‘বীমা আইন ২০১০’ সংশোধন করা হচ্ছে

বীমা আইন ভঙ্গের শাস্তি দ্বিগুণ সর্বোচ্চ ১০ গুণ হতে পারে

সৈয়দ সামসুজ্জামান নীপু
Printed Edition

বীমা খাতের সক্ষমতা বাড়ানো, আর্থিক শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা ও গ্রাহকের স্বার্থ নিশ্চিতে এ খাতে আর্থিক দণ্ডের পরিমাণ বাড়ানো হচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আর্থিক দণ্ডের পরিমাণ দ্বিগুণ, এমনকি ১০ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে বিদ্যমান ‘বীমা আইন ২০১০’ সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এতে কোনো বীমা কোম্পানি নির্দিষ্ট মেয়াদে মূলধন ঘাটতি পূরণে ব্যর্থ হলে নতুন পলিসি ইস্যু বা বিক্রয় প্রিমিয়াম গ্রহণ নিষিদ্ধ করতে পারবে কর্তৃপক্ষ।

সংশোধিত আইনে বেশ কিছু নতুন ধারা-উপধারা সংযোজন-বিয়োজনের পাশাপাশি বীমা ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে যথাযথ আইন পরিপালনে ব্যর্থ কিংবা আইন লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে আর্থিক দণ্ডের পরিমাণ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। বিদ্যমান আইনে যেখানে আর্থিক দণ্ডের পরিমাণ অনধিক পাঁচ লাখ টাকা নির্ধারিত রয়েছে, সেখানে এটি বাড়িয়ে সর্বনিম্ন পাঁচ লাখ কিংবা ১০ লাখ টাকা এবং সর্বোচ্চ এক কোটি টাকা নির্ধারণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া অন্যান্য অনিয়ম, দুর্নীতি ও প্রতারণার ক্ষেত্রেও আর্থিক দণ্ডের পরিমাণ বাড়ছে এবং সেই সাথে কারাদণ্ডের বিধানও যুক্ত করা হয়েছে।

সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ‘বীমা আইন ২০১০’ সংশোধনের এ খসড়া প্রণয়ন করেছে।

জানা গেছে, সংশোধিত আইন অনুযায়ী, নিবন্ধন সনদ প্রাপ্তির পরও কোন বীমা কোম্পানি কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে নাম পরিবর্তন করতে পারবে। আপাতত বিদ্যমান অন্য আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন- এ আইনের বিধানাবলি প্রাধান্য পাবে। বীমা খাতের প্রধান আইন হিসেবে এ আইনের প্রয়োগ অন্য আইন দ্বারা যাতে বাধাগ্রস্ত না হয়, সেজন্য এ ধারা প্রস্তাব করা হয়েছে। পরিবারের সংজ্ঞায় স্বামী/স্ত্রী, পিতা-মাতা, পুত্র-কন্যা, ভাই-বোনের পাশাপাশি জামাতা ও পুত্রবধূকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

সংশোধিত আইন অনুযায়ী, বীমা কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের ২০ সদস্যের মধ্যে সাতজন উদ্যোক্তা পরিচালক, সাতজন সাধারণ শেয়ারহোল্ডার ও ছয়জন স্বতন্ত্র পরিচালক থাকবেন।

বীমা কোম্পানির হিসাবে স্বচ্ছতা ও গ্রাহক স্বার্থ নিশ্চিতে প্রত্যেক বীমাকারী প্রতিষ্ঠানকে শেয়ারহোল্ডার তহবিল ও পলিসিহোল্ডার তহবিল পৃথকভাবে সংরক্ষণ করতে হবে।

কোম্পানি অডিটের ক্ষেত্রে খসড়ায় বলা হয়েছে, নিরীক্ষকের কার্যাবলি সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। তালিকাভুক্ত নিরীক্ষকের প্রতিবেদন ছাড়া কোনো বীমা কোম্পানির বার্ষিক প্রতিবেদন গৃহীত হবে না। এ ছাড়া প্রত্যেক বীমাকারী কোম্পানি তার সম্পদ ও দায়ের একটি ত্রৈমাসিক বিবরণী কর্তৃপক্ষ বরাবর দাখিল করবে।

সংশোধিত আইনে বীমা কোম্পানির আর্থিক সক্ষমতা বাড়ানো এবং গ্রাহকের স্বার্থ নিশ্চিত করতে নতুন একটি ধারা সংযোজন করা হয়েছে। এটি হচ্ছে- নির্দিষ্ট মেয়াদে মূলধন ঘাটতি পূরণে ব্যর্থ হলে নতুন পলিসি ইস্যু বা বিক্রয় প্রিমিয়াম গ্রহণ নিষিদ্ধ করতে পারবে কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া এ ধরনের ব্যর্থতা অব্যাহত থাকলে সর্বনিম্ন ১০ লাখ টাকা থেকে অনূর্ধ্ব এক কোটি টাকা জরিমানা এবং নিয়ম লঙ্ঘনের প্রথম দিনের পর প্রতিদিনের জন্য ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আরোপ এবং আইনের অধীন অন্যান্য শাস্তি বা প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে।

সংশোধিত খসড়া অনুযায়ী, বীমাকারী কোম্পানি তার সম্পদ বা বিনিয়োগ জামানত রেখে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির পরিচালক বা শেয়ারহোল্ডার বা তাদের পরিবার বা তাদের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা অন্য কারো কাছ থেকে ঋণ গ্রহণে বা আর্থিক সুবিধা প্রাপ্তিতে সহায়তা করতে পারবে না। বীমাকারী প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণাধীন কোম্পানি বা তাদের সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে একই বিধান প্রযোজ্য হবে।

সংশোধিত আইনে ইসলামী বীমা ব্যবসা পরিচালনায় সুনির্দিষ্ট রূপরেখা তৈরি এবং গ্রাহক স্বার্থ সুরক্ষায় একটি গাইডলাইন প্রণয়নের প্রস্তাব করা হয়েছে। এই গাইড লাইনের মাধ্যমে ইসলামী বীমা ব্যবসা পরিচালিত হবে বলে খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে।

খসড়ায়, বীমা জরিপকারীর সংজ্ঞায় ঝুঁকি ও ক্ষতি নির্ধারক যুক্ত করা হয়েছে। বিদ্যমান আইনে শুধু বীমা জরিপকারীর বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। কিন্তু ঝুঁকি ও ক্ষতি নির্ধারকের বিষয়ে কিছু উল্লেখ নেই। সংশোধিত আইনে এদেরও আইনের আওতায় আনা হয়েছে।

কর্পোরেট এজেন্টের বিষয়ে বলা হয়েছে, ‘কর্পোরেট এজেন্ট’ হচ্ছে কোম্পানি পর্যায়ভুক্ত কোনো বীমা এজেন্ট বা কোনো প্রতিষ্ঠান যেটি বীমা বিষয়ে কাজ করবে। এ সূত্র ধরে ‘ব্যাংকাসুরেন্স’ এর সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, বীমাকারী প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকের মধ্যে সম্পাদিত ব্যাংকাসুরেন্স চুক্তির আওতায় ব্যাংক বীমাকারী প্রতিষ্ঠানের কর্পোরেট এজেন্ট হিসেবে কাজ করবে।

যে বীমা পলিসির দায় বা দায়ের অংশ যা বীমাকারীর গ্রহণের আর্থিক সক্ষমতা নেই, সেই পরিমাণ দায় দেশে বা দেশের বাইরে কোনো বীমাকারীর সাথে পুনঃবীমা করা যাবে। বিদেশী বীমাকারী প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে কোম্পানিটি সংশ্লিষ্ট দেশের আইনের আওতায় পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হতে হবে এবং এ ক্ষেত্রে কোম্পানিটি ওই দেশের বা অন্য কোনো দেশের প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির কোনো সাবসিডিয়ারি কোম্পানি হবে না।

জানা গেছে, ইতোমধ্যে বীমা আইন সংশোধনের খসড়ার ওপর মতামত চাওয়া হয়েছে। এই মতামতের ওপর ভিত্তি করে খসড়াটি চূড়ান্ত করা হবে। পরবর্তীতে তা এই সরকারের আমলেই অধ্যাদেশ আকারে প্রকাশ করা হবে।