রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে ‘জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫’ এর সমন্বিত পূর্ণাঙ্গ খসড়া পাঠিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। গতকাল বিকেলে দলগুলোর কাছে পূর্ণাঙ্গ খসড়া পাঠানো হয়। খসড়ার পটভূমিতে পিলখানায় বিডিআর হত্যাকাণ্ড, শাপলা চত্বরের হেফাজতের হত্যাকাণ্ডসহ ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত গুম, খুন, মানবাধিকার হরণসহ আওয়ামী দুঃশাসনের কথা তুলে ধরা হয়েছে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে ২০১৮ সালে সরকারি চাকরিতে কোটা ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন থেকে শুরু করে ২০২৪ সালের জুলাই- আগস্টের এক দফা আন্দোলন তথা গণ-অভ্যুত্থান জুলাই সনদের পটভূমিকায় রয়েছে।
অন্য দিকে ‘জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫’ এর সমন্বিত পূর্ণাঙ্গ খসড়ার ভাষ্যের কোনো শব্দ, বাক্য গঠন বা এতদসংশ্লিষ্ট বিষয়ে কোনো মন্তব্য থাকলে রাজনৈতিক দলগুলোকে আগামী বুধবার (২০ আগস্ট) বিকেল ৪টার মধ্যে কমিশনের কার্যালয়ে পাঠানোর অনুরোধ করা হয়েছে। ৮ হাজার ২ ৬৪ শব্দের ‘জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫’ এর সমন্বিত পূর্ণাঙ্গ খসড়ায় ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের জন্ম,পূর্ববাংলায় পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর স্বৈরশাসন, শোষণ, বঞ্চনা ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়। স্বাধীনতার পর দীর্ঘ ৫৩ বছরেও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা গঠনের আকাক্সক্ষা অর্জন না হওয়া, শাসনব্যবস্থায় গণতান্ত্রিক পদ্ধতি ও সংস্কৃতি বিকাশের ধারা বারবার হোঁচট খাওয়ার বিষয়টি উঠে এসেছে।
সুদীর্ঘ গণতান্ত্রিক সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত ছাত্র-শ্রমিক-জনতার সফল গণ-অভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে একটি গণতান্ত্রিক ও মানবিক রাষ্ট্র পুনর্গঠনের ঐতিহাসিক সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, জোট ও শক্তিগুলো পারস্পরিক ও সম্মিলিত আলোচনার মাধ্যমে রাষ্ট্রের সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও দুর্নীতি দমন বিষয়ে সংস্কারের লক্ষ্যে ঐকমত্যের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো খসড়ায় উল্লিখিত বিষয়গুলোতে প্রতিশ্রুতিসহ স্বাক্ষর দিতে বলা হয়েছে।
যেভাবে প্রণীত হলো জুলাই সনদ : ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন-পরবর্তী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন, বিভিন্ন সংস্কার কমিশন গঠন ও তাদের সুপারিশ, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন ও কার্যক্রম তুলে ধরা হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গত ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে তার কাজ শুরু করে। ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ছয়টি কমিশনের প্রতিবেদনের ছাপানো অনুলিপি সব রাজনৈতিক দলের কাছে প্রেরণ করা হয়। এরপর ৫ মার্চ ২০২৫ তারিখে পুলিশ সংস্কার কমিশন ব্যতীত অপর পাঁচটি কমিশনের প্রতিবেদনের গুরুত্বপূর্ণ ১৬৬টি সুপারিশ স্প্রেডশিট আকারে ৩৮টি রাজনৈতিক দল ও জোটের কাছে মতামতের জন্য পাঠানো হয়। এর মধ্যে সংবিধান সংস্কারবিষয়ক ৭০টি, নির্বাচন সংস্কারবিষয়ক ২৭টি, বিচার বিভাগ সংক্রান্ত ২৩টি, জনপ্রশাসন সংক্রান্ত ২৬টি ও দুর্নীতি দমন বিষয়ক ২৭টি সুপারিশ ছিল। পুলিশ সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো সরাসরি প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে বাস্তবায়নযোগ্য হওয়ায় সেগুলো স্প্রেডশিটে রাখা হয়নি। অপর দিকে সংবিধান সংস্কার কমিশন ছাড়া অন্য পাঁচটি কমিশনের দ্রুত বাস্তবায়নযোগ্য সুপারিশগুলোর তালিকা সরকারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
মোট ৩৫টি রাজনৈতিক দল ও জোট তাদের মতামত কমিশনের কাছে প্রেরণ করে, অনেকে বিস্তারিত ব্যাখ্যা বিশ্লেষণও প্রদান করে। মতামত গ্রহণের পাশাপাশি প্রথম পর্যায়ে ২০ মার্চ থেকে ১৯ মে ২০২৫ পর্যন্ত ৩২টি দল ও জোটের সাথে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মোট ৪৭টি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা ফলপ্রসূ করার লক্ষ্যে কিছু দলের সাথে একাধিকবার বৈঠক হয়। রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে প্রথম পর্যায়ের আলোচনা শেষ করে কমিশন অগ্রাধিকার ও গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় মোট ২০টি বিষয় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে দ্বিতীয় দফা আলোচনায় মিলিত হয়। এই প্রক্রিয়ার ফলাফলস্বরূপ নিম্নলিখিত ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ সর্বসম্মতভাবে প্রণীত হয়।
দুই দফায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সংলাপে বসে। সর্বশেষ গত ৩১ জুলাই দ্বিতীয় দফার সংলাপ শেষ হয়। এসব সংলাপে রাজনৈতিক দলগুলো ৮৪টি বিষয়ে ঐকমত্যে উপনীত হয়। এর মধ্যে কিছু বিষয়ে নোট অব ডিসেন্ট আসে দলগুলোর কাছ থেকে। সেসব বিষয়ও উল্লেখ করা হয়েছে সনদের। বিএনপি ৯টি বিষয়ে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর একটিতে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে।
সংবিধান সংশোধন : সংবিধান সংশোধনের জন্য নিম্নকক্ষ ও উচ্চকক্ষের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সমর্থন প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংশোধনের ক্ষেত্রে গণভোটের প্রয়োজন হবে বলে ৩০টি দল ও জোট একমত। ক্রান্তিকালীন ও অস্থায়ী বিধানাবলি : সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৫০(২) বিলুপ্ত করা এবং এ সংশ্লিষ্ট ৫ম, ৬ষ্ঠ ও ৭ম তফসিল সংবিধানে রাখা হবে না। এক্ষেত্রে ২৩টি দল ও জোট একমত।
জরুরি অবস্থা ঘোষণা : বিদ্যমান সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৪১ক সংশোধনের সময় ‘অভ্যন্তরীণ গোলযোগের’ শব্দগুলোর পরিবর্তে ‘রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতার প্রতি হুমকি বা মহামারী বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ’ শব্দগুলো প্রতিস্থাপিত হবে। জরুরি অবস্থা ঘোষণার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতিস্বাক্ষরের পরিবর্তে মন্ত্রিসভার অনুমোদনের বিধান যুক্ত করা হবে। জরুরি অবস্থা ঘোষণা সম্পর্কিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে বিরোধীদলীয় নেতা অথবা তার অনুপস্থিতিতে বিরোধীদলীয় উপনেতার উপস্থিতি অন্তর্ভুক্ত করা হবে। ২৯টি দল ও জোট একমত।
মূলনীতিগুলো : সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি অংশে ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার, গণতন্ত্র এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সম্প্রীতি’ উল্লেখ থাকবে বলে ৩১টি দল ও জোট একমত।
সব সম্প্রদায়ের সহাবস্থান ও মর্যাদা : সংবিধানে যুক্ত করা হবে যে, ‘বাংলাদেশ একটি বহু-জাতি, বহু-ধর্মী, বহু-ভাষী ও বহু সংস্কৃতির দেশ যেখানে সব সম্প্রদায়ের সহাবস্থান ও যথাযথ মর্যাদা নিশ্চিত করা হইবে।’ ৩৩টি দল ও জোট একমত।
মৌলিক অধিকারগুলোর তালিকা সম্প্রসারণ : সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশ মোতাবেক সংবিধানের তৃতীয় ভাগে বর্ণিত মৌলিক অধিকারগুলোর তালিকা সংশোধন ও নাগরিকদের অধিকার সম্প্রসারণ করা হবে। ৩১টি দল ও জোট একমত।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনপদ্ধতি : আইনসভার উভয়কক্ষের (নিম্নকক্ষ ও উচ্চকক্ষ) সদস্যদের গোপন ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হবেন। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে বিদ্যমান সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪৮ (৪) এ বর্ণিত যোগ্যতাগুলো এবং রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হওয়ার সময় কোনো ব্যক্তি কোনো রাষ্ট্রীয়, সরকারি বা রাজনৈতিক দল বা সংগঠনের পদে থাকতে পারবেন না। ২৮টি দল ও জোট একমত। তবে এতে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।
রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও দায়িত্ব : রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় ভারসাম্য আনয়নের লক্ষ্যে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪৮(৩) সংশোধনীর প্রস্তাব করে কারো পরামর্শ বা সুপারিশ ছাড়াই নিজ এখতিয়ারবলে রাষ্ট্রপতি নিম্নলিখিত পদে নিয়োগ প্রদান করতে পারবেন : (১) জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্যগণ, (২) তথ্য কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্যগণ, (৩) বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ও সদস্যগণ, (৪) আইন কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্যগণ, (৫) বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, (৬) এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্যগণ। ৩১টি দল ও জোট একমত। তবে প্রস্তাবতি ৫ ও ৬ নং ক্রমিকের বিষয় বিএনপি, এনডিএম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, বাংলাদেশ লেবার পার্টি, ১২ দলীয় জোট, এলডিপি নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে।
রাষ্ট্রপতির অভিশংসন প্রক্রিয়া : ‘রাষ্ট্রদ্রোহ, গুরুতর অসদাচরণ বা সংবিধান লঙ্ঘনের জন্য রাষ্ট্রপতিকে অভিশংসন করা যাবে। আইনসভার নিম্নকক্ষে অভিশংসন প্রস্তাবটি দু-তৃতীয়াংশ সদস্যের ভোটে পাস করবার পর তা উচ্চকক্ষে প্রেরণ এবং উচ্চকক্ষে শুনানির মাধ্যমে দু-তৃতীয়াংশের সমর্থনে অভিশংসন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে বলে সংবিধানে যুক্ত করা হবে। ২৮টি দল ও জোট একমত।
রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শন : কোনো আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ প্রদত্ত যেকোনো দণ্ডের মার্জনা, বিলম্বনস্থা ও বিরাম মঞ্জুর করার এবং যেকোনো দণ্ড মওকুফ, স্থগিত বা হ্রাস করার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির থাকিবে এবং আইনের দ্বারা নির্ধারিত মানদণ্ড, নীতি ও পদ্ধতি অনুসরণক্রমে ওই ক্ষমতা প্রয়োগ করা হবে। সংশ্লিষ্ট আইনে এরূপ বিধান রাখা হবে যে, এরূপ কোনো আবেদন বিবেচনার পূর্বে মামলার বাদি বা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির পরিবারের সম্মতি গ্রহণ করা হবে। ২৯টি দল ও জোট একমত।
একজন ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী পদে যত মেয়াদ বা যতবারই হোক সর্বোচ্চ ১০ বছর থাকতে পারবেন, এ জন্য সংবিধানের সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদগুলোর প্রয়োজনীয় সংশোধন করা হবে। ২৫টি দল ও জোট একমত। তবে এতে বিএনপি, এনডিএম, ১২ দলীয় জোট, ও জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট নোট অব ডিসেন্ট রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন ব্যক্তি একই সাথে দলীয় প্রধানের পদে অধিষ্ঠিত থাকিবেন না, এরূপ বিধান সংবিধানে যুক্ত করা হবে। বিএনপি, এনডিএম, ১২ দলীয় জোট ও জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের নোট অব ডিসেন্ট রয়েছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা : বিদ্যমান সংবিধানের ১২৩ (৩) অনুচ্ছেদ সংশোধন করে নিম্নরূপ বিধান সংযুক্ত করা হবে : (১) মেয়াদ অবসানের কারণে অথবা মেয়াদ অবসান ব্যতীত অন্য কোনো কারণে সংসদ ভেঙে যাওয়ার পরবর্তী নব্বই (৯০) দিনের মধ্যে সংসদ সদস্যদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ২৯টি দল ও জোট একমত। মোট পাঁচ (৫) সদস্য সমন্বয়ে একটি ‘নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বাছাই কমিটি’ গঠিত হবে। কমিটির যেকোনো বৈঠক ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় সভাপতিত্ব করবেন স্পিকার।
আইনসভা গঠন : সংবিধানে যুক্ত করা হবে যে, বাংলাদেশে একটি দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা থাকিবে, যাহার নিম্নকক্ষ (জাতীয় সংসদ) এবং উচ্চকক্ষ (সিনেট) ১০০ সদস্য নিয়ে নিয়ে গঠিত হইবে। ৩২টি দল ও জোট একমত হলেও নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে সিপিবি। নিম্নকক্ষের নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষের ১০০ জন সদস্য নির্বাচিত হবেন। তবে এতে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে বিএনপি, এনডিএম। রাজনৈতিক দলগুলো নিম্নকক্ষের সাধারণ নির্বাচনের চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের সময় একই সঙ্গে উচ্চকক্ষের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করবে। তালিকায় কমপক্ষে ১০ শতাংশ নারী প্রার্থী থাকিতে হইবে। ২৭টি দল ও জোট একমত হলেও নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে বিএনপি, এনডিএম। সংবিধান সংশোধনসংক্রান্ত যেকোনো বিল উচ্চকক্ষের সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় পাস করতে হবে।
আইনসভার উভয়কক্ষে একজন করে ডেপুটি স্পিকার পদে বিরোধী দল থেকে থাকবে। ২৪টি দল ও জোট একমত। জাতীয় সংসদের পাবলিক একাউন্টস কমিটি, প্রিভিলেজ কমিটি, অনুমিত হিসাব কমিটি এবং সরকারি প্রতিষ্ঠান কমিটি এবং জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় সংক্রান্ত জাতীয় সংসদের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি পদে সংসদে আসনের সংখ্যানুপাতে বিরোধীদলের মধ্য থেকে নির্বাচন করা হবে। এতে ৩১টি দল ও জোট একমত।
সংবিধানের ৭০ নং অনুচ্ছেদের বিদ্যমান বিধান পরিবর্তন করে জাতীয় সংসদের সদস্যগণ কেবল অর্থবিল এবং আস্থা ভোট প্রদানের ক্ষেত্রে নিজ দলের প্রতি অনুগত থাকবেন। অন্য যেকোনো বিষয়ে তারা স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারবেন। ২৯টি দল ও জোট একমত।
সুপ্রীম কোর্টের বিকেন্দ্রীকরণ বিষয়ে ৩১টি দল ও জোট একমত।
বিচারকদের রাজনৈতিক আনুগত্য প্রদর্শন বা রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশকে অসদাচরণ হিসেবে বিবেচনা করে শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের বিধান করা হবে। ৩২টি দল ও জোট একমত।
নির্বাচন কমিশন নিয়োগ : প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং আইনের দ্বারা নির্ধারিত সংখ্যক নির্বাচন কমিশনারগণের সমন্বয়ে বাংলাদেশের একটি নির্বাচন কমিশন থাকবে। আইনের দ্বারা নিম্নরূপে গঠিত একটি বাছাই কমিটির মাধ্যমে উপযুক্ত প্রার্থী বাছাই করা হবে : বাছাই কমিটির প্রধান হবেন জাতীয় সংসদের স্পিকার। ডেপুটি স্পিকার (যিনি বিরোধী দলীয়), প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলের নেতা এবং প্রধান বিচারপতির প্রতিনিধি হিসাবে আপীল বিভাগের একজন বিচারপতি কমিটির সদস্য থাকবেন। এই বাছাই বা কমিটি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনারদের নিয়োগ করার উদ্দেশ্যে বিদায়ী নির্বাচন কমিশনের প্রধান ও অন্যান্য কমিশনারের মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯০ দিন পূর্বে সংসদ কর্তৃক প্রণীত আইনের দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে ‘ইচ্ছাপত্র’ ও প্রার্থীর সংশ্লিষ্ট তথ্যাদি আহ্বান করাসহ কমিটির নিজস্ব উদ্যোগে উপযুক্ত প্রার্থীর অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।
দুর্নীতি দমন কমিশনে নিয়োগ : দেশে একটি স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন থাকবে এবং এই কমিশনের নিয়োগ ও কার্যক্রম পর্যালোচনার লক্ষ্যে একটি ‘বাছাই ও পর্যালোচনা কমিটি’ গঠিত হবে।
স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন : পুলিশ বাহিনীর পেশাদারিত্ব ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিতকরণ এবং পুলিশি সেবাকে জনবান্ধব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে একটি ‘পুলিশ কমিশন’ গঠন করা হবে। এতে ২৯টি দল ও জোট একমত। এছাড়া সাংবিধানিক ও আইনগত ক্ষমতার অপব্যবহার রোধে সংবিধান সংশোধন; দুর্নীতিবিরোধী কৌশলপত্র প্রণয়ন; বৈধ উৎসবিহীন আয়কে বৈধতা দানের চর্চা বন্ধ করা; রাষ্ট্রীয় ও আইনি ক্ষমতার অপব্যবহার রোধে সুবিধাভোগী মালিকানা সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন; উচ্চ পর্যায়ের দুর্নীতি ও অর্থ পাচার রোধে আইনপ্রণয়ন; নির্বাচনি অর্থায়নে স্বচ্ছতা ও শুদ্ধাচার নিশ্চিত করা; পরিষেবা খাতের কার্যক্রম ও তথ্য অটোমেশন করা; বেসরকারি খাতের দুর্নীতিকে শাস্তির আওতায় আনা; দুদক কমিশনারের সংখ্যা বৃদ্ধি করা; দুর্নীতি দমন কমিশন আইন সংশোধন; দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনারদের মেয়াদ পাঁচ বছরের পরিবর্তে চার বছর নির্ধারণ করা; দুর্নীতি দমন কমিশন বাছাই কমিটির নাম পরিবর্তন; দুর্নীতি দমন কমিশন বাছাই ও পর্যালোচনা কমিটির গঠন; আয়কর আইন, ধারা ৩০৯ এর সংশোধন বিষয়ে প্রায় সবদল ও জোট একমত।
বাংলাদেশকে রাষ্ট্রীয়ভাবে ওপেন গর্ভনমেন্ট পার্টনারশিপের পক্ষভুক্ত হওয়ার প্রস্তাবে ২৩ টি দল ও জোট একমত হলেও নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী, জাকের পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টি (বিএসপি) ও গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য।