উন্মুক্ত হলো না ওমানের শ্রমবাজার

পাসপোর্ট পেতে ‘ওমান পোস্টের’ সহযোগিতা নেয়ার অনুরোধ

মনির হোসেন
Printed Edition

ওমানে বসবাসকারী দূরদূরান্তের প্রবাসী বাংলাদেশীদেরকে ‘ওমান পোস্টের’ মাধ্যমে পাসপার্টের সার্ভিস নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছে দেশটিতে থাকা বাংলাদেশ দূতাবাস। তবে বাংলাদেশ দূতাবাসের অনুরোধে সাড়া দিয়ে যারা সার্ভিস নিয়েছেন, ইতোমধ্যে তাদের মধ্যে অনেকেই ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বলে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এদিকে বাংলাদেশের তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ শ্রমবাজার ওমানের এখনো শ্রমিক যাওয়া বন্ধ হয়ে আছে। তবে দেশটিতে অবৈধভাবে অবস্থানকারী পুরনো শ্রমিকদেরকে ওমান সরকার বৈধ হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।

গত ২৬ আগস্ট ওমান পোস্টের মাধ্যমে পাসপোর্ট বিতরণ সংক্রান্ত বিষয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সর্বসাধারণের দুর্ভোগ লাঘবে দূরদূরান্ত থেকে বাংলাদেশ দূতাবাসে না এসে ওমান পোস্টের মাধ্যমে স্বল্প খরচে নিজ বাসস্থান বা কাছের ওমান পোস্টের শাখা থেকে পাসপোর্ট গ্রহণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, মাত্র এক হাজার ওমানি রিয়ালে ওমান পোস্টের নিকটস্থ শাখা থেকে অথবা ১৫০০ রিয়ালে (এক ওমানি রিয়াল পাঁচশত বাইজা) ওমান পোস্টকে সার্ভিস চার্জ প্রদান করে, হোম ডেলিভারি/নিজ ঠিকানায় পাসপোর্ট পেতে পারেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সবাইকে ওমান পোস্টের মাধ্যমে পাসপোর্ট ডেলিভারি সেবা গ্রহণের জন্যও দূতাবাসের পক্ষ থেকে উৎসাহ দেয়ার কথা বলা হয়েছে। এ বিষয়ে দূতাবাসের নিজস্ব ফেসবুক পেজে একটি লিংক দেয়া হয়েছে। তবে ইতোমধ্যে দূতাবাসের অনুরোধে সাড়া দিয়ে যেসব প্রবাসী বাংলাদেশী ‘ওমান পোস্টের’ সেবা নিয়েছেন তারা তাদের হয়রানির কথা দূতাবাসের ফেসবুক পেজেই আবার লিখে সহযোগিতা চাচ্ছেন।

জালাল উদ্দিন নামের একজন প্রবাসী উল্লেখ করেন, আমি ওমান পোস্টের মাধ্যমে আবেদন করেছি। ইতোমধ্যে ১৬ দিন চলে গেছে। এখনো পাসপোর্ট হাতে পাইনি। আর কত দিন লাগতে পারে পাসপোর্ট পেতে সেটি তিনি জানতে চেয়েছেন দূতাবাস কর্তাদের কাছে। আবুল বাকের সিদ্দিক নামের একজন প্রবাসী বাংলাদেশী এই প্রসঙ্গে বলেন, আমি এমআরপি পাসপোর্ট আনতে ওমান পোস্টের অফিসে গিয়েছিলাম। এমআরপি পাসপোর্ট নাকি ওমান পোস্টের মাধ্যমে আনা যায় না। শুধুমাত্র ই-পাসপার্ট আসে। এ বিষয়ে একটু জানাবেন বলে তিনি দূতাবাসের কর্তাদের কাছে অনুরোধ করেন। আবার কেউ কেউ নতুন এই নিয়ম চালু করায় দূতাবাসের সংশ্লিষ্টদের লাল গোলাপ শুভেচ্ছাও জানান।

এ দিকে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ শ্রমবাজার ওমানের শ্রমবাজার এখনো বন্ধ থাকায় অনেকেই ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও দেশটিতে যেতে পারছে না।

গতকাল ওমান থেকে একাধিক বাংলাদেশী নয়া দিগন্তকে বলেন, মূলত বাংলাদেশী আদম ব্যাপারী চক্রের সদস্যরা বিগ সময়ে ফ্রি ভিসার নাম দিয়ে ওমানে অনেক শ্রমিক নিয়ে এসেছিল। এক পর্যায়ে তাদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় দেশটিতে অপরাধের মাত্রাও বেড়ে যায়। শুধু তাই নয়, অনেকেই দেশটিতে এসে আর বৈধ হওয়ার জন্য সরকারের কাছে আবেদন করেনি। এক প্রশ্নের উত্তরে তারা বলেন, কিছু দিন ধরে ওমান সরকার ১৫-২০ বছর ধরে ওমানে অবস্থান করছে এমন অবৈধ শ্রমিকদের কোনো ধরনের জরিমানা ছাড়াই বৈধ হওয়ার সুযোগ দিয়েছে। এ ছাড়া যারা স্বেচ্ছায় নিজ দেশে ফিরতে চাচ্ছে তাদের জন্য আউটপাসে দেশে ফেরার সুযোগ দিয়েছে ওমান সরকার। এসব কারণে দেশটিতে নতুন করে শ্রমিক যাওয়া এখনো শুরু হয়নি। যদিও জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর পরিসংখ্যানে দেখা যায়ে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত মোট ৪৩ জন শ্রমিক বৈধভাবে দেশটিতে প্রবেশ করেছে। এর মধ্যে জানুয়ারিতে সর্বোচ্চ ১৮ জন গিয়েছিল।

উল্লেখ্য, সিন্ডিকেট সিন্ডিকেট খেলায় বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি শ্রমবাজার এখনো বন্ধ হয়ে আছে। এর মধ্যে মালয়েশিয়া অন্যতম। বর্তমানে পুরোদমে চালু থাকা একমাত্র শ্রমবাজার খোলা রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম দেশ সৌদি আরব। এই শ্রমবাজারেও অনেকে গিয়ে প্রতারিত হচ্ছেন। ঠিকমতো বেতন পাচ্ছেন না। তবে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার বন্ধ শ্রমবাজারগুলো খোলার বিষয়ে আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে শ্রমবাজার খুলে বাড়তি সুযোগ সুবিধা নেয়ারও চেষ্টা করছে। তবে তারা এখনো সফল হতে পারেনি বলে সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে।