নারী ফুটবলে অশনি সঙ্কেত

রফিকুল হায়দার ফরহাদ
Printed Edition

লক্ষ্য ছিল দুই ম্যাচেই জয়। অথচ সেখানে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল থাইল্যান্ড থেকে ফিরেছে দুই ম্যাচে ৮ গোল হজম করে। এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্বে কোয়ালিফাই করা একটি দল যদি প্রস্তুতি ম্যাচে দুই হালি গোল হজম করে করাটা লজ্জারই। এত বেশি গোল জাপান, উত্তর কোরিয়ার মতো এশিয়ার শক্তিধর দল দিলে সেটা মেনে নেয়া যেতে পারে। কিন্তু থাইল্যান্ডের কাছে এভাবে হারটা মেনে নেয়া যায় না। আসলে এটা হয়েছে বাংলাদেশ কোচ পিটার জেমস বাটলারের সেই পুরনো হাই লাইন ডিফেন্স কৌশলের কারনে। এতে প্রতিপক্ষ দল কাউন্টার অ্যাটাকে দ্রুত গতির দক্ষ ফরোয়ার্ডদের দিয়ে একে একে গোল আদায় করে নিয়েছে। গত ম্যাচে শুধু একটি গোল হয়েছে পেনাল্টি থেকে। উল্লেখ্য থাইল্যান্ড এবারের এশিয়ান কাপ বাছাই পর্ব উৎরাতে পারেনি। সেখানে বাংলাদেশ কোয়ালিফাই করেও এমন বাজেভাবে হেরেছে থাইদের কাছে। যদিও ফিফা র‌্যাংকিংয়ে থাইল্যান্ডের ৫৩-এর বিপরীতে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৪। থাইল্যান্ড অবশ্য দুই দফা বিশ্বকাপে খেলা দল।

দুই ফিফা প্রীতি ম্যাচ শেষে গতকাল ঢাকায় ফিরেছে আফঈদা খন্দকার প্রান্তিরা। প্রথম ম্যাচে হারের পর কোচ বাটলার সমালোচনা করেন ফুটবলারদের। তার বক্তব্য ছিল, ফুটবলাদের শারীরিক ভাষা ঠিক ছিল না। মানসিকতায় সমস্যা ছিল। এমন খেলোয়াড়দের দলে না রাখার কথাও বুঝাতে চেয়েছেন তিনি। তবে পরের ম্যাচে এ ব্রিটিশ কোচের মুখে মাঠ প্রসঙ্গ। বললেন এখানে এমন মাঠে থাইল্যান্ডই জিতবে। তবে বাংলাদেশে হলে ভিন্ন কথা। সাথে থাইল্যান্ড দল যে মান এবং শারীরিকভাবে এগিয়ে সেটাও উল্লেখ করলেন।

এ হাইলাইন ডিফেন্স কৌশলে খেলে ৫ বা ততোধিক গোলে হারটা পিটার জেমস বাটলার বাহিনীর নতুন কিছু নয়। এবারের এএফসি অনূর্ধ্ব-২০ নারী ফুটবল বাছাই পর্বে বাংলাদেশ ১-৬ গোলে হেরেছিল দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে। অথচ সেই আসরেই বাংলাদেশ ৩-১ গোলে হারিয়েছিল লাওসকে। মূলত লাওসকে হারিয়েই আফঈদাদের নিশ্চিত হয় ইতিহাস গড়ে এএফসি অনূর্ধ্ব-২০ ফুটবলের চূড়ান্ত পর্বে খেলা। সে লাওসকে কিন্তু একটির বেশি গোলে হারাতে পারেনি দক্ষিণ কোরিয়া। কারন লাওসের কোচ সে ম্যাচে পুরোপুরি রক্ষণাত্মক খেলে রুখে দিতে থাকে কোরিয়ানদের। শেষ পর্যন্ত ৮৪ মিনিটে গোলের দেখা পায়। ওই বাছাই পর্বে বাংলাদেশ যদি আরো বেশি গোলে হারতো কোরিয়ার কাছে তাহলে আর কোয়ালিফাই করতে পারতো না চূড়ান্ত পর্বে। কোচ বাটলারের মাথায় কি তা ছিল?

এবারের অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হলেও তাদের বিপক্ষে নেপাল, ভুটান ও শ্রীলঙ্কার গোলগুলো ছিল ওই হাই লাইন ডিফেন্সের কারণে। পুরো আসরে দুর্বল শ্রীলঙ্কার একটি মাত্র গোল করতে পেরেছিল। আর তা ছিল বাংলাদেশের বিপক্ষেই। পূর্বতিমুর ও লাওসের ফরোয়ার্ডরা যদি গোল করাতে দক্ষ হতো তাহলে তাদের বিপক্ষেও বিপদে পড়তে হতো লাল-সবুজদের। আর তা এ হাই লাইন ডিফেন্সের কারণে। তারা সহজ সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারেনি ফরোয়ার্ডদেরে ব্যর্থতায়, যা সফলতার সাথে গোলে পরিণত করতে পেরেছিল দক্ষিণ কোরিয়া ও থাইল্যান্ডের মেয়েরা।

মার্চের নারী এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্বের আগে বাংলাদেশ দল আরো প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে। কোচ যদি এ হাই লাইন ডিফেন্সের বিকল্প না ভেবে এ কৌশলেই খেলাতে থাকেন তাহলে এমন বড় হার অপেক্ষা করছে। কারণ বাফুফে হাই র‌্যাংকিং দলের বিপক্ষেই ম্যাচ খেলাবে নারী দলকে।

সিনিয়র নারী দলের এ বড় হারের ঠিক আগে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৭ দল জর্দানে গিয়ে কোনো ম্যাচই জিততে পারেনি। এএফসি অনূর্ধ্ব-১৭ ফুটবলে কোয়ালিফাই করার বদলে হয়েছে তিন দলের গ্রুপে তৃতীয়। অর্পিতা বিশ্বাস-সৌরভী আকন্দ প্রীতিরা সেখানে হাই লাইন ডিফেন্স করতে গিয়েই শেষ সময়ের গোলে ড্র করতে বাধ্য হয় জর্দানের সাথে। আর শেষ ম্যাচে চাইনিজ তাইপের কাছে ০-৫ গোলে হার। যেখানে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৬ নারী দল ২০১৬ ও ২০১৯ সালে দুই দফা এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ আসরের ফাইনাল রাউন্ডে কোয়ালিফাই করেছিল, সেখানে তারা এবারের বাছাই পর্বে এক ম্যাচেই ৫ গোল হজম করে। অথচ এ তাইপেকে ২০১৬ সালে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৬ দল ৪-২ গোলে হারিয়েছিল। অনূর্ধ্ব-১৭ দলের কোচ সাইফুল বারী টিটু তথ্য দেন, ‘বর্তমান অনূর্ধ্ব-১৭ দলে মানসম্পন্ন ফুটবলারের অভাব। মারিয়া, মনিকা, ঋতুপর্নাদের মতো কুশলী ফুটবলার নেই।’ এ যে গ্যাপ এটাকে নারী ফুটবলের জন্য অশনি সঙ্কেত বলে উল্লেখ করলেন।

একেতো পাইপলাইন ঠিক নেই। তার ওপর বাটলারের হাই লাইন ডিফেন্স কৌশলে বড় বড় হার। দুই মিলিয়েই বাফুফেকে এখনই সতর্ক হতে হবে।