- ৯ মাসের ব্যবধানে ঋণ বেড়েছে ১,১১,১৪১ কোটি টাকা
- এক বছরে সরকারি সিকিউরিটিজের সুদ ব্যয় বেড়েছে ৪৫%
সরকারি ঋণ এখন ২০ লাখ কোটি টাকার ঘর ‘ছুই ছুই’ করছে। সর্বশেষ হিসাবে গত মার্চে এই ঋণের পরিমাণ ছিল ১৯ লাখ ৯৯ হাজার ৯২৮ কোটি টাকা। এই ঋণের মধ্যে দেশী ঋণের অংশ ছিল ৫৮ শতাংশ এবং বিদেশী ঋণ ছিল ৪২ শতাংশ। গত বছরের জুনে সরকারি ঋণ ছিল ১৮ লাখ ৮৮ হাজার ৭৮৭ কোটি টাকা। ৯ মাসের ব্যবধানে ঋণ বেড়েছে শতকরা হিসাবে ৬ শতাংশ এবং টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ এক লাখ ১১ হাজার ১৪১ কোটি টাকা। গত বৃহস্পতিবার অর্থ বিভাগের ‘ডেট বুলেটিন’-এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের সাথে তুলনা করলে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ঋণ-জিডিপির অনুপাত ‘মডারেট’(মধ্যমান) অবস্থায় রয়েছে এবং তা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ‘সেইফ জোন’এর মধ্যেই রয়েছে। কিন্তু ঋণের স্থিতি বেড়ে যাওয়া, নমনীয় ঋণের জায়গায় অনমনীয় ঋণ বেড়ে যাওয়া এবং বিদ্যমান সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ইতোমধ্যে ‘লাল পতাকা’ উড়িয়ে দিচ্ছে।
অর্থ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চে সরকারের মোট ঋণের মধ্যে দেশীয় ঋণ ছিল ১১ লাখ ৫৭ হাজার ৯৩৬ কোটি টাকা। এই ঋণ গত বছরের জুনে ছিল ১০ লাখ ৭৬ হাজার ৭০ কোটি টাকা। আবার একই সময়ে বিদেশী ঋণ ছিল যথাক্রমে আট লাখ ৪১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা এবং আট লাখ ১২ হাজার ৭৭ কোটি টাকা।
তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চে দেশীয় ঋণের মোট স্থিতির মধ্যে ব্যাংকিং খাতের ঋণের স্থিতি ছিল সাত লাখ ৩৭ হাজার ৬৬৯ কোটি টাকা। গত বছরের জুনে তা ছিল ছয় লাখ ৫৬ হাজার ৩৩০ কোটি টাকা। তবে এই সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ নেয়ার পরিমাণ বেশ কমেছে। গত বছরের জুন যা ছিল ৫৬ হাজার৭৫০ কোটি টাকা। এ বছর মার্চে তা কমে হয়েছে ২৪ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, এই সময়কালে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ বেড়েছে ৭ শতাংশ এবং বিদেশী ঋণের সুদ বেড়েছে ২৩ শতাংশ। তবে একই সময় অর্থাৎ ৯ মাসের ব্যবধানে সরকার বিল ও বন্ড থেকে অধিকহারে ঋণ নেয়ার কারণে এ খাতে সুদের প্রবৃদ্ধি হচ্ছে ৪৫ শতাংশ।
২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে জুলাই-মার্চ সময়কালে দেশের অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ব্যয় ছিল ৬৩ হাজার ৫৬৬ কোটি টাকা। এক বছর পর গত ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে জুলাই-মার্চ সময়ে সুদ ব্যয় বেড়ে হয়েছে ৬৮ হাজার ১৬৭ কোটি টাকা। এ সময়ে সুদ ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে চার হাজার ৬০ কোটি টাকা।
এ সময়ে ট্রেজারি সিকিউরিটিজি সুদ ব্যয় বেড়েছে ৪৫ শতাংশ বা ১৩ হাজার ১৪৬ কোটি টাকা। ২০২৩-২০২৪ সালের জুলাই-মার্চে এ খাতে সুদ ব্যয় হয়েছে হয়েছিল যেখানে ২৯ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা। সেখানে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে একই সময়ে তা বেড়ে হয়েছে ৪২ হাজার ৪৯৮ কোটি টাকা। তবে এই সময়ে সঞ্চয়পত্রে সরকারের সুদ ব্যয় ২৫ শতাংশ কমে গেছে।
এ দিকে, অর্থ বিভাগ থেকে গত জুনে করা মধ্যমেয়াদি এক নীতি কৌশলে বলা হয়েছে, বিগত বছরগুলোর অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের বণ্টন পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, সরকার অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ নেয়াকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। বাংলাদেশ ২০১৫ সালে নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। এর ফলে বহুপক্ষীয় ও দ্বিপক্ষীয় উন্নয়ন অংশীদারদের কাছ থেকে অনুদান এবং নমনীয় ঋণ ( কম সুদের হার, দীর্ঘ পরিশোধকাল পাওয়ার সুবিধাদি ক্রমান্নয়ে হ্রাস পাচ্ছে। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে তুলনামূলক উচ্চ সুদের হার ও স্বল্পমেয়াদি বাণিজ্যিক ঋণের ওপর আরো বেশি নির্ভর করতে হতে পারে, যার ফলে ঋণ পরিশোধ ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। এ সময় বাংলাদেশের ঋণ পরিস্থিতির মধ্যমেয়াদি চিত্র অনেকটাই নির্ভর করবে সরকারের গৃহীত কার্যকর কৌশলগুলোর বাস্তবায়নের ওপর। যদি রাজস্ব আহরণ, রফতানি বৈচিত্র্যকরণ এবং ঋণ ব্যবস্থপনায় কার্যকর সংস্কার না আনা যায়, তা হলে ঋণের স্থিতি এবং সংশ্লিষ্ট ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়তে পারে। তবে, মধ্যমেয়াদি ঋণ ব্যবস্থাপনা কৌশল সফলভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে বাংলাদেশ এই উত্তরণের পথ দক্ষতার সাথে অতিক্রম করতে পারবে এবং উন্নত অর্থনৈতিক অবস্থানের সুফল গ্রহণের পাশাপাশি একটি টেকসই ঋণ পরিস্থিতি বজায় রাখতে সক্ষম হবে।