মঈন উদ্দিন খান, খালেদ সাইফুল্লাহ ও হারুন ইসলাম
মনোনয়ন পেশের মধ্য দিয়ে নির্বাচনী মাঠে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রবেশ করেছে প্রধান দুই রাজনৈতিক বলয়- একদিকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট, অন্যদিকে জামায়াতকেন্দ্রিক ১১ দলের জোট। মনোনয়ন দাখিল শেষ হওয়ার পরপরই স্পষ্ট হয়ে উঠছে, এই নির্বাচন শুধু ক্ষমতার লড়াই নয়; এটি ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রকাঠামো, সংস্কার এজেন্ডা ও রাজনৈতিক বৈধতার প্রশ্নেও এক ধরনের গণভোট।
২ হাজার ৫৮২টি মনোনয়নপত্র দাখিল
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সারা দেশে ৩০০টি সংসদীয় আসনে মোট দুই হাজার ৫৮২টি মনোনয়নপত্র দাখিল করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা অঞ্চলে ৪১টি সংসদীয় আসনের বিপরীতে ৪৪৪টি, ফরিদপুর অঞ্চলে ১৫টি সংসদীয় আসনের বিপরীতে ১৪২টি, চট্টগ্রাম অঞ্চলে ২৩টি সংসদীয় আসনের বিপরীতে ১৯৪টি, কুমিল্লা অঞ্চলে ৩৫টি সংসদীয় আসনের বিপরীতে ৩৬৫টি, রাজশাহী অঞ্চলে ৩৯টি সংসদীয় আসনের বিপরীতে ২৬০টি, খুলনা অঞ্চলে ৩৬টি সংসদীয় আসনের বিপরীতে ২৭৬টি, বরিশাল অঞ্চলে ২১টি সংসদীয় আসনের বিপরীতে ১৬৬টি, ময়মনসিংহ অঞ্চলে ৩৮টি সংসদীয় আসনের বিপরীতে ৩১১টি, সিলেট অঞ্চলে ১৯টি সংসদীয় আসনের বিপরীতে ১৪৬টি, রংপুর অঞ্চলে ৩৩টি সংসদীয় আসনের বিপরীতে ২৭৮টি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে। মনোনয়নপত্র বাছাই কার্যক্রম চলবে ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫ থেকে ৪ জানুয়ারি ২০২৬ পর্যন্ত।
রাজনৈতিক বিশ্লেষণ : মেরুকরণের নির্বাচন
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ অনুপস্থিত। এ অবস্থায় ৫ আগস্ট ২০২৪-এর গণ-অভ্যুত্থান সমর্থক শক্তিগুলোর মধ্যে ক্ষমতায় যাওয়ার প্রতিযোগিতা তৈরি হওয়াই স্বাভাবিক। সেই প্রতিযোগিতায় রাজনৈতিক মেরুকরণ স্পষ্ট হয়েছে।
বিশ্লেষকদের ভাষায়, একদিকে বিএনপির নেতৃত্বে ফ্যাসিবাদবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের জোট, অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে ৫ আগস্ট ছাত্র গণ-অভ্যুত্থানের নায়কদের দল এনসিপি ও একাধিক ইসলামী দলকে নিয়ে আরেকটি জোট।
আসন্ন নির্বাচনে এই দুই জোটের মধ্যেই মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে যাচ্ছে- যা নির্বাচনপরবর্তী রাষ্ট্রক্ষমতার সমীকরণও নির্ধারণ করে দেবে।
বিএনপি জোট : বড় ছাতা, নিয়ন্ত্রিত বিস্তার
মনোনয়ন দাখিলের পর দেখা যাচ্ছে, বিএনপি এবার আসন-সমঝোতায় রক্ষণশীল কিন্তু কৌশলী অবস্থান নিয়েছে। দলটি নিজস্ব প্রতীকে প্রার্থীর সংখ্যা বেশি রাখলেও, দীর্ঘদিনের শরিক দলগুলোর জন্য সীমিত হলেও ‘নিরাপদ’ আসন ছেড়েছে।
বিএনপি জোটের বৈশিষ্ট্য
বড় দল হিসেবে নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতেই রাখার কৌশল; আন্তর্জাতিক মহলের কাছে ‘বিস্তৃত ঐক্য’-এর বার্তা; অতিরিক্ত আদর্শিক বিতর্ক এড়িয়ে ক্ষমতা হস্তান্তর ও নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতাকে অগ্রাধিকার দেয়া হলো বিএনপি জোটের বৈশিষ্ট্য।
দলীয় সূত্র বলছে, বিএনপি এবার চায়- ‘নির্বাচনের পর সরকার গঠনযোগ্য সংখ্যাগরিষ্ঠতা, কিন্তু এমন জোট নয় যাতে শাসন দুর্বল হয়ে পড়ে।’ এর ফলে কয়েকটি ছোট শরিক দল প্রকাশ্যে অসন্তোষ জানালেও, বিএনপির হিসাব পরিষ্কার- ভোটের মাঠে বড় লড়াইয়ে অতিরিক্ত বোঝা না নেয়া।
আন্দোলনের শরিকদের নিয়েই নির্বাচনী মাঠে
দুই-একটি দলের সাথে শেষ পর্যন্ত সমঝোতা না হলেও, মোটাদাগে ফ্যাসিবাদবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের নিয়েই নির্বাচনী জোট গঠন করেছে বিএনপি। দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে সক্রিয় থাকা দল ও নেতাদের প্রাধান্য দিয়েই আসন সমঝোতা চূড়ান্ত করেছে দলটি। তবে নির্বাচনী কৌশলের অংশ হিসেবে জোটের কয়েকটি দল বা শীর্ষ নেতাকে সরাসরি বিএনপিতে যোগদান করিয়ে ‘ধানের শীষ’ প্রতীক দেয়া হয়েছে, যাকে দলীয় নেতৃত্ব ‘বাস্তববাদী সমন্বয়’ হিসেবে ব্যাখ্যা করছে।
বিএনপি জোটে সবচেয়ে বড় চমক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে নিবন্ধিত জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সাথে সমঝোতা। ইসলামী এই দলটির জন্য চারটি আসন ছেড়েছে বিএনপি। পরিবর্তিত রাজনৈতিক বাস্তবতায় আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকায় আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে কার্যত বিএনপি জোট ও জামায়াত নেতৃত্বাধীন জোটের মধ্যেই মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে উঠছে।
যুগপৎ আন্দোলনের শরিকরাই মূল শরিক
বিএনপির নেতৃত্বে ফ্যাসিবাদবিরোধী দীর্ঘ আন্দোলনে যারা ধারাবাহিকভাবে মাঠে ছিল, তারাই মূলত এবার নির্বাচনে বিএনপির জোটসঙ্গী। ইতোমধ্যে এসব দলের সাথে আসন সমঝোতা সম্পন্ন হয়েছে। জাতীয় পর্যায়ে যাদের রাজনৈতিক পরিচিতি ও নির্বাচনী সক্ষমতা রয়েছে এমন নিবন্ধিত শরিক দলগুলোর ক্ষেত্রে বিএনপি তাদের পছন্দের আসন ছেড়ে দিয়েছে এবং ওই আসনগুলোতে বিএনপি নিজদলীয় প্রার্থী দেয়নি।
এই তালিকায় রয়েছে- বগুড়া-২ আসনে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না; ঢাকা-১২ আসনে বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক; ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ আসনে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি; পটুয়াখালী-৩ আসনে গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর।
এই আসনগুলোতে সংশ্লিষ্ট নেতারা নিজ নিজ দলের প্রতীকে নির্বাচন করবেন এবং সমঝোতা অনুযায়ী বিএনপি কোনো প্রার্থী দিচ্ছে না।
ঢাকা-১২ আসনের ক্ষেত্রে বিষয়টি আরো স্পষ্টভাবে ধরা পড়ে। বিএনপি প্রথমে ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার সাবেক আহ্বায়ক সাইফুল আলম নীরবকে প্রাথমিক মনোনয়ন দিলেও, জোটগত সিদ্ধান্তের কারণে শেষ পর্যন্ত তাকে বাদ দেয়া হয়েছে। ওই আসনে বিএনপি মনোনয়ন দিয়েছে জোট শরিক বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা সাইফুল হককে।
অনিবন্ধিত শরিক ও ‘ধানের শীষ’ কৌশল
এ ছাড়া কয়েকটি আসনে অনিবন্ধিত শরিক দলের নেতারা বিএনপির প্রতীকে নির্বাচন করছেন। এর মধ্যে- নড়াইল-২ আসনে অনিবন্ধিত এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ; যশোর-৫ (মনিরামপুর) আসনে অনিবন্ধিত জমিয়তের যুগ্ম মহাসচিব মুফতি রশিদ বিন ওয়াক্কাস; এই দু’টি আসনেও বিএনপি নিজ দলের প্রার্থী প্রত্যাহার করেছে। নড়াইল-২ আসনে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম এবং যশোর-৫ আসনে উপজেলা বিএনপির সভাপতি শহীদ মোহাম্মদ ইকবাল হোসেনকে আগে প্রার্থী করা হলেও জোটগত স্বার্থে তাদের বাদ দেয়া হয়।
বিএনপিতে যোগদান করে ‘ধানের শীষ’
জাতীয় পর্যায়ে রাজনৈতিক ইমেজ তুলনামূলক কম, কিন্তু জোটগত ঐক্য ও নির্বাচনী বাস্তবতার কথা বিবেচনায় রেখে কয়েকটি অনিবন্ধিত দলের শীর্ষ নেতাকে বিএনপিতে যোগদান করিয়ে ধানের শীষ প্রতীক দেয়া হয়েছে। এসব দলের সাংগঠনিক ভিত্তি শক্তিশালী নয়; এমনকি দু’জন শরিক তাদের দল বিলুপ্তও করেছেন।
তারা হলেন, বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম (লক্ষ্মীপুর-১); বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা (কিশোরগঞ্জ-৫)।
এই কিশোরগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপি আগে নিজ দল থেকে শেখ মুজিবুর রহমান ইকবালকে প্রার্থী করেছিল। শরিকদের বিজয় সম্ভাবনা বাড়াতেই এই কৌশল নেয়া হয়েছে বলে দলীয় সূত্র জানায়।
এ ছাড়া বিএনপিতে যোগ দিয়ে ধানের শীষ প্রতীক পেয়েছেন- এলডিপির মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ (কুমিল্লা-৭); গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান (ঝিনাইদহ-৪)।
আর জোটের শরিক এনডিএমের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ ঢাকা-১৩ আসন থেকে নির্বাচন করছেন।
নিবন্ধিত জমিয়তের চার আসন
বিএনপির সাথে নিবন্ধিত জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের চারটি আসনে চূড়ান্ত সমঝোতা হয়েছে। এসব আসন হলো- নীলফামারী-১ : মাওলানা মনজুরুল ইসলাম আফেন্দী; নারায়ণগঞ্জ-৪ : মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী; সিলেট-৫ : মাওলানা মো: উবায়দুল্লাহ ফারুক; ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ : মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব; এই চারটি আসনেই বিএনপি কোনো প্রার্থী রাখেনি।
ভাঙন ও বাদপড়া শরিক
জানা গেছে, বিএনপির সাথে এলডিপির (অলি আহমদ) প্রাথমিকভাবে দু’টি আসনে সমঝোতা হয়েছিল। সে অনুযায়ী চট্টগ্রাম-১৪ আসনটি অলি আহমদের ছেলে ওমর ফারুক এবং কুমিল্লা-৭ আসনটি দলের মহাসচিব রেদোয়ান আহমদের জন্য নির্ধারিত ছিল। তবে সম্প্রতি আসন সমঝোতার প্রক্রিয়া থেকে সরে যান অলি আহমদ। বিএনপির কাছে চূড়ান্তভাবে আটটির মতো আসন চেয়েছিল এলডিপি। পরবর্তীতে রেদোয়ান আহমদ বিএনপিতে যোগ দিয়ে ধানের শীষ পান। একইভাবে আসন না পাওয়ায় লেবার পার্টিও বিএনপি জোটে থাকছে না।
জামায়াত জোট : সংগঠিত উপস্থিতি ও আদর্শিক দৃশ্যমানতা
অন্য দিকে জামায়াত নেতৃত্বাধীন জোট মনোনয়ন পেশের মাধ্যমে একেবারেই ভিন্ন বার্তা দিয়েছে। তারা তুলনামূলক কম আসনে প্রার্থী দিলেও, ভৌগোলিকভাবে নির্বাচিত ও সংগঠনগত এলাকাতেই মনোযোগ দিয়েছে।
জামায়াত জোটের কৌশল
শক্তিশালী সংগঠনভিত্তিক নির্বাচনী এলাকা বাছাই; আদর্শিক সমর্থকদের কেন্দ্রীভূত করা; সরকার গঠনের সম্ভাবনা তৈরি করা; বিকল্প শক্তি হিসাবে উপস্থাপিত হওয়া।
জামায়াত ঘনিষ্ঠ একটি সূত্রের ভাষায়, ‘আমাদের লক্ষ্য সরকার গঠন নয়, কিন্তু সরকার গঠনে নির্ণায়ক ভূমিকা।’ মনোনয়ন তালিকা বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, জামায়াত জোট এমন সব আসনে শক্তিশালী প্রার্থী দিয়েছে যেখানে-অতীতে শক্ত ভোটব্যাংক রয়েছে। জোটের যে দলের প্রার্থীর সম্ভাবনা বেশি সেখানে সেই দলকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে।
বিএনপি জোট ও জামায়াত জোটের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা তীব্র হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। এতে করে নির্বাচনের পর সংসদে সংখ্যাগত ভারসাম্য তৈরির সুযোগ তৈরি হতে পারে।
সমঝোতা না প্রতিযোগিতা : সম্পর্কের নতুন বাস্তবতা
মনোনয়ন পেশের পর স্পষ্ট হয়েছে- এই নির্বাচনে বিএনপি জোট ও জামায়াত জোট একই ছাতার নিচে নয়, কিন্তু একই মাঠে। এটি এক দিকে সহযোগিতামূলক প্রতিযোগিতা, অন্য দিকে ভবিষ্যৎ দরকষাকষির প্রস্তুতি।
বিশ্লেষকদের মতে, ভোটের আগে দূরত্ব রাখলে বিএনপি আন্তর্জাতিক চাপ সামলাতে সুবিধা পায়; জামায়াত জোট আলাদা থাকলে নিজেদের শক্তি যাচাইয়ের সুযোগ পায়।
নির্বাচন-পরবর্তী সমীকরণই মুখ্য
এই নির্বাচন শেষে কে সরকার গঠন করবে, তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হবে- সংসদে কার কত আসন আছে, আর কে কার সাথে বসতে বাধ্য।
মনোনয়ন পেশ নয়, আসল লড়াই শুরু এখন মনোনয়ন পেশের মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয়েছে- বিএনপি জোট যাচ্ছে ক্ষমতাকেন্দ্রিক বাস্তববাদে, জামায়াত জোট এগোচ্ছে সংগঠন ও আদর্শভিত্তিক হিসাব নিয়ে ক্ষমতার বিকল্প শক্তি হিসাবে। এই দুই জোটের সম্পর্ক এখন শীতল প্রতিযোগিতার, কিন্তু নির্বাচনের পর সেটিই রূপ নিতে পারে প্রয়োজনভিত্তিক রাজনৈতিক অংশীদারিত্বে।
শেষ পর্যন্ত এই নির্বাচন নির্ধারণ করবে- কে সরকার গঠন করবে নয়, বরং কে সরকার গঠনের শর্ত নির্ধারণ করবে।
জামায়াত জোটে যোগ দিলো এবি পার্টি, এখন ১১ দল
ক্রমেই শক্তিশালী ও বিস্তৃত হচ্ছে জামায়াতে ইসলামী নেতৃত্বাধীন নির্বাচনী জোট। এনসিপি ও এলডিপির পর সর্বশেষ আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) যুক্ত হওয়ায় অনানুষ্ঠানিকভাবে এই জোট এখন ১১ দলীয় রূপ নিয়েছে। এবি পার্ট ৩টি আসন পেতে পারে বলে জানা গেছে। যদিও এখনো সব দলের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি, তবে মনোনয়ন দাখিল ও প্রার্থী প্রত্যাহারের বাস্তব চিত্রে স্পষ্ট- জামায়াতকেন্দ্রিক এই জোটই আসন্ন নির্বাচনে বিএনপি জোটের বিপরীতে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তি হয়ে উঠছে।
শেষ দিনে মনোনয়ন, কিন্তু সব আসনে নয়
গতকাল ছিল মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন। এদিন জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, এনসিপি, এলডিপিসহ জোটভুক্ত দলগুলোর নেতারা নিজ নিজ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেন। তবে আসন সমঝোতা চূড়ান্ত না হওয়ায় অধিকাংশ আসনেই একাধিক দল মনোনয়ন জমা দিলেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ আসনে আগেই সমন্বয়ের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বিশেষ করে যেসব আসন শরিক দলগুলোর জন্য ছেড়ে দেয়া হচ্ছে, সেসব এলাকায় জামায়াতের প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দেননি।
যেসব আসনে জামায়াত সরে দাঁড়িয়েছে
ঢাকা-১১ আসনে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম নির্বাচন করায় জামায়াতের প্রার্থী অ্যাডভোকেট আতিকুর রহমান মনোনয়নপত্র জমা দেননি।
এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী প্রথমে ঢাকা-১৮ আসনে নির্বাচন করার ঘোষণা দিলেও জোট সমঝোতার পর তাকে ঢাকা-৮ আসন দেয়া হয়। সেখানে আগে থেকেই মাঠে কাজ করা জামায়াত নেতা অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন মনোনয়ন জমা দেননি। হবিগঞ্জ-৪ আসনে খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আব্দুল কাদেরের জন্য জায়গা ছেড়ে দিতে মনোনয়ন জমা দেননি জামায়াতের প্রার্থী সাংবাদিক অলিউল্লাহ নোমান।
ঢাকা-১৩ আসনে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হকের জন্য আসন ছাড়ায় জামায়াতের নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসাইন মনোনয়নপত্র জমা দেননি। একই সাথে মামুনুল হক বাগেরহাট-১ আসনেও মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
এবি পার্টি যোগ, এলডিপির আসন সমীকরণ
গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে এবি পার্টি জামায়াত জোটে যোগ দিয়েছে। দলটির সভাপতি মজিবুর রহমান মঞ্জু ফেনী-২ আসন থেকে নির্বাচন করবেন। জামায়াতের প্রার্থী, অধ্যাপক লিয়াকত আলী ভূঁইয়া নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।
এলডিপি চেয়ারম্যান কর্নেল (অব:) অলি আহমদ বীরবিক্রম নিজে নির্বাচন না করলেও তার ছেলে চট্টগ্রাম-১৪ আসন থেকে প্রার্থী হচ্ছেন। জানা গেছে, এলডিপি চার থেকে পাঁচটি আসন পেতে পারে।
ইসলামী দলগুলোর মনোনয়ন চিত্র
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় প্রচার ও দাওয়াহ সম্পাদক শেখ ফজলুল করীম মারুফ জানিয়েছেন, তাদের প্রার্থীরা ২৭২টি আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। চরমোনাই পীর মুফতি রেজাউল করীম নিজে প্রার্থী হননি। তবে সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম বরিশাল-৫ ও বরিশাল-৬ আসন থেকে নির্বাচন করছেন। তিনি জানান, আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনা এখনো চলমান।
খেলাফত মজলিস জানিয়েছে, সারা দেশে তাদের ৬৭ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। নেজামে ইসলাম পার্টি ১১টি আসনে মনোনয়ন দাখিল করেছে। খেলাফত আন্দোলনের আমির মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী ঢাকা-৭ আসনে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। এ দিকে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমান ঢাকা-১৫ আসনে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
আসন সমঝোতা অন্য যেকোনো জোটের চেয়ে শক্তিশালী
আসন সমঝোতা নিয়ে ইসলামী দলগুলোর মধ্যে কিছুটা অসন্তোষের কথা স্বীকার করে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, আমাদের আসন সমঝোতা অন্য যেকোনো জোটের চেয়ে শক্তিশালী ও কার্যকর। প্রত্যেক দল নিজ নিজ প্রতীকে নির্বাচন করবে। একটি আসনে একটি দলের প্রার্থী থাকবে, আর বাকি দলগুলো তাকে সমর্থন জানাবে। তার ভাষায়, নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে, জোটগত সমন্বয় ততই স্পষ্ট হবে।
বিশ্লেষণ
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, শেষ মুহূর্তে একের পর এক দল যুক্ত হওয়ায় জামায়াত জোট এখন সংগঠন, আসন ও দৃশ্যমান সমন্বয়ের দিক থেকে শক্ত অবস্থানে চলে এসেছে। যদিও আসন সমঝোতার টানাপড়েন এখনো আছে, তবু মাঠপর্যায়ের প্রার্থী প্রত্যাহার ও সমন্বিত সিদ্ধান্ত দেখাচ্ছে- এই জোটই আসন্ন নির্বাচনে একটি প্রধান ক্ষমতাকেন্দ্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে।
৩০-৩৫ আসনে লড়তে পারে এনসিপি
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) জামায়াতে ইসলামীসহ সমমনা ১০ দলের সাথে গঠিত নির্বাচনী জোটের অংশ হিসেবে রাজধানী ঢাকার ছয়টি আসনে নিজেদের প্রার্থী ঘোষণা করেছে। জোটগত সমঝোতার আওতায় এসব আসন এনসিপিকে ছেড়ে দিয়েছে শরিক দলগুলো। ঘোষিত প্রার্থীরা ইতোমধ্যে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন এবং নির্বাচনী প্রচারণার প্রস্তুতি শুরু করেছেন।
ঢাকায় ছয়টি আসনে প্রার্থী ঘোষণার পাশাপাশি ঢাকার বাইরে আরো ৪৭টি আসনে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ ও দাখিলের মাধ্যমে এনসিপি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে, জামায়াতের নেতৃত্বাধীন এই জোটে তারা কেবল অংশীদার নয় বরং দৃশ্যমান ও কার্যকর রাজনৈতিক শক্তি হিসেবেই নির্বাচনী মাঠে নামতে চায়।
দলীয় সূত্র জানায়, ঘোষিত প্রার্থীরাই নিজ নিজ রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। মনোনয়ন দাখিলের মধ্য দিয়ে এনসিপির নির্বাচনী প্রস্তুতির প্রথম ধাপ সম্পন্ন হয়েছে বলে মনে করছে দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব।
কোন আসনে কে প্রার্থী
এনসিপির ঘোষিত তালিকা অনুযায়ী রাজধানীতে ঢাকা-১১ আসনে দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, ঢাকা-৮ এ মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দিন পাটোয়ারী, ঢাকা-৯ এ যুগ্ম আহ্বায়ক জাভেদ রাসিন, ঢাকা-১৮ এ সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিব, ঢাকা-১৯ এ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়কারী দিলশানা পারুল, ঢাকা-২০ এ কেন্দ্রীয় সদস্য ইঞ্জিনিয়ার নাবিলা তাসনিদ।
ঢাকার বাইরে জোটভিত্তিক সমঝোতার আওতায় আরো যেসব নেতা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন, পঞ্চগড়-১ এ সারজিস আলম, দিনাজপুর-৬ এ আব্দুল আহাদ, রংপুর-৪ এ আখতার হোসেন, কুড়িগ্রাম-২ এ আতিক মুজাহিদ, সিরাজগঞ্জ-৬ এ সাইফ মুস্তাফিজ।
এ ছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আশরাফউদ্দিন মাহদি, নারায়ণগঞ্জে আব্দুল্লাহ আল আমিন, বান্দরবানে সুজাউদ্দৌলা, কুমিল্লায় হাসনাত আবদুল্লাহ, নোয়াখালীতে হান্নান মাসুদ ও সুলতান জাকারিয়া, নেত্রকোনা-১১ আসনে ডা: জাহেদুল, বরিশালে আরিফ আদিব, লক্ষ্মীপুরে মাহবুব আলম এবং নরসিংদীতে সরোয়ার তুষার নির্বাচন করবেন।
দলটির একাধিক নেতা জানান, ঢাকার এই ছয়টি আসনকে এনসিপি ‘কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’ হিসেবে বিবেচনা করছে। নগরভিত্তিক রাজনীতিতে দলের সাংগঠনিক শক্তি যাচাই, তরুণ ও মধ্যবিত্ত ভোটারদের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানো এবং জাতীয় রাজনীতিতে অবস্থান দৃশ্যমান করতেই শীর্ষ নেতাদের ঢাকায় প্রার্থী করা হয়েছে।
‘এই জোটের সরকার গঠনের সক্ষমতা রয়েছে’
এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দিন পাটোয়ারী বলেন,“এই জোটের সরকার গঠনের সক্ষমতা রয়েছে। তবে কে কোন পদে আসবে বা সরকার কিভাবে গঠিত হবে সে বিষয়ে এখনো আলোচনা হয়নি। এখন আমাদের মূল লক্ষ্য জনগণের সামনে একটি বিশ্বাসযোগ্য রাজনৈতিক বিকল্প হাজির করা।” তিনি আরো বলেন, “আমরা বাস্তবিক দল গঠনের পথে এগোচ্ছি। এটি কোনো আদর্শিক জোট নয়। সংস্কার, বিচার, অর্থনীতি পুনর্গঠন ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়াই এই সমঝোতার মূল উদ্দেশ্য।” তার ভাষায়, রাজনৈতিক বাস্তবতা বিবেচনায় রেখে ন্যূনতম ঐকমত্যের ভিত্তিতেই এই জোট গড়ে উঠেছে।
৩০ আসনের গুঞ্জন, সংখ্যা বাড়তে পারে
দলীয় ও জোটসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জামায়াতের নেতৃত্বাধীন জোটে এনসিপি শেষ পর্যন্ত ৩০ থেকে ৩৫টি আসনে নির্বাচন করতে পারে। তবে মনোনয়ন প্রত্যাহারের আগে এই সংখ্যা আরো বাড়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না সংশ্লিষ্টরা। এনসিপির পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে ৪৭টি আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, “সমঝোতা পুরোপুরি চূড়ান্ত না হওয়ায় কৌশলগত কারণেই অতিরিক্ত আসনে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। শেষ পর্যন্ত জোটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সমন্বয় করা হবে।”
একক নির্বাচন থেকে সমঝোতার পথে
শুরুর দিকে এনসিপির নেতৃত্ব এককভাবে নির্বাচনে অংশ নেয়ার কথা বলছিল। সে লক্ষ্যেই ৩০০ আসনে প্রার্থী দেয়ার প্রস্তুতি শুরু হয় এবং দেশজুড়ে মনোনয়ন আহ্বান করা হয়। অনেক আসনেই প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া এগিয়ে গিয়েছিল। তবে রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তন, নির্বাচন ঘিরে নিরাপত্তা ও প্রতিযোগিতা নিয়ে অনিশ্চয়তা এবং বিরোধী শক্তিগুলোর বিভক্ত অবস্থান এনসিপির কৌশলে বড় ধরনের পরিবর্তন আনে। দলীয় সূত্র জানায়, এই বাস্তবতাই বৃহত্তর রাজনৈতিক সমঝোতার পথে যেতে দলটিকে বাধ্য করেছে।
জামায়াতের সাথে জোট কেন
এনসিপির একাধিক নেতা জানান, বিএনপির সাথে আলোচনা হলেও দল হিসেবে এনসিপিকে যথাযথ গুরুত্ব দেয়া হয়নি। বরং ব্যক্তিকেন্দ্রিক যোগাযোগকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে, এমন ধারণা থেকেই জামায়াতে ইসলামী ও তাদের নেতৃত্বাধীন জোটের সাথে সমঝোতাকে তুলনামূলক বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত হিসেবে দেখছে দলটি। যুগ্ম আহ্বায়ক সরোয়ার তুষার বলেন, “এই জোট কোনো ছায়া রাজনীতি নয়। আমরা আমাদের রাজনৈতিক অবস্থান বজায় রেখেই সমঝোতায় গিয়েছি। নির্বাচনী বাস্তবতায় এটি একটি কৌশলগত সিদ্ধান্ত।”
আলোচিত দুই ছাত্র উপদেষ্টা নির্বাচনের বাইরে
অন্তর্বর্তী সরকারের আলোচিত দুই সাবেক ছাত্র উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও মাহফুজ আলমকে ঘিরে নির্বাচনী রাজনীতিতে জল্পনা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তারা দু’জনই ভোটের মাঠে থাকছেন না। রোববার সন্ধ্যায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম জানান, আসিফ মাহমুদ এনসিপিতে যোগ দিচ্ছেন এবং তাকে দলের মুখপাত্র করা হচ্ছে। তবে তিনি সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হবেন না।
অন্য দিকে মাহফুজ আলম আগেই জানান, এনসিপি জামায়াতে ইসলামীসহ একটি জোটে যুক্ত হওয়ায় তিনি দলে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন। লক্ষ্মীপুরের একটি আসনে তার নামে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করা হলেও তিনি নির্বাচন করবেন না বলে স্পষ্ট করেন।
ভাঙন ও পদত্যাগ : নেতৃত্বের ব্যাখ্যা
জামায়াতের সাথে জোটের সিদ্ধান্ত এনসিপির ভেতরে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। ইতোমধ্যে যুগ্ম আহ্বায়ক তাজনুভা জাবীন পদত্যাগ করেছেন। সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারা দল ছেড়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দেন। এ ছাড়া নওগাঁ-৫ আসনের প্রার্থী মনিরা শারমিন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান এবং যুগ্ম আহ্বায়ক নুসরাত তাবাসসুম নির্বাচনের সময় দলীয় কার্যক্রমে নিষ্ক্রিয় থাকার ঘোষণা দেন।
এ বিষয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, “এটি সহজ সিদ্ধান্ত ছিল না। নির্বাহী পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। যারা ব্যক্তিগতভাবে কষ্ট পেয়েছেন, ভবিষ্যতে তাদের অবদান মূল্যায়ন করা হবে।”
বিশ্লেষণ : সুযোগ ও চ্যালেঞ্জ
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এনসিপি-জামায়াত জোট আদর্শিক মিলের চেয়ে রাজনৈতিক বাস্তবতার প্রতিফলন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান বলেন, “এনসিপির সাংগঠনিক শক্তি এখনো এককভাবে নির্বাচন করার মতো পর্যায়ে পৌঁছায়নি। এই জোট স্বল্পমেয়াদে তাদের নির্বাচনে টিকে থাকার সুযোগ দেবে, তবে দীর্ঘমেয়াদে স্বতন্ত্র রাজনৈতিক পরিচয় বজায় রাখাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।”
সামনে যে চ্যালেঞ্জ
ঢাকায় ছয়টি আসনে প্রার্থী ঘোষণার মধ্য দিয়ে এনসিপি তাদের নির্বাচনী কৌশলের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ পরিষ্কার করেছে। তবে এই জোট শেষ পর্যন্ত দলটিকে কতটা শক্ত রাজনৈতিক অবস্থানে নিয়ে যাবে, নাকি অভ্যন্তরীণ বিভাজন আরো গভীর করবে তার উত্তর মিলবে নির্বাচনের ফল এবং তার পরবর্তী রাজনৈতিক বাস্তবতায়।



