বৈরুতে ইসরাইলি হামলায় হিজবুল্লাহর সামরিক নেতা নিহত

Printed Edition
আলি তাবতাবাই
আলি তাবতাবাই

রয়টার্স

  • যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে চলেছে ইসরাইল

  • প্রতিশোধের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন হিজবুল্লাহ নেতারা

লেবাননের রাজধানী বৈরুতে হামলা চালিয়ে হিজবুল্লাহর শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাকে হত্যা করেছে ইসরাইল। রোববার বৈরুতের দক্ষিণাংশের হারাত হ্রেইক এলাকায় বিমান হামলাটি চালানো হয়েছে বলে ইসরাইলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে।

এক বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় দুই পক্ষের মধ্যে হওয়া যুদ্ধবিরতির মধ্যেই হামলাটি চালাল তারা। কয়েক মাসের মধ্যে এটি বৈরুতে ইসরাইলের চালানো প্রথম হামলা। এক বিবৃতিতে ইসরাইলি বাহিনী জানিয়েছে, হিজবুল্লাহর ভারপ্রাপ্ত চিফ অব স্টাফ আলি তাবতাবাইকে নিশানা করে হামলাটি চালানো হয়। এই হামলায় তাবতাবাইয়ের মৃত্যু হয়েছে বলে এক বিবৃতিতে হিজবুল্লাহ নিশ্চিত করেছে। বিবৃতিতে শোক প্রকাশ করে নিহত নেতাকে ‘মহান জিহাদি কমান্ডার’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে আরো বলা হয়, ‘তাবতাবাই ইসরাইলি শত্রুর মোকাবেলায় তার ধন্য জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত কাজ করেছেন।’

বিবৃতিতে সংগঠনটিতে তাবতাবাইয়ের জ্যেষ্ঠতা তুলে ধরা হলেও হিজবুল্লায় তার প্রকৃত ভূমিকা কী ছিল সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি। বৈরুতের হারাত হ্রেইক এলাকাটি হিজবুল্লাহর শক্ত ঘাঁটি। এখানে ইসরাইলি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত একটি ভবনের কাছে দাঁড়িয়ে হিজবুল্লাহ কর্মকর্তা মাহমুদ কামাতি বলেন, ইসরাইলের হামলা একটি ‘রেড লাইন’ অতিক্রম করেছে। তিনি জানান, এই হামলার প্রতিক্রিয়া জানানো হবে কি না এবং হলে তা কিভাবে জানানো হবে হিজবুল্লাহর নেতারা সে সিদ্ধান্ত নেবে। লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ হামলায় পাঁচজন নিহত ও আরো ২৮ জন নিহত হয়েছেন। একটি বহুতল ভবনে আঘাতটি হানা হয়েছে। এতে ধ্বংসাবশেষ পড়ে নিচে প্রধান সড়কে রাখা গাড়িগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। লোকজন তাদের অ্যাপার্টমেন্ট ভবন থেকে নেমে এসে সেখানে ভিড় করছেন, আরো বোমা হামলা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।

যুক্তরাষ্ট্রর ২০১৬ সালে তাবতাবাইয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। তাকে হিজবুল্লাহর প্রধান একজন নেতা বলে শনাক্ত করেছিল তারা আর তার বিষয়ে তথ্য দিতে পারলে ৫০ লাখ ডলার পুরস্কার দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিল। ইসরাইলি সামরিক বাহিনী বিবৃতিতে বলেছে, ‘তাবতাবাই হিজবুল্লাহর অধিকাংশ ইউনিটের নেতৃত্ব দিতেন আর তাদের ইসরাইলের সাথে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করতে কঠিন পরিশ্রম করছিলেন।’

টেলিভিশনে সম্প্রচার করা সংক্ষিপ্ত এক বিবৃতিতে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ইসরাইল হিজবুল্লাহকে তার বাহিনী পুনর্গঠন করতে দেবে না। নেতানিয়াহু জানান, লেবানন সরকার হিজবুল্লাহকে ‘নিরস্ত্র করতে তাদের বাধ্যবাধকতা পূরণ করবে’, তিনি এমনটি প্রত্যাশা করছেন। লেবাননের প্রেসিডেন্ট যোসেফ আউন ইসরাইলি হামলা বন্ধ করতে বিশ্ব সম্প্রদায়কে হস্তক্ষেপ করার আহ্বান জানিয়েছেন। গত বছর নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের চেষ্টায় হিজবুল্লাহর সাথে ইসরাইলের যুদ্ধবিরতি হলেও লেবাননে সংগঠনটির বিভিন্ন স্থাপনা ও সদস্যদের ওপর হামলা চালানো বন্ধ করেনি ইসরাইল। এর আগে সর্বশেষ গত জুলাইয়ে বৈরুতে হামলা চালিয়েছিল ইসরাইল। ইসরাইলি কর্মকর্তারা বলছেন, হিজবুল্লাহ তাদের সামরিক সক্ষমতা আবার গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। তারা চোরাপথে লেবাননে অস্ত্র আনছে এবং রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্রের বিকল্প হিসেবে বিস্ফোরক ড্রোন বানাচ্ছে বলে অভিযোগ ইসরাইলের। কিন্তু যুদ্ধবিরতির শর্ত লঙ্ঘন করে ইসরাইলি বাহিনী হিজবুল্লাহর প্রধান শক্তিকেন্দ্র দক্ষিণ লেবাননের অন্তত পাঁচটি স্থানে অবস্থান নিয়ে আছে। সেখান থেকে তাদেরকে সরে যাওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট আউন। তিনি বলেছেন, ইসরাইলের কর্মকাণ্ড যুদ্ধবিরতি চুক্তির লঙ্ঘন ঘটাচ্ছে।

অপরাধী ইসরাইলি শাসনব্যবস্থার মুখোমুখি হওয়ার বিকল্প নেই : ইরান

এদিকে ইরানের সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের (এসএনএসসি) সচিব আলী লারিজানি বলেছেন, অপরাধী ইসরাইলি শাসনব্যবস্থার মুখোমুখি হওয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। রোববার লেবানন ইসরাইলি হামলায় হিজবুল্লাহর জ্যেষ্ঠ কমান্ডার আলী তাবাতাবাইয়ের মৃত্যুর প্রতিক্রিয়ায় তিনি এ মন্তব্য করেন। ইরানের নিরাপত্তা প্রধান জোর দিয়ে বলেন, ইসরাইলি সরকারের প্রধান নেতা বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তার অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাবেন যতক্ষণ না সবাই বুঝতে পারে, ইসরাইলের ভুয়া শাসনের মুখোমুখি হওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। তিনি বলেন, ‘হজরত ফাতেমা (সা:)-এর ইন্তেকাল বার্ষিকীর প্রাক্কালে অপরাধী ইসরাইলি শাসকগোষ্ঠী হিজবুল্লাহর সিনিয়র কমান্ডার আলী তাবাতাবাই এবং তার কয়েকজন সহযোদ্ধাকে শহীদ করেছে।’ তিনি হিজবুল্লাহর মহাসচিব শেখ নাইম কাসেম এবং অন্যান্য হিজবুল্লাহ কমান্ডারের প্রতি সমবেদনা জানান।