ফসলের উৎপাদন খরচ জরিপ

প্রকল্প খরচের ৩৭.৪৭ শতাংশই যাবে ভ্রমণে

কৃষিতে বাংলাদেশের সাফল্য ঈর্ষণীয়। কৃষিজমি কমতে থাকা, জনসংখ্যা বৃদ্ধিসহ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বন্যা, খরা, লবণাক্ততা ও বৈরী প্রকৃতিতেও খাদ্যশস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উদাহরণ।

হামিদ সরকার
Printed Edition

দেশের ফসলের উৎপাদন খরচ, উৎপাদন হিসাব ও উৎপাদনশীলতার হিসাব নিরূপণে পরিসংখ্যান ব্যুরো থেকে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। আড়াই বছরে ৬টি প্রধান ফসল আউশ, আমন, বোরো, পাট, গম ও আলু এবং ১৪০টি অ-প্রধান ফসলের এই উৎপাদন খরচের তথ্য সংগ্রহ করা হবে এই জরিপের মাধ্যমে। প্রায় ২৮ কোটি টাকা খরচের এই জরিপের ৩৭.৪৭ শতাংশ অর্থই যাবে ভ্রমণ খাতে। যেখানে দেশের ভেতরে চার হাজার ৭৯৫ জনের জন্য জনপ্রতি ব্যয় ধরা হয়েছে ২২ হাজার ৪০৩ টাকা। বিবিএস সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ফসলের উৎপাদন খরচ হিসাব নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দেশের উৎপাদিত ফসলের উৎপাদন ব্যয় বিষয়ক পরিসংখ্যান প্রস্তুত ও সরবরাহ করার মাধ্যমে কৃষি খাতে নীতি-নির্ধারণীতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। প্রকল্পটি নিয়ে আজ পরিকল্পনা কমিশনে মূল্যায়ন কমিটির সভায় বিবিএস থেকে মেয়াদ তিন বছরের জন্য প্রস্তাব করা হলেও পরিকল্পনা কমিশন থেকে কমিয়ে আড়াই বছর করা হচ্ছে।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রকল্প প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে, কৃষিতে বাংলাদেশের সাফল্য ঈর্ষণীয়। কৃষিজমি কমতে থাকা, জনসংখ্যা বৃদ্ধিসহ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বন্যা, খরা, লবণাক্ততা ও বৈরী প্রকৃতিতেও খাদ্যশস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উদাহরণ। বর্তমানে ধান উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। এ ছাড়া সবজি ও মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে যথাক্রমে তৃতীয় ও চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে। বন্যা, খরা, লবণাক্ততা ও দুর্যোগসহিষ্ণু শস্যের জাত উদ্ভাবনেও বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। ফসল উৎপাদনের খরচ জরিপ-২০২৫ প্রকল্পটি চলতি ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে আগামী ২০২৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত পরিচালিত হবে। তিন বছরের এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২৭ কোটি ৯৮ লাখ টাকা।

বিবিএস বলছে, তাদের কৃষি শাখা কর্তৃক ছয়টি প্রধান ফসলের (আউশ, আমন, বোরো, পাট, গম ও আলু) এবং ১৪০টি অ-প্রধান ফসলের আয়তন ও উৎপাদন হিসাব দেয়া হয়। সে ক্ষেত্রে মাত্র ছয়টি প্রধান ফসলের উৎপাদন হার নির্ণয়ে মাঠ পর্যায় নমুনা ভিত্তিতে কর্তন করা হয়। ১৪০টি অ-প্রধান ফসলের হিসাব কৃষক সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে নিরূপণ করা হয়। বর্তমানে আধুনিক ও উন্নত দেশের পদ্ধতি অনুসারে ফসলের যথাযথ উৎপাদন হিসাব নিরূপণ করা হবে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ১০টি গুরুত্বপূর্ণ ফসলের নমুনার ভিত্তিতে মাঠপর্যায়ে শস্য কর্তন অনুষ্ঠিত হবে। তা থেকে পাওয়া ফলাফল রিপোর্ট আকারে প্রকাশিত হবে। এই অভিজ্ঞতা ও তথ্যের আলোকে পরবর্তীতে এসব ফসলের উৎপাদন হার নির্ণয়ের গুণগত মান বাড়বে এবং কৃষি ফসলের নিয়মিত ফলন হার নির্ণয়ে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। এ ক্ষেত্রে কৃষি পরিসংখ্যানের গুণগত মান বাড়লে এ খাতে সঠিক পরিকল্পনা নেয়া সম্ভব হবে।

প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলো, ১০টি ফসলের (৬টি প্রধান ফসল : আউশ, আমন, বোরো, গম, আলু, পাট ও ৪টি অপ্রধান ফসল : ভুট্টা, পেঁয়াজ, আম, বেগুন) উৎপাদন খরচ, উৎপাদন হিসাব ও উৎপাদনশীলতার হিসাব নিরূপণ। কৃষি পরিসংখ্যানের গুণগতমান উন্নয়ন। গুরুত্বপূর্ণ ফসলের মাঠপর্যায়ে পরীক্ষামূলক শস্যকর্তন/কৃষক সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে যথাযথ উৎপাদন হার নির্ণয় ও যাচাইকরণ। যাবতীয় কর্মকাণ্ডের ভিত্তিতে রিপোর্ট ও বিশ্লেষণধর্মী তথ্য-গবেষণা কাজে সহায়তা দেয়া। ক্লাস্টার জরিপ পদ্ধতির পরিবর্তে মৌজা জরিপ পদ্ধতির মাধ্যমে ফসলের আয়তন ও উৎপাদন এবং উৎপাদন খরচ জরিপ নিয়মিত পরিচালনার নিমিত্ত নির্বাচিত মৌজার কৃষি খানার তালিকা প্রণয়ন। কৃষি পরিসংখ্যানের গুণগত মান উন্নয়নের লক্ষ্যে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেয়।

জরিপের মূল কার্যক্রমের খরচ হলো, চারটি জরিপ কার্যক্রম পরিচালনায় ৫.১৯ কোটি ৫৪ লাখ টাকা, অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণে ২.৬০ কোটি ৯ লাখ টাকা, সেমিনার বা কনফারেন্স বা কর্মশালা ৬৯.৯৬ লাখ টাকা আয়োজন, কম্পিউটার ও আনুষঙ্গিক ২.২১ কোটি ৪০ লাখ টাকা এবং কম্পিউটার সফটওয়্যার ৫২ লাখ টাকা ক্রয়। অফিস সরঞ্জামাদি ১৮.৩৫ লাখ টাকা ও আসবাবপত্র ১৮ লাখ টাকা ক্রয়। বিভিন্ন ধরনের মনিহারি দ্রব্যাদি ৪৯.৩৪ লাখ টাকা ক্রয়, আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে জনবল নিয়োগ ৫৩.৯৬ লাখ টাকা, যান ভাড়া ৪৮.৬০ লাখ টাকা। ভ্রমণ ব্যয় চার হাজার ৭৯৫ জনের জন্য ১০ কোটি ৪৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

এ ব্যাপারে বিবিএসের কৃষি শাখার কয়েকজন কর্মকর্তার সাথে ফোনে যোগাযোগ করেও প্রকল্পটি নিয়ে মতামত জানা যায়নি। তবে এসআইডির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সাথে মুঠোফোনে প্রকল্পের ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, মঙ্গলবার প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভা আছে। সেখান থেকে প্রকল্পটি অনুমোদন পেলেই উপদেষ্টার কাছে যাবে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য।