ডিক্যাপ্রিওর নতুন ছবির প্রচারে টিকটক ঝড়

সাকিবুল হাসান
Printed Edition
ডিক্যাপ্রিওর নতুন ছবির প্রচারে টিকটক ঝড়
ডিক্যাপ্রিওর নতুন ছবির প্রচারে টিকটক ঝড়

বিশ্বখ্যাত অভিনেতা লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিওর অভিনীত নতুন ছবি ‘ওয়ান ব্যাটল আফটার অ্যানাদার’-এর প্রচারণা যেমন অভিনব, তেমনি যুগোপযোগী। সাধারণত যিনি প্রচার থেকে দূরে থাকেন, গুটিকয়েক নির্বাচিত মাধ্যমে কথা বলেন, সেই ডিক্যাপ্রিও এবার প্রচারের একেবারে সামনের সারিতে। সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া নানা কৌতুকময় ভিডিওতে তাকে দেখা গেছে সহ-অভিনেত্রী চেইস ইনফিনিটির সাথে। কখনো সিনেমা হলে দাঁড়িয়ে মজার অডিওতে ঠোঁট মিলিয়েছেন, কখনো আবার সহ-অভিনেতা বেনিসিও ডেল তোরোর সাথে নাটকীয়ভাবে টিকিট কেনার অভিনয় করেছেন। এমনকি জনপ্রিয় অনলাইন খেলায় নিজেদের চরিত্রও যুক্ত করেছেন তারা।

এই ব্যতিক্রমী প্রচারণার নেপথ্যে রয়েছে সিনেমার গল্প ও স্বর। টমাস পিনচনের উপন্যাস ‘ভাইনল্যান্ড’ অবলম্বনে নির্মিত এই চলচ্চিত্রে উঠে এসেছে দুই প্রাক্তন বিপ্লবীর অতীত এবং তাদের কন্যাকে ঘিরে বর্তমানের রাজনৈতিক টানাপড়েন। ডিক্যাপ্রিওর চরিত্র বব এক সময়ের বিপ্লবী, বর্তমানে নিঃসঙ্গ ও হতাশ। ১৬ বছর আগে তার সঙ্গী পারফিডিয়া (অভিনয়ে তেয়ানা টেইলর) নিখোঁজ হয়ে যায়। এখন তিনি একা মেয়েকে বড় করে তুলেছেন। হঠাৎ করেই মেয়ে উইলা (চেইস ইনফিনিটি) পড়ে যায় তাদের পুরনো শত্রু কর্নেল স্টিভেন লকজের (শন পেন) টার্গেটে। এই লকজ একজন শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদী, যিনি নিজের অতীত অপরাধ ঢাকতে চায়। মেয়েকে রক্ষা করতে বব আবার বিপ্লবীদের কাছে ফিরে যান, পাশে পান সেনসেই সের্জিও (বেনিসিও ডেল তোরো) ও ডিএন্দ্রাকে (রেজিনা হল)।

গভীর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের এই ছবিতে কেবল রুদ্ধশ্বাস নাটকই নয়, রয়েছে ব্যঙ্গ-বিদ্রƒপ, সø্যাপস্টিক ঘরানার কৌতুক ও মানবিক আবেগ। এই বৈচিত্র্যই প্রচারণাকে করেছে সহজবোধ্য এবং বিস্তৃত পরিসরে পৌঁছাতে সাহায্য করেছে। প্রচারণা কৌশলে সামাজিক মাধ্যম, ভিডিও বিনোদন, অনলাইন গেম ও আধুনিক তরুণ দর্শকের পছন্দকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। ওয়ার্নার ব্রাদার্সের বিপণন বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তা ডানা নুসবাউম বলেন, ‘দর্শক কী দেখছে, কোথায় সময় কাটাচ্ছে তা বুঝে প্রচারণা করতে হয়। সময়ের গতির সাথে তাল মেলাতেই হয়।’ ডিক্যাপ্রিওর মতো তারকা যখন এ ধরনের প্রচারে অংশ নেন, তা কেবল তার ছবির প্রতি আস্থারই পরিচয় নয়; বরং পুরো প্রচার-পরিকল্পনার পক্ষে এক বড় জোরও বটে। প্রকাশের প্রথম সপ্তাহান্তেই ছবিটি যুক্তরাষ্ট্রে আয় করে ২২ কোটি ৪০ লাখ টাকা, আর আন্তর্জাতিকভাবে আরো প্রায় ২৬ কোটি টাকা, মোট প্রায় ৫০ কোটি টাকা। মুক্তির কয়েক দিনের মধ্যেই আয় দাঁড়ায় ৬৬ কোটির বেশি, যা পরিচালকের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে সফল সূচনা।

ডিক্যাপ্রিওর বব চরিত্রটি যেমন গভীর, তেমনি মাঝে মধ্যে কৌতুকপ্রবণ, কাঁচা, মানুষে ভরা। একদিকে একটি বিপ্লবের ক্লান্ত উত্তরাধিকার, অন্যদিকে এক বাবার অসহায়তা ও লড়াই- সব কিছু মিলিয়ে চরিত্রটি হয়ে উঠেছে বহুমাত্রিক। তারই প্রতিফলন দেখা গেছে পুরো ছবির প্রচারাভিযানে।

‘ওয়ান ব্যাটল আফটার অ্যানাদার’ শুধু একটি রাজনৈতিক থ্রিলার নয়, এটি অতীত ও বর্তমানের সংঘর্ষ, পারিবারিক দায়িত্ব ও মুক্তির লড়াইয়ের গল্প। আর এই গল্প শুধু বড় পর্দায় নয়, ছড়িয়ে পড়েছে টিকটক, গেম, সামাজিক মাধ্যম আর দর্শকের প্রতিদিনের অনলাইন জীবনে যেখানে ডিক্যাপ্রিওকে দেখে মনে হয়, তিনি যেন বলছেন, বিপ্লব এখন শুধু পর্দায় নয়, পর্দার বাইরেও ঘটে।