলার বেবিচক।
হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি খায়রুল আলম ভূঁইয়া মিঠু বলেন, এখানে মালামালের দায়িত্ব তো গ্রাউন্ড হ্যান্ডলার বিমানের। তাদের ওপরে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) রয়েছে। তাদেরই এটা নিরাপত্তা দিয়ে রাখার কথা। এ জন্য তারা পণ্যপ্রতি আমাদের থেকে চার্জ নেয়। এখন ব্যবসায়ীদের শত শত কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ কে দেবে?
রফতানিকারকেরা দীর্ঘদিন ধরে এই বিমানবন্দরে লজিস্টিক অদক্ষতা ও অপর্যাপ্ত অবকাঠামো নিয়ে অভিযোগ করে আসছেন। সীমিত স্থান ও অপর্যাপ্ত গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং ব্যবস্থার কারণে বৃহৎ মালবাহী বিমানের পরিচালনাও সীমিত। এত সব সীমাবদ্ধতার পরও শাহজালাল বিমানবন্দরে পণ্য পরিবহন খরচ অন্য দেশের তুলনায় বেশি।
বাফা সূত্রে জানা যায়, দিল্লি বিমানবন্দরে প্রতি কেজি পণ্যের জন্য চার্জ মাত্র শূন্য দশমিক শূন্য পাঁচ মার্কিন ডলার, কিন্তু শাহজালালে তা ছয় গুণ বেশি শূন্য দশমিক ২৯ ডলার। এ ছাড়া ঢাকায় জেট জ্বালানির দামও প্রতিবেশী দেশের তুলনায় ৩০ শতাংশ বেশি, যা সামগ্রিক পরিবহন ব্যয় বাড়াচ্ছে। কিন্তু ব্যবসায়ীদের প্রশ্ন এত চার্জ নেয়া সত্ত্বেও নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনায় গাফিলতির দায় নেবে কে?
সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ইমরান হোসাইন বলেন, আমার প্রতিটা মালের জন্য গ্রাউন্ড হ্যান্ডলার বিমান আর বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ পৃথক চার্জ নেয়, যা প্রতিবেশী দেশের তুলনায় অনেক বেশি। এরপরও পর্যাপ্ত সুবিধা নেই।
বর্তমানে বছরে প্রায় ১ লাখ ৭৫ হাজার টন পণ্য শাহজালাল বিমানবন্দর দিয়ে পরিবহন করা হয়। গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের পুরো দায়িত্ব বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস পালন করলেও নিজস্ব ফ্লাইটে পণ্য পরিবহন করে মাত্র প্রায় ১৭ শতাংশ। এ ছাড়া এমিরেটস এয়ারলাইনস, ক্যাথে প্যাসিফিক, কাতার এয়ারওয়েজ, টার্কিশ এয়ারলাইনস ও ইথিওপিয়ান এয়ারলাইনস ঢাকা থেকে কার্গো পরিবহন পরিচালনা করে।
হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ৪৫টি আন্তর্জাতিক কুরিয়ার সার্ভিস অপারেশন চালায়। তাদের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে হাজার কোটি টাকার মালামাল আসে। গত শনিবারের আগুনে যার প্রায় সব পুড়ে গেছে।
তদন্তে নাশকতাসহ কোনো কিছু উড়িয়ে দেব না : কার্গো ভিলেজে অগ্নিকাণ্ড দুর্ঘটনা নাকি নাশকতা, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে গতকাল ঘটনাস্থলে বাণিজ্য এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, বিমানবন্দরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তের ক্ষেত্রে নাশকতাসহ আমরা কোনো কিছুই উড়িয়ে দেব না। সবকিছুই আমলে নেব। গতকাল দুপুরে আগুনে পোড়া কার্গো ভিলেজ পরিদর্শনের সময় এ কথা বলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি আলোচিত অভিযোগ ঘুরছে ফায়ার সার্ভিসকে দীর্ঘ সময় কাজ করতে দেয়া হয়নি। বাণিজ্য উপদেষ্টা এ বিষয়ে বলেন, এই অভিযোগ সত্য নয়। ৩০ সেকেন্ডের মধ্যেই ফায়ার টিম কাজ শুরু করেছিল।
বিজিএমইএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এনামুল হক খান ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের বলেন, এ ঘটনায় অসংখ্য স্যাম্পল নষ্ট হয়ে গেছে। প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই শ’ কারখানার পণ্য আকাশপথে রফতানি করা হয়। এই অগ্নিকাণ্ডে সেই কার্যক্রমে বড় ধাক্কা লেগেছে। ক্ষতিগ্রস্ত রফতানিকারকদের জন্য ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা নিতে হবে এবং দ্রুত নতুন শিপমেন্টের প্রস্তুতি শুরু করতে হবে। আমদানি সেকশন পুরোটাই পুড়ে গেছে, সেটি সচল হতে অন্তত এক মাস সময় লাগবে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বিকেএমইএ নির্বাহী সভাপতি এবং বাংলাদেশ এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. হাতেম বলেন, দেশের এত গুরুত্বপূর্ণ স্থানে কিভাবে এত বড় আগুন লাগে? আমাদের শিল্পকারখানায় ফায়ার সেফটি বাধ্যতামূলক, কিন্তু এখানে কোনো ব্যত্যয় ঘটেছে কি না, তা খতিয়ে দেখা জরুরি। বহির্বিশ্বের বায়ারদের কাছে এটি দেশের ইমেজ ক্রাইসিস তৈরি করবে, সবাই প্রশ্ন তুলবে। এক কাস্টমস কর্মকর্তার বক্তব্যে উঠে এসেছে কার্গো ভিলেজের দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনা। তিনি জানান, এখানে বরাবরই ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি পণ্য রাখা হতো। টিন শেডের ভেতর দিয়ে বৃষ্টির পানি পড়ত। আমি একবার ফেসবুকে এসব নিয়ে পোস্ট করেছিলাম, তাতে দেখা গিয়েছিল, কার্গোর ভেতরে বৃষ্টির পানি পড়ছে। বিগত সরকারের রোষানলে পড়ে সেই পোস্ট আমাকে ডিলিট করতে হয়েছিল। তবে তার আরো একটি ধারণকৃত ভিডিওতে দেখা যায়, কার্গো ভিলেজের ভেতর যেখানে মালামাল রাখা, সেখানে গুইসাপ ঢুকে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঘটনাটি শুধু পণ্যের ক্ষতি নয়, দেশের বাণিজ্যিক সুনামেও বড় আঘাত। পোশাক রফতানিতে নির্ভরশীল বাংলাদেশ এখন এক নতুন ইমেজ ক্রাইসিসের মুখোমুখি।
পুড়েছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সরঞ্জাম : কার্গো ভিলেজ কমপ্লেক্সে অগ্নিকাণ্ডে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য আমদানি করা বেশ কিছু বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম পুড়ে গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এসব সরঞ্জাম গতকাল রোববার খালাসের কথা ছিল।
পাঁচ কারণে আগুন নিভতে দেরি, ফায়ার সার্ভিস : প্রায় সাড়ে ২৬ ঘণ্টা সময় লেগেছে রাজধানীর শাহজালাল বিমানবন্দরের আমদানি কার্গো ভিলেজে লাগা আগুন পুরোপুরি নেভাতে। কেন এত সময় লাগলো এর পাঁচটি কারণ চিহ্নিত করেছে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদফতর। গতকাল বিকেলে কার্গো ভিলেজ এলাকায় ৮ নম্বর গেটের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে কারণগুলো তুলে ধরেন ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লে. কর্নেল তাজুল ইসলাম চৌধুরী।
তিনি বলেন, প্রথমত উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ দাহ্য বস্তুর (কম্বাস্টিবল ম্যাটেরিয়াল) আধিক্য, দ্বিতীয়ত স্টিল স্ট্রাকচারের তাপ শোষণ, তৃতীয়ত অপরিষ্কার ও গাদাগাদি পরিবেশ, চতুর্থত অগ্নিনিরাপত্তা-ব্যবস্থার ঘাটতি এবং সর্বশেষ ছোট ছোট স্টিলের স্ট্রাকচার কেটে ভেতরে প্রবেশ করায় আগুন নেভাতে বেগ পেতে হয়।