শিক্ষকদের দাবি আদায়ের জন্য সাত শতাধিক সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী প্রমাণিত হয়েছে। গত সোমবার থেকে সরকারি বিভিন্ন মাধ্যমিক স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা বন্ধ রেখে শিক্ষকরা সরকারকে চাপে রেখে দাবি আদায়ের চেষ্টা করলেও দিনশেষে এই সিদ্ধান্ত শিক্ষকদের জন্যই বুমেরাং হয়েছে। শুধু সরকারই নয় বরং শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের পক্ষ থেকে তীব্র সমালোচনা শুনতে হয়েছে শিক্ষকদের। পরে গতকাল সরকারের সাথে সমঝোতা করে পরীক্ষা বন্ধ রাখার এই কর্মসূচি স্থগিত করতেও নানা পথ ও পন্থা খুঁজেছেন আন্দোলনরত শিক্ষকরা। তবে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে শিক্ষক নেতারা শিক্ষা উপদেষ্টার সাথে সাক্ষাৎ চেয়েও অনুমতি পাননি। এখন বাধ্য হয়েই সরকারকে সময় দিয়ে স্থগিত পরীক্ষা পুনরায় শুরু করার ঘোষণা দেয়ার চিন্তা করা হচ্ছে। কেননা ইতোমধ্যে অনেক বিদ্যালয়ে অভিভাবকরা নিজেরাই উদ্যোগ নিয়ে পরীক্ষা নিচ্ছেন। অভিভাবকদের বক্তব্য হচ্ছে বছর শেষ। এখন সময়মতো পরীক্ষা শেষ করতে না পারলে নতুন বছরে তাদের সন্তানদের মানসিক চাপ তৈরি হবে। আর এটা কারো জন্যই কাম্য হতে পারে না।
আন্দোলনরত শিক্ষকদেরই কেউ কেউ জানান, আগামীকাল বৃহস্পতিবার শিক্ষকরা আবারো সরকারের (উপদেষ্টা অথবা মাউশি) সাথে বৈঠক করে তাদের দাবির বিষয়ে সময় দেবেন বলে জানা গেছে। যদিও এর আগে গত সোমবার বিকেলে মাউশিতে পরিচালক মাধ্যমিকের সাথে আলোচনা করেও কোনো ফলাফল আসেনি। এখন শিক্ষকরা নিজেরাই সভা করে পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে সভা করছেন। এদিকে বার্ষিক পরীক্ষার মাঝপথে শিক্ষকদের দাবি আদায়ের জন্য লাখ লাখ শিক্ষার্থীকে জিম্মি করে পরীক্ষা বন্ধ করে দেয়ার ঘটনায় দেশজুড়ে তীব্র সমালোচনা হয়েছে। এমনকি শিক্ষা উপদেষ্টা নিজেও পরীক্ষা বন্ধ করে দেয়ার সাথে জড়িত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে শিক্ষা উপদেষ্টা সরাসরিই বলেছেন, কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে কোনো দাবি আদায় হতে পারে না। বরং এটা সরকারি বিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। তিনি বলেন, এ ধরনের সিদ্ধান্তের কারণে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আন্দোলনের নামে যা করছেন, তা সরকারি আচরণবিধি লঙ্ঘনের শামিল। সরকারি আচরণ বিধি লঙ্ঘনের জন্য আপনাদের কিন্তু তৈরি থাকতে হবে। এখানে সরকার একেবারে দৃঢ়ভাবে তার অবস্থান জানিয়ে দিয়েছে। আমরা অবশ্যই মনে করি যে, বার্ষিক পরীক্ষা নিয়ে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা যে অবস্থান নিয়েছেন, যেমন অনেক স্কুলে পরীক্ষা হয়েছে আবার অনেক স্কুলে হয়নি, এটা একেবারেই অনভিপ্রেত একটি ঘটনা।
তিনি বলেন, এটা অন্যায়, অন্যায্য যে, তারা নবম গ্রেডে আসতে চাচ্ছে। কারণ চাকরি যখন নিয়েছিলেন তারা জানতেন তারা দশম গ্রেডে থাকবেন। সেখান থেকে নবম গ্রেডের এই দাবি, এটা তাদের চাকরির শর্তের মধ্যে মোটেই ছিল না। সুতরাং এটা একটা অন্যায্য ও অন্যায় দাবি। আর দ্বিতীয়ত হচ্ছে নবম গ্রেডে বিসিএস এডমিন ক্যাডাররা আছেন। কাজেই এটা এককভাবে তাদের সাথে সমাধানের কোনো বিষয় না। এটা হচ্ছে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বিষয়। এই পদে যে কেউ হুট করে চাইলেই যেতে পারে না। উপদেষ্টা বলেন, নবম গ্রেডে যাওয়ার ক্ষেত্রে কম্পারেটিভ একটা বিষয় এখানে রয়েছে। আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, দিন দুয়েক আগে তারা এই দাবি উত্থাপন করেছে এমন সময় যখন তাদের স্কুলের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা চলছে। অথবা কোনো কোনো জায়গায় বার্ষিক পরীক্ষা বা টেস্ট পরীক্ষা যখন হবে। মূলত তারা যে হাতিয়ারটা ব্যবহার করছেন সেটা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের অস্ত্র হিসেবে তারা ব্যবহার করছেন। যেটা শিক্ষক হিসেবে চরম একটি অনৈতিক কাজ তারা করছেন।
উপদেষ্টা আরো বলেন, কাজেই আমরা তাদের অযৌক্তিক দাবি প্রত্যাখ্যান করেছি এবং আমরা তাদেরকে বলছি যে, আপনারা দ্রুত পরীক্ষা নেন। অন্যথায়, সরকারি কর্মচারী হিসেবে বিধি লঙ্ঘনের দায়ে যে শাস্তি রয়েছে সেগুলোর জন্য আপনাদের কিন্তু তৈরি থাকতে হবে। মাধ্যমিক শিক্ষকদের চার দফা দাবি হলো- সহকারী শিক্ষক পদকে বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারভুক্ত করে ‘মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতর’-এর গেজেট প্রকাশ, বিদ্যালয় ও পরিদর্শন শাখায় কর্মরত শিক্ষকদের বিভিন্ন শূন্যপদে নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদায়ন দ্রুত কার্যকর করা, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের আলোকে বকেয়া টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেডের মঞ্জুরি আদেশ দেয়া এবং ২০১৫ সালের আগের মতো সহকারী শিক্ষকদের দুই থেকে তিনটি ইনক্রিমেন্টসহ অগ্রিম বর্ধিত বেতন সুবিধা বহাল করে গেজেট প্রকাশ।



